চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ওষুধ সংকট : চিকিৎসা সেবা ব্যাহত
ওষুধ পর্যাপ্ত দাবি করলেও রোগীদের প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনতে হচ্ছে বাইরে থেকে
স্টাফ রিপোর্টার: সরবরাহ না থাকায় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ওষুধ সংকট দেখা দিয়েছে। দূর-দূরান্ত থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা নামমাত্র কয়েকটি ওষুধ পেলেও প্রয়োজনীয় ওষুধ না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। অর্থ বছরের ১১তম মাস শেষের দিকে থাকলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে সকল প্রক্রিয়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ করতে না পারায় এ সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। হাসপাতালের সব জায়গায় যেন ওষুধ নেই এ কথাটিই বারবার উচ্চারিত হচ্ছে। প্রায় ৭ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষ বলছে ওষুধের কোন সংকট নেই। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দাবি টেন্ডার প্রক্রিয়া, প্রশাসনিক অনুমোদনসহ অন্যান্য কার্যক্রম বিলম্বে হওয়ায় এখনও ওষুধ সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ওষুধ সরবরাহের জন্য ২০২২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর দরপত্র আহ্বান করে। নির্ধারিত সময়ে ওষুধ সরবরাহের জন্য ১০টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্তহীনতার কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করতে পারেনি। পুনঃদরপত্র আহ্বান করে একই বছরের ২৮ নভেম্বর। এবার ৭টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করলে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে ঢাকা মিটফোর্ডের ওয়ারসী সার্জিক্যাল কাজ পায়। শর্তানুযায়ী ১৩১টি ওষুধ সরবরাহ করার কথা রয়েছে। নানা জটিলতা থাকায় ২০২২-২৩ অর্থ বছরের ১১তম মাস শেষের দিকে থাকলেও এক বক্স ওষুধ সরবরাহ সম্ভব হয়নি। কারণ ২০২৩ সালের ৩ মে ডিজি হেলথ থেকে প্রশাসনিক অনুমোদন মেলে। সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আতাউর রহমানের সাথে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক রফিকুল ইসলামের সাথে ২০২৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি চুক্তিপত্র সম্পাদন হয়।
গত অর্থ বছরের ঠিকাদারের সরবরাহকৃত কয়েক পদের ওষুধ নামমাত্র রোগীদের মাঝে দেয়া হচ্ছে। আর এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড থেকে কেনা কিছু ওষুধ রোগীদের দেয়া হচ্ছে।
সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গজ ও তুলা বাদে প্রয়োজনীয় ওষুধ রোগীদের বাইরে থেকে কিনে এনে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। জরুরি বিভাগে প্রয়োজনীয় জিনিসের সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। বহিরবিভাগে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রোগীরা চিকিৎসকের কাছে আসেন। চিকিৎসক রোগের ধরণ অনুযায়ী হাসপাতালের ওষুধ লিখলেও ক্যালসিয়াম, প্যারাসিটামল, মন্টিলুকাস্ট দেয়া হচ্ছে। আন্তবিভাগের অবস্থাও একই।
এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড থেকে কিছু ওষুধ সরবরাহ করা হয় মাঝে মাঝে। জরুরি বিভাগ, বহির বিভাগ ও আন্তঃবিভাগে ওষুধ সংকট রয়েছে। রোগীদের প্রয়োজনীয় ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। প্যারাসিটামল, মন্টিলুকাস্ট, ক্যালসিয়াম, হিস্টাসিন, ওআরএসসহ কয়েকটি পদের ওষুধ দেয়া হচ্ছে। এ অর্থ বছরে ওষুধসহ অন্য প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার জন্য সরকারিভাবে প্রায় ৭ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে সদর হাসপাতাল। বরাদ্দ পাওয়া টাকার ২৫% ওষুধ ক্রয় করতে হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। প্রায় দেড় কোটি টাকার বেশি ওষুধ কিনবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে।
রোগী ও তাদের স্বজনরা জানান, ডাক্তার দেখানোর পর নির্দিষ্ট রোগের জন্য ওষুধ লিখলেও তা দেয়া হচ্ছে না। সরকারি হাসপাতালে ওষুধ নেই এ কথা শুনতে হচ্ছে। হাসপাতাল থেকে বলা হচ্ছে ওষুধ নেই। অনেক সময় এক পাতা প্যারাসিটামল হাতে ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে। সব ওষুধ বাইরে থেকেই কিনতে হচ্ছে। ওষুধ সরবরাহ স্বাভাবিক করা হোক। মানুষের ভোগান্তি দুর করার জন্য কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিক।
ঢাকা মিটফোর্ডের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক রফিকুল ইসলাম বলেন, টেন্ডার প্রক্রিয়া ও অনুমোদন বিলম্ব হওয়ায় ওষুধ সরবরাহ দেরি হচ্ছে। কাজ যখন পেয়েছি তখন তো ওষুধ সরবরাহ করতেই হবে। সকল কর্যক্রম শেষ করতে পারলে ওষুধ সরবরাহ করা সম্ভব হবে। জুনের আগে ওষুধ দিতে পারবো।
চুয়াডাঙ্গা বিএমএ সভাপতি ডা. মার্টিন হিরোক চৌধুরী বলেন, সদর হাসপাতালে তীব্র ওষুধ সংকট রয়েছে। ওষুধ সংকট নিরসনের জন্য কর্তৃপক্ষকে দ্রুত সমাধান করতে হবে। নিয়মিত রোগীরা যেন ওষুধ পায়। সরকারের সদিচ্ছা রয়েছে। কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে রোগীরা ওষুধ পাচ্ছে না। দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে সংকট দুর করতে হবে। হাসপাতালে নানা অব্যবস্থাপনা এখন দৃশ্যমান।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. ফাতেহ্ আকরাম দোলন বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এখনও ওষুধ সরবরাহ করেনি। কিন্তু ওষুধ সরবরাহের জন্য জুন মাস পর্যন্ত সময় রয়েছে। তিনি নিজেদের পক্ষে সাফাই গেয়ে বললেন ওষুধ পর্যাপ্ত রয়েছে।