চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুুরে আরও একজন করে করোনা আক্রান্ত : হোমকোয়ারেন্টিনে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার নতুন ৫৮ জনের নমুনার মধ্যে দুজনের রিপোর্ট পাওয়া গেছে। দুজনের মধ্যে একজনের নেগেটিভ, একজনের পজেটিভ। যার রিপোর্ট পজেটিভ, তিনি জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন স্বাস্থ্যসহকারী। অপরদিকে মেহেরপুর গাংনীর একজনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তিনি একটি ্ওষুধ কোম্পানির যশোরের দায়িত্বপালন করতেন। কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক নোভেল করোনা ভাইরাস তথা কোভিড -১৯ এ আক্রান্ত্র হয়ে হোমকোয়ারেন্টিনে রয়েছেন।
চুয়াডাঙ্গায় এ পর্যন্ত মোট ১ হাজার ২শ ৮০ জনের নমুনা পরীক্ষার জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ১শ ৪৫ জনের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়া গেছে। বাকি রয়েছে ৫৬ জনের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট। সর্বশেষ যে ৫৮ জনের নমুনা পরীক্ষার জন্য প্রেরণ করা হয় তার মধ্যে দুজনের রিপোার্ট গতকাল চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে পৌছুয়। এতে দেখা গেছে, একজনের নেগেটিভি, একজনের পজেটিভি। প্রাপ্ত তথ্য মতে, শনিবার সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চুয়াডাঙ্গায় মোট শনাক্ত হয়েছে ১শ ১৩ জন। ৭৭ জন ইতোমধ্যেই সুস্থ হয়েছেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন একজনের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ আসায় আবারও তার নমুনা পরীক্ষার জন্য প্রেরণের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে এই প্রথম জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন স্বাস্থ্য সহকারী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। গতকাল শনিবার উপজেলার কেডিকে ইউনিয়নে কর্মরত ওই স্বাস্থ্য সহকারী নারীর করোনা ভাইরাস পজেটিভের রিপোর্ট আসে। এ নিয়ে এ উপজেলার করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো ৮ জনে। এদিকে করোনায়া আক্রান্ত ওই স্বাস্থ্য সহকারীর সংস্পৃসে আসা জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকসহ অন্যান্যদের করোনা ভাইরাস পরীক্ষার জন্য আজ রোববার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হবে বলে জানা গেছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৪ জন স্বাস্থ্য সহকারীর করোনা ভাইরাস পরীক্ষার জন্য বৃহস্পতিবার নমুনা নিয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজের ল্যাবরেটরীতে পাঠানো হয়। গতকাল তাদের রিপোর্ট হাতে পাওয়া যায়। এর মধ্যে একজন স্বাস্থ্য সহকারীর শরীরে করোনা ভাইরাস পজেটিভ রিপোর্ট এসেছে। এ নিয়ে জীবননগর উপজেলায় এখন পর্যন্ত করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো ৮ জনে। জীবননগর উপজেলা হতে এ পর্যন্ত ১০৮টি নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে পাঠানো হয়। তার মধ্যে ৯৩টি রিপোর্ট পাওয়া গেছে। এর নেগেটিভ এসেছে ৮৫ জনের।
জীবননগর হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জুলিয়েট প্রাউইন জানান, করোনা ভাইসাসে আক্রান্ত ওই স্বাস্থ্য সহকারীর শরীরে করোনা ভাইরাসের মতো উপসর্গ দেখা দেওয়াতে বৃহস্পতিবার তারসহ ৪ জনের নমুনা নিয়ে পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়। ওই স্বাস্থ্য সহকারীর বাড়ি খয়েরহুদায়। তাকে আইসেলোসনে রাখাসহ তার বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। তিনি জানান, গত বৃহস্পতিবার হাসপাতালের সভা ছিলো। ওই স্বাস্থ্য সহকারী ও সভায় উপস্থিত ছিলেন। করোনার মতো উপসর্গ দেখা দেওয়াতে সভা শেষে তার শরীর হতে নমুনা নেওয়া হয়। রিপোর্ট পজেটিভ আসার কারণে হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্টাফদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। করোনা ভাইরাস পরীক্ষার জন্য আজ হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্টাফদের নমুনা নিয়ে পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হবে বলে জানান তিনি।
গাংনীতে আরও একজন করোনাভাইরাস সংক্রমিত
গাংনী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মেহেরপুর গাংনী উপজেলায় গেল ২৪ ঘন্টায় (গতকাল শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত) আরও একজন করোনাভাইরাস আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে। ৩২ বছর বয়সী আক্রান্ত ওই ব্যক্তির বাড়ি কাজিপুর ইউনিয়নের নওদাপাড়া গ্রামে। তিনি যশোরে একটি ওষুধ কোম্পানীতে কর্মরত ছিলেন। তাকে পরিবার থেকে আলাদা করে নিজ বাড়ির একটি কক্ষে আইসোলেশন করা হয়েছে।
নমুনা পরীক্ষায় তার কোভিড-১৯ পজিটিভি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: এম রিয়াজুল আলম।
তিনি বলেন, আক্রান্ত ব্যক্তি গেল ২৪ মে যশোরের কর্মস্থল থেকে নওদাপাড়া গ্রামের বাড়িতে ফেরেন। স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে তাকে হোমকোয়ারিন্টিন করে খোঁজ রাখা হচ্ছিল। ৪ জুন তার শরীরে জ্বর দেখা দিলে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। কোভিড-১৯ পজিটিভ হলে তার বাড়িতে যায় স্বাস্থ্য বিভাগ, প্রশাসন ও পুলিশের পৃথক তিনটি দল। তাকে নিজ বাড়ির একটি কক্ষে আইসোলেশন করা হয়েছে। আইসোলেমন সময়কালীন তিনি পরিবারের সদস্যদের সাথে বিছিন্ন থাকবেন।তার শারীরিক অবস্থা ভালো উল্লেখ করে ডা: এম রিয়াজুল আলম আরো বলেন, তার সংস্পর্শে যারা যারা এসেছিলেন তাদের নমুনা সংগ্রহ করা হবে।
প্রসঙ্গত, এর আগে এই নওদাপাড়া গ্রামে নরসিংদি ফেরত এক ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েছিলেন। গতকাল দ্বিতীয় নমুনা পরীক্ষাও তিনি কোভিড-১৯ পজিটিভ। তার সংস্পর্শে তার বোন আক্রান্ত হয়েছিলেন। ভাই বোন দু’জনই আসোলেশনে রয়েছেন। নওদাপাড়া গ্রামে এ নিয়ে করোনা ভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা তিন। আর গাংনী উপজেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ১২। জেলার যার সংখ্যা ২৭। এর মধ্যে মৃত্যু দুই জনের আর সুস্থ হয়েছেন ছয় জন।
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি প্রতিনিধি জানিয়েছেন, কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. আসলাম হোসেন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। বর্তমানে তিনি হোমকোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। শনিবার (০৬ জুন) বিকেলে তার নমুনা করোনা পজেটিভ এসেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডা. এইচএম আনোয়ারুল ইসলাম। সিভিল সার্জন জানান, শুক্রবার (০৫ জুন) সন্ধ্যা থেকেই তিনি সর্দি জ্বর অনুভব করলে শনিবার (০৬ জুন) সকালে তিনি নমুনা দেন পরীক্ষার জন্য। বিকেলে ফলাফল করোনা পজেটিভ আসে।
সিভির সার্জন আরো জানান, কুষ্টিয়ায় ০৬ পর্যন্ত মোট ১১১ জন কোভিড রোগী সনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে দৌলতপুরে ২৩, ভেড়ামারায় ১৯, মিরপুরে ১২, কুষ্টিয়া সদরে ৩২, কুমারখালীতে ১৮ এবং খোকসায় ৭জন। এদের মধ্যে পুরুষ রোগী ৮৫ ও নারী ২৬ জন। সুস্থ হয়ে ছাড়া পেয়েছেন মোট ৩১ জন। কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আহমেদ সাদাত জানান, ডিসি স্যার করোনা পজিটিভ হয়েছেন। তবে তিনি সুস্থ আছেন। হোমকোয়ারেন্টিনে রয়েছেন তিনি। এজন্য জেলা প্রশাসক মো. আসলাম হোসেনের জন্য দোয়া কামনা করেন তিনি। আহমেদ সাদাত আরো জানান, করোনা সংক্রমনের পর থেকেই কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. আসলাম হোসেন স্যার করোনায় অসহায় মানুষের পাশে ছিলেন। শুক্রবার (০৬ জুন) ছুটির দিনেও তিনি অসহায় মানুষের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন। ডিসি স্যার করোনা আক্রান্ত হবার পর যারা স্যার’র সার্বক্ষণিক পাশে থেকে কাজ করেছেন তারাও করোনা পজিটিভ কীনা তা নিশ্চিত হতে রোববার (০৭ জুন) নমুনা দিবেন। তবে তার আগে জেলা প্রশাসনের সবাই হোম কোয়ারেন্টিনে থাকবেন বলেও জানান তিনি।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More