জীবননগরের সীমান্ত ইউপির সাজাপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ময়েন বরখাস্ত
বিদেশে লোক পাঠানোর নামে টাকা আত্মসাত মামলায় জেল জরিমানা :
জীবননগর ব্যুরো: চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার সীমান্ত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মঈন উদ্দিন ময়েনকে বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। বিদেশে লোক পাঠানোর নামে টাকা আত্মসাত মামলায় দুই বছরের সশ্রম কারাদ- ও ১০ লাখ টাকা অর্থদ-ে দ-িত হওয়ায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মো. আবু জাফর রিপন স্বাক্ষরিত একটি প্রজ্ঞাপন হাতে পান সীমান্ত ইউনিয়ন পরিষদের সচিব শামীম সরোয়ার।
এতে বলা হয়, দামুড়হুদা থানায় দায়েরকৃত একটি মামলায় চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়ে ২ বছরের সশ্রম কারাদ- ও ১০ লাখ টাকা অর্থদ-ে দ-িত হয়েছেন সীমান্ত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মঈন উদ্দিন। তার বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন ২০০৯ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে সুপারিশও করেছেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক। তাই তার দ্বারা ইউনিয়ন পরিষদে ক্ষমতা প্রয়োগ প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণে সমীচীন নয় বলে মনে করে সরকার। এছাড়া সীমান্ত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মঈন উদ্দিনের দ্বারা সংঘটিত অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিষদসহ জনস্বার্থের পরিপন্থী বিবেচনায় স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন ২০০৯ এর ধারা ৩৪(১) অনুযায়ী তাকে তার স্বীয় পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। এ আদেশ যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে জনস্বার্থে জারি করা হলো এবং তা অবিলম্বে কার্যকর করা হবে।
জীবননগর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম মুনিম লিংকন জানান, বৈদেশিক ও কর্মস্থান আইনে সাজাপ্রাপ্ত জীবননগর উপজেলার সীমান্ত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মঈন উদ্দিনকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ৩০ মে প্রজ্ঞাপনটি আমি পেয়েছি। সোমবার ওই প্রজ্ঞাপনটি সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের সচিবের কাছে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে গত ১৭ মে সীমান্ত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মঈন উদ্দিনের সাময়িক বরখাস্ত সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়।
উল্লেখ্য, গত ২৪ জানুয়ারি বিদেশে লোক পাঠানোর নামে টাকা আত্মসাৎ মামলায় আদালত মঈন উদ্দিনের অনুপস্থিতিতে তাকে দুই বছরের সশ্রম কারাদ-সহ ১০ লাখ টাকা অর্থদ-ের রায় দেন আদালত। ২৬ জানুয়ারি সাজাপ্রাপ্ত মঈন উদ্দিন ময়েন চুয়াডাঙ্গা চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাকে কারাগারে পাঠনোর নির্দেশ দেন আদালতের বিচারিক হাকিম মিজানুর রহমান। মঈন উদ্দিন ময়েন জীবননগর উপজেলার গয়েশপুর গ্রামের ইন্তাজ আলীর ছেলে এবং জীবননগর উপজেলা যুবদলের সভাপতি।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামের সালাউদ্দীনের ছেলে আলমগীর হোসেনকে ভালো বেতনের লোভ দেখিয়ে বিদেশে পাঠানোর প্রস্তাব দেন ময়েন। বিদেশে পাঠানোর নাম করে দু দফায় তার কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন ওই চেয়ারম্যান। কিন্তু আলমগীরকে বিদেশে না পাঠিয়ে বিভিন্নভাবে টালবাহানা শুরু করেন ময়েন। এক পর্যায়ে আলমগীরের ভাই মিজানুর রহমান ইউপি চেয়ারম্যান ময়েনের বিরুদ্ধে দামুড়হুদা মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ২০১৯ সালের ৩০ মে দাখিলকৃত ওই মামলায় ময়েনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করে দামুড়হুদা থানা পুলিশ। এরপর আদালত ৩ জন স্বাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে গত ২৪ জানুয়ারি মঈন উদ্দিনের অনুপস্থিতিতে দুই বছরের সশ্রম কারাদ-সহ ১০ লাখ টাকা অর্থদ- দেন। এর দুদিন পর আত্মসমর্পণ করলে তাকে কারাগারে পাঠনোর নির্দেশ দেন আদালত।