ছিনতাইকৃত ল্যাপটপ শান্তিপাড়ার মেস থেকে উদ্ধার : মোহাম্মদ আলী ও সহযোগী রতন গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার গুলশানপাড়ায় মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর বুকে পিস্তল ঠেকিয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনায় কুখ্যাত ডাকাত সর্দার মোহাম্মদ আলী ও তার সহযোগী রতন আলীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল বুধবার ভোরে শহরের গুলশানপাড়া এলাকা থেকে একটি ধারালো অস্ত্র রামদা, চাপাতি ও একটি খেলনা পিস্তলসহ তাদের গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে শান্তিপাড়া এলাকার আতিয়ার মাস্টারের মেস থেকে ছিনতাই হওয়া ল্যাপটপ উদ্ধার করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত ডাকাত সর্দার মোহাম্মদ আলী খলিফা (৩২) সদর উপজেলার নফরকান্দি গ্রামের মসলেম হাজামের ছেলে ও তার সহযোগী রতন আলী (২২) পৌর এলাকার বেলগাছি মুসলিম পাড়ার আব্দুস সাত্তারের ছেলে। এরা মুলত এক জেলায় ডাকাতি করে, অন্য জেলায় গিয়ে ঘুমায় জানিয়ে গতকাল বুধবার দুপুরে সদর থানা পুলিশের সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
পুলিশ জানায়, চুয়াডাঙ্গায় সংঘটিত প্রায় সব ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের সঙ্গে এই চক্রের হাত রয়েছে। প্রথমে খেলনা পিস্তল দিয়ে ভয় দেখিয়ে জিম্মি করে, কেউ বাধা দিলে কুপিয়ে জখম করে। সর্বশেষ গত ২২ নভেম্বর এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর কাছ থেকে অস্ত্রের মুখে ল্যাপটপ ছিনিয়ে নেয় মোহাম্মদ আলী ও তার দল। সেই ঘটনায় বুধবার ভোররাতে শহরের গুলশানপাড়া থেকে মোহাম্মদ আলী ও তার সহযোগি রতনকে রাম দা ও চাপাতিসহ আটক করা হয়। পরে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পৌর এলাকার শান্তিপাড়ায় অভিযান চালায় পুলিশ। সেখানে আতিয়ার মেসের দোতলার একটি স্টোররুম থেকে উদ্ধার করা হয় ছিনতাই হওয়া ল্যাপটপ।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন বলেন, গত ২২ নভেম্বর নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ফয়সাল আজাদ সাফি পৌর এলাকার গুলশানপাড়ায় নিজবাড়িতে ফিরছিলেন। পথিমধ্যে গুলশানপাড়ার গৃহণী স্টোরের অদূরে (আফেন্দির দোকান) পৌঁছুলে তার রিকশার গতিরোধ করে কয়েক যুবক।
তিনি বলেন, বুকে পিস্তল ঠেকিয়ে ল্যাপটপ ও টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এসময় রিকশা চালক প্রতিবাদ করলে তাকে মারধর করা হয়েছে। ওই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর কাছ থেকে অস্ত্রের মুখে ল্যাপটপ ছিনিয়ে নেয় আলী হোসেন ও তার দল। ওই ঘটনায় গতকাল ভোর ৪টার দিকে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার গুলশানপাড়া থেকে আলী হোসেন খলিফা ও তার তার সহযোগী রতন আলীকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে একটি রামদা, একটি খেলনা পিস্তল এবং ছিনতাই হওয়া একটি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়।
ওসি বলেন, মোহাম্মদ আলী নৃশংস প্রকৃতির লোক। তার কাজে কেউ বাধা দিলে তাকে কুপিয়ে আহত করে সে। তার কোপ থেকে রক্ষা পায়নি তার শাশুড়িও! পারিবারিক কলহের জেরে শাশুড়ির গলায় কোপ দেয় মোহাম্মদ আলী। মোহাম্মদ আলীর দলে ৫/৬ জন সক্রিয় সদস্য রয়েছে। গ্রেফতার ডাকাত সর্দার মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে ১২টি এবং তার দলের বিরুদ্ধে ২০ এর অধিক মামলা রয়েছে। তারা পিস্তল দিয়ে ভয় দেখায়, আর কেউ বাধা দিলে কুপিয়ে আহত করে। আলী ও তার দলের হামলায় আহত হয়েছে ১০ এর অধিক মানুষ। চুয়াডাঙ্গায় সংঘটিত প্রায় সব ডাকাতিতেই এই ডাকাত দলের হাত রয়েছে। তারা খেলনার পিস্তল দিয়ে ভয় দেখিয়ে জিম্মি করে, কেউ বাধা দিলে কুপিয়ে আহত করে।
ওসি আরও জানান, মোহাম্মদ আলীর দলের সদস্যরা ছিনতাই ও ডাকাতি করে ঝিনাইদহ ও চুয়াডাঙ্গা জেলায়। এই দলে ৬/৭ জন সক্রিয় সদস্য রয়েছে। গ্রেফতার এড়াতে তারা রাতে এক জেলায় ডাকাতি করে অন্য জেলায় গিয়ে ঘুমায়! সর্বশেষ চুয়াডাঙ্গায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর ল্যাপটপ ছিনতাই করেও ঝিনাইদহ পালিয়ে যায়। এর আগে ঝিনাইদহে ডাকাতি করে এসে চুয়াডাঙ্গায় আশ্রয় নেয়। আটককৃত দুজনকে গতকাল বিকেলে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ছিনতাইয়ের ঘটনার ওইদিন সকালে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ফয়সাল আজাদ সাফি বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। গতকাল বাদী হয়ে অস্ত্র আইনে একটি পৃথক মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। দুপুরেই গ্রেফতারকৃতদের আদালতে সোপর্দ করা হয়। তোলা হয় চুয়াডাঙ্গা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদালতে। পরে তাদের জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিজ্ঞ আদালতের বিচারক মানিক দাস।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More