বসন্ত বরণ আর ভ্যালেন্টাইন এনেছে তারুণ্যের উচ্ছ্বাস

চুয়াডাঙ্গায় ফুল ফুচকার দোকানে ভিড় : বিক্রেতাদের মধ্যে প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ার দুঃখ
স্টাফ রিপোর্টার: একদিকে বিশ^ ভালোবাসা দিবস, অন্যদিকে বসন্ত বরণ। দুটি উৎসব তরুণ প্রজন্মকে গতকাল রোববার আবেগী করে তোলে। ফুল ফুচকা আর চটপটির দোকনে বাড়ে ভিড়। সকাল দুপুরে রোদের তীব্রতা রাস্তায় তেমন উৎসবের আমেজ ফুটে না উঠলেও বিকেল থেকে রাস্তায় নামেন তরুণ তরুনীরা। মধ্যবসয়ী জুটি দম্পতিরও দেখা মেলে রাস্তায়। চুয়াডাঙ্গায় তেমন চিত্ত বিনোদনের স্থান না থাকায় ভালোবাসার দিনে বুক ভরে নিঃশ^াস নেয়ার আশায় অধিকাংশকেই ঘুরতে হয়েছে বিক্ষিপ্তভাবে। কোন কোন জুটির নিরাপদ গল্পের স্থান হয় অটো। ফুরফুরে বাতাসে ঘুরে শেষ পর্যন্ত কবরি রোডের ফুচকার দোকান হয় তাদের বিদায় বেলার ঠিকানা।
চুয়াডাঙ্গা পোস্ট অফিস তথা প্রধান ডাকঘরের সামনে সড়কের পাশজুড়ে বাহারি রঙের ফুল সাজিয়ে বসেছিলো বিক্রেতারা। তাদের সংগ্রহে রয়েছে গোলাপ, রজনীগন্ধা, গ্লাডিওলাস, জারবারা ফুলসহ নানা ধরনের ফুল। সন্ধ্যার পর ফুলের দোকানে দেখা হয় রাসেল-সনি দম্পতির। ছেলে ও মেয়েকে সাথে নিয়ে ফুল কিনছেন এই দম্পতি। দিবসটি নিয়ে তাদের আগ্রহের বিষয়ে জানতে চাইলে রাসেল-সনি দম্পতি অভিন্ন সুরে বলেন, ভালোবেসে বিয়ে করেছি। প্রতিদিনই আমাদের ভালোবাসা দিবস। দিবসটিতে ফুল বিনিময় এখন সংস্কৃতিতে পরিণত হওয়ায় আমাদের এখানে আসা।
ফুল কিনতে অপর এক যুবক বলেন, ফুলের দাম তুলনামূলক একটু বেশি। তবুও বছরের একটা দিন প্রিয়জনকে ভালোবাসা জানাতে ফুলের দাম নিয়ে মাথাব্যথা নেই।
চুয়াডাঙ্গায় এবার বিশ^ ভালোবাসা দিবস বা ভ্যালেন্টাইন ডে ফুলের দোকানিদের খুব একটা খুশি করতে পারেনি। দোকানি জাহিদ হোসেন দীর্ঘশ^াস ছেড়ে বললেন, একটা বছর করোনা ভাইরাসে হতাশ করলো। ভাইরাস হটিয়ে এবারের ভ্যালেন্টটাইন উৎসবমুখর হবে বলেই ভেবেছিলাম। ভাবনা মতো দোকানে ফুলও তুলেছিলাম বেশি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রত্যাশা অনুযায়ী ফুল বিক্রি হয়নি। গতবারের তুলানায় এবার চুয়াডাঙ্গায় ফুল বিক্রি হয়েছে অর্ধেকের একটু বেশি। একটি গোলাপ ২০ টাকা থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে ঠিকই, তবে তা পরিমাণে হতাশাজনক। রজনীগন্ধা স্টিক ১০ থেকে ১৫ টাকা, ফুলের তোড়া ১শ থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যে ছিলো। বেশি দামের তোড়া এবার বিক্রি হয়নি বললেই চলে।
পহেলা ফাল্গুন আর ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টটাইন ডে উদযাপনে অনেক সন্তান যেমন তার মাতাপিতাকে ভালোবাসার কথা বলে দুদ- পাশে বসেছেন, তেমনই অনেক তরুণ ভালোবাসার তরুণীকে পাশে ডেকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি নিজেদের মধ্যে কিছুটা হলেও বোঝাপড়ার কাজটা সেরেছেন। অবশ্য এই সুযোগে কেউ কেউ যে উশৃঙ্খলতাও মেলে ধরেনি তাও নয়। কিছু দৃশ্য প্রবীণদের চোখ ঘোরাতেই শুধু বাধ্য করেনি, সমাজটা যে কোথায় গেলো তা বলেও দীর্ঘশ^াস ছেড়েছেন। সেদিকে তরুণদের খুব একটা নজর না পড়লেও ইন্টারনেটের বদৌলতে বদলে যাওয়া সংস্কৃতিতে গাঁ ভাসিয়ে তাদের প্রায় সকলে।
চুয়াডাঙ্গা শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে গতরাতেও সঙ্গীতের আসর বসানো হয়েছে। সাহিদ প্যালেসে একটি প্রতিষ্ঠানের তরফে প্রায় সারাদিনই নানা কর্মসূচি পালন করেছে। ভালোবাসা দিবসে আয়োজন ছিলো বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী চুয়াডাঙ্গা সংসদের। সন্ধ্যার পর জেলা শিল্পকলা একাডেমি চত্বরে ফাগুন আড্ডা আয়োজনে ছিলো গান, আবৃত্তি, নৃত্য পরিবেশন করেন উদীচীর শিল্পীবৃন্দ।
জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, বিশ^ ভালোবাসা ও বসন্তবরণের দিনে জীবননগর পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়াতে এবার এ উপজেলার ফুল ব্যবসায়ীদের ফুল তেমন একটা বিক্রি হয়নি। ক্রেতার খরা বয়েছে ফুলের বাজারে। ফুল বিক্রি না হওয়াতে এবার মোটা অংকের টাকা লোকসান গুনতে হলো ফুল ব্যবসায়ীদের।
জানা যায়, বিশ^ ভালবাসা ও বসন্তবরণের দিনে বিক্রির জন্য ফুলের পসরা নিয়ে বসেন ব্যবসায়ীরা। এবারও জীবননগর বাসস্ট্যান্ডের কালীগঞ্জ সড়কে বেশ কয়েকটি দোকানী দোকানে ফুলের পসরা সাজিয়ে বসেন।
নাজমুল নার্সারির স্বত্ত্বাধীকারী নাজমুল ইসলাম জানান, তিনি ২৩ হাজার টাকার ফুল কিনে আনেন বিক্রির জন্য। কিন্তু পৌরসভার ভোটের দিন হওয়াতে ফুল বিক্রির ওপর প্রভাব পড়ে। তেমন ক্রেতা ছিলো না। ২ দিনে ৮ হাজার টাকার ফুল বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল সন্ধ্যায় পৌরসভার ভোটের ফলাফল প্রকাশ হওয়ার পর বিজয়ী প্রার্থীদের ফুলের মালা দেয়া হয়। এ জন্য মালা বিক্রি হয়েছে ৬ হাজার টাকার মতো। সব মিলিয়ে ফুল বিক্রি হয়েছে ১৪ হাজার টাকার। ফলে এখনো ৯ হাজার টাকার ফুল অবিক্রিত থেকে গেছে। একই অবস্থা জানালেন অন্যান্য ফুল ব্যবসায়ীরাও। ফলে এবারের বসন্তবরণে লোকসান গুনতে হলো ফুল ব্যবসায়ীদের।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More