দেশে আলোচনায় নির্বাচন : কার প্রস্তুতি কীভাবে

স্টাফ রিপোর্টার: নির্বাচন হতে পারে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে। তবে আওয়ামী লীগ তার ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে নির্বাচনের জন্য তৃণমূলকে চাঙ্গা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিএনপিও জরুরি বৈঠকে আন্দোলন এবং নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় আগামী জাতীয় নির্বাচনই প্রাধান্য পেয়েছে। আর সেই নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূলকে চাঙা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতারা এটা করতে জেলায় জেলায় সফর করবেন। বৈঠকে নির্বাচনকে সামনে রেখে ‘গুজব ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে’ সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয়। দলীয় কোন্দল, এমপিদের নেতা-কর্মীদের প্রতি অবহেলাসহ আরো অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় ওই বৈঠকে। তবে সব আলোচনা কেন্দ্রে ছিলো নির্বাচন৷এই বৈঠকের পরই আওয়ামী লীগের নেতারা তৃণমূলে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি গঠন, কোন্দল নিরসন ও দলের স্থানীয় পর্যায়ে গ্রুপিং নিরসনে তারা কাজ শুরু করেছেন। আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন, গত দেড় বছর করোনার কারণে সংগঠন ঝিমিয়ে পড়েছে। সামনে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূলে দলকে চাঙা করার এখনই সময়। তাদের কথা, নির্বাচনের আগের বছর দল গোছানো যায় না। তাই দল গোছানোর জন্য হাতে আছে এক বছরের কিছু বেশি সময়। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শফিক জানান, ‘আমরা করোনার সময় কোনো রাজনীতি করিনি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে করোনায় মানবিক কাজেই ব্যস্ত ছিলাম। এখন দল গোছানোর কাজে নেমেছি। সামনের ইউপি নির্বাচনের আগেই দলে স্থানীয় পর্যায়ের সঙ্কট মিটিয়ে ফেলব। এর মাধ্যমেই আমরা জাতীয় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হব।’ তিনি আরো জানান, ‘করোনার কারণে দীর্ঘদিন দলীয় কাজ স্থবির হয়ে পড়েছিলো। ফলে নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। কিছু কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তৃণমূলে নেতা-কর্মীরা কিছুটা বিভক্তও হয়ে পড়েছেন। এই সবকিছুই ঠিক করার জন্য বিভিন্ন জায়গায় সম্মেলনের তারিখ দিচ্ছি৷ বর্ধিত সভাও হচ্ছে।”
বিএনপির শীর্ষ নেতারা মঙ্গলবার রাতে চার ঘন্টা বৈঠক করেছেন৷ বৈঠকে লন্ডন থেকে অনলাইনে অংশ নেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান ও চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মিলে প্রায় ৪০ জন নেতা অংশ নেন৷ এই বৈঠককে বিএনপি বলছে রুদ্ধদ্বার সাংগঠনিক বৈঠক। তাই বৈঠকের বিস্তারিত এখনো প্রকাশ করেনি। তবে বৈঠকে উপস্থিত কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানাগেছে বিএনপি নির্বাচন ও আন্দোলন দুইটিকেই সমান গুরুত্ব দিচ্ছে। আর যেকোনো সিদ্ধান্ত এককভাবে না নিয়ে সবার মতকে গুরুত্ব দিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা বলা হয়েছে। আন্দোলনের ব্যাপারে তারা সরকারের পদক্ষেপের ওপর নির্ভর করবে। বিএনপি এখনো নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবীতে অনঢ়। আর সামনে নির্বাচন কমিশন নিয়ে তারা একটি অবস্থানে যাবে বলে জানা গেছে। তার চায় গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচন কমিশন আইন। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবীটিও তার সামনেই রাখছে। তারা ৬৪ জেলায় এজন্য দলীয় সফরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে তারা দলকে সুসংহত করতে চায়। আর ঢাকায় আন্দোলনের সময় মাঠে থাকার জন্য নেতা-কর্মীদের শপথ গ্রহণের কাজ চলছে। জানা গেছে ৬৪ জেলা সফরের সময়ও এই একই শপথ করানো হবে দলীয় নেতা-কর্মীদের। বিএনপির এই সভা তিন দিনের। প্রথম দিনে উপদেষ্টা এবং ভাইস চেয়ারম্যানরা ছিলেন। বুধবার সাংগঠনিক ও সহ সাংগঠনিক সম্পাদক এবং বৃহস্পতিবার সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাদের বৈঠক। প্রত্যেকটি বৈঠকেই স্থায়ী কমিটির নেতারা থাকছেন৷ অনলাইনে যুক্ত থাকছেন তারেক রহমান।
বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বৈঠক করেছে সে কারণে আমরা বৈঠক করছি তা নয়। খালেদা জিয়া গ্রেফতার হওয়ার পর আমরা দলীয় সব পর্যায়ের নেতাদের নিয়ে কোনো বৈঠক করতে পারিনি। এরপর করোনার কারণেও করা যায়নি। সরকারও আমাদের বাইরে সমবেত হতে দেয় না। তাই করোনা কমে আসায় এখন আমরা দলকে চাঙা করার পরিকল্পনার জন্যই এই বৈঠক করছি। স্বাভাবিক কারণেই নির্বাচন, আন্দোলন ও খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি আলোচনায় প্রাধান্য পাচ্ছে।’ প্রায় সব নেতাই দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার বিরোধিতা করছেন বলে জানান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘এবার সবার মতামত নিয়ে কর্মপরিকল্পনা ঠিক করা হচ্ছে। আর তারেক রহমান সাহেব কম বলছেন, শুনছেন বেশি।’

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More