দেশে ঢুকছে মানুষ, ঝুঁকিতে চুয়াডাঙ্গা

দর্শনা দিয়ে দেশে ফিরলেন আরও  ৩৬  জন, করোনায় আক্রান্ত ১

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার দর্শনা চেকপোস্ট দিয়ে দেশে ফিরেছেন ভারতে আটকে পড়া আরও  ৩৬ জন বাংলাদেশী নারী-পুরুষ। এ নিয়ে গত ৯ দিনে দর্শনা চেকপোস্ট দিয়ে মোট ৬৪৮ জন বাংলাদেশী দেশে ফিরলেন।  এদের মধ্যে মোট ১১ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব মিলেছে।  এদিকে, ঝিনাইদহের মহেশপুর ও জীবননগর উপজেলার কয়েকটি অরক্ষিত সীমান্ত দিয়ে ভিসা-পাসপোর্ট ছাড়াই অবৈধ পথে দালালদের মাধ্যমে অবাধে দেশে ঢুকছে মানুষ।  এতে করোনার ভারতীয় ভেরিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বাড়ছে।  সীমান্তবর্তী চুয়াডাঙ্গার অবস্থা এখন খানিকটা স্থিতিশীল দেখা গেলেও গত এক সপ্তাহ ধরে দর্শনা সীমান্ত দিয়ে ভারতে আটকেপড়া বাংলাদেশীদের ফেরা নিয়ে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে সাধারণ মানুষের কপালে।

স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ  বলছে, সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে পারে, তা বুঝতে হলে আরও সপ্তাহখানেক অপেক্ষা করতে হবে।  এ জেলায় প্রথম থেকেই ছিল করোভাইরাসের ভারতীয় ধরণ ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা। ভারত ফেরতদের শহরের বিভিন্ন আবাসিক হোটেল ও সরকারি ভবন কোয়ারেন্টিন সেন্টার হিসেবে ব্যবহার করায় এ ঝুঁকি বেড়েছে কয়েকগুণ। পরিস্থিতি মোকাবিলায় চলমান কাজগুলো জোরদার করার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ। ঈদের ছুটি শেষ হয়েছে গত সপ্তাহে। ঈদের ছুটিতে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করে এ এলাকার কয়েক হাজার মানুষ যানবাহন ব্যবহার করেছে। মাস্ক ছাড়াই বাজারঘাটে যে যার ইচ্ছেমত ঘুরছে। স্থলবন্দর দিয়ে যাঁরা আসছেন, তাঁদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হচ্ছে।  চুয়াডাঙ্গার সবগুলো কোয়ারেন্টিন সেন্টার পরিপূর্ণ হয়ে যাওয়ায় ভারত প্রত্যাগতদের পার্শ্ববর্তী কুষ্টিয়া, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহ জেলার কোয়ারেন্টিন সেন্টারগুলোতে নেয়া হচ্ছে।  সীমান্তে বিজিবি নজরদারি থাকলেও অবৈধপথে প্রতিদিন দেশে ফিরছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ।  ঝিনাইদহের মহেশপুর ও জীবননগর উপজেলার কয়েকটি অরক্ষিত সীমান্ত দিয়ে ভিসা-পাসপোর্ট ছাড়াই অবৈধ পথে দালালদের মাধ্যমে ভারত থেকে দেদারছে দেশে আসছে মানুষ।  ভারতে আটকে পড়া বাংলাদেশী নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে এনে কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা হলেও অবৈধ পথে দেশে ঢুকে পড়া নাগরিকদের কোয়ারেন্টিন কোনোভাবেই নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।  বিজিবির হাতে ধরা পড়ার পর তাদের ঠাঁই হচ্ছে জেলখানায়।  যারা বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে দেশে আসছে তারা চলে যাচ্ছে নিজ এলাকায়।  ন্যূনতম স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়াই দেশে প্রবেশের পর বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাচ্ছে তারা।  এ থেকে ভারতীয় ভেরিয়েন্টও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।  ঝিনাইদহের মহেশপুর ৫৮-বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, গত তিন মাসে প্রায় ৯’শ অনুপ্রবেশকারী নারী-পুরুষকে আটক করা হয়েছে। পরে তাদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।  পুলিশ আদালতের মাধ্যমে তাদের পাঠাচ্ছে কারাগারে। মহেশপুর-৫৮ ব্যাটালিয়ন বিজিবির পরিচালক কামরুল হাসান জানান, অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবির নিয়মিত টহল অব্যাহত রয়েছে।  তবে এ অঞ্চলে সীমান্ত কিছুটা অরক্ষিত থাকায় সুযোগ পাচ্ছে অনুপ্রবেশকারীরা।  বিজিবি তাদের আটক করে পুলিশে সোপর্দ করছে। দর্শনা ইমিগ্রেশন সূত্র জানিয়েছে, ভারতের কোলকাতাস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে অনাপত্তি পত্র (এনওসি) নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ৩৬ জন বাংলাদেশী দর্শনা চেকপোস্টে প্রবেশের পর স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে প্রত্যেকের অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা হয়।  এদের মধ্যে এক নারী করোনা শনাক্ত হয়েছেন।  তার বাড়ি টাঙ্গাইলে।  বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), পুলিশের অভিবাসন শাখা (ইমিগ্রেশন) ও শুল্ক বিভাগের (কাস্টমস) আনুষ্ঠানিকতা শেষে সেখান থেকে তাদের নির্ধারিত পরিবহনযোগে (মাইক্রোবাস) কুষ্টিয়া, মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল নেয়া হয়েছে।  সেখানে তারা ১৪ দিনের বাধ্যতামূলত প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন। দর্শনা জয়নগর চেকপোস্টের ইমিগ্রেশন ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এস আই) আব্দুল আলিম জানান, গতকাল ৩৬  জন বাংলাদেশী দেশে ফিরেছেন।  এদের মধ্যে এক ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব মিলেছে।  তাকে এ্যাম্বুলেন্সযোগে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। করোনা নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংক্রান্ত উপকমিটির আহ্বায়ক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মনিরা পারভীন জানান, ভারত ফেরত ৩৬ জনের মধ্যে ২ জনকে কুষ্টিয়া, ৩১ জনকে মেহেরপুর ও ৩ জনকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল নেয়া হয়েছে।  সেখানে তারা ১৪ দিনের বাধ্যতামূলত প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন। তিনি আরও জানান, করোনায় আক্রান্ত এক নারীকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে।  এ নিয়ে মোট ১১ জন ভারত ফেরত ব্যক্তির শরীরে করোনা শনাক্ত হলো।  তাদের শরীরে করোনার ভারতীয় ভেরিয়েন্ট আছে কি না তা পরীক্ষার জন্য স্বাস্থ্য বিভাগকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. এএসএম মারুফ হাসান জানান, চুয়াডাঙ্গা জেলায় গত তিন মাসে করোনার সংক্রমনের হার একই আছে।  আসলে করোনার সংক্রমনরোধে প্রথমে নিজেদের সচেতন হতে হবে।  স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।  ব্যবহার করতে হবে মাস্ক। তিনি আরও জানান, ভারত ফেরত করোনায় আক্রান্তদের নিয়মিত নিবীড় পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।  তাদের শরীরে করোনার ভারতীয় ভেরিয়েন্ট আছে কিনা তা পরীক্ষার জন্য নমুনা নিয়ে আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে।  নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন এখনও এসে পৌঁছায়নি।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More