বিশ্বে একদিনে দেড় লাখ রোগী শনাক্ত : দেশের চিত্রও ভয়াবহ

২৪ ঘণ্টায় চুয়াডাঙ্গার নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসেনি : মেহেরপুর ও ঝিনাইদহে উপসর্গ নিয়ে দুজনের মৃত্যু

মাথাভাঙ্গা ডেস্ক: বিশ্বের বিভিন্ন দেশে লকডাউন শিথিলের পর আশঙ্কানকহারে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। গত ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় দেড় লাখ মানুষ,যা একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড। এদিকে দেশের চিত্রও ভায়াবহ। একই সময়ে দেশে মারা গেছেন ৪৪ জন। আক্রান্ত শনাক্ত করা হয়েছে ২ হাজার ৮৫৬ জন। মোট আক্রান্তের সংখ্যা চিনকেও টপকাতে বসেছে। পরীক্ষা যতো বেশি করা হচ্ছে শনাক্তও ততো বাড়ছে। গতকাল চুয়াডাঙ্গায় নমুনা পরীক্ষার কোন রিপোর্টই সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে আসেনি। করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃতের সংখ্যায় পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। শনিবার মেহেরপুরের গাংনী ও ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে একজন করে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকসহ আক্রান্তের সংখ্যা ২শ ছাড়িয়েছে।

বিশ্বে রোগী শনাক্ত ও প্রাণহানির হিসাবে প্রতিদিনই নতুন নতুন রেকর্ড তৈরি হচ্ছে। এতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনেক আগে থেকেই বলে আসছিল লকডাউনের বিধিনিষেধ শিথিলের ফল ভালো হবে না। ইতিমধ্যে চীনে নতুন করে সংক্রমণ শুরু হয়েছে। এতে আংশিক লকডাউনে গেছে বেইজিং। বাংলাদেশ সময় শনিবার (১৩ জুন) রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ওয়ার্ল্ডওমিটারসের তথ্য অনুযায়ী,বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৭৮ লাখ ১ হাজার ৪৫৪ জন। মারা গেছেন ৪ লাখ ২৯ হাজার ৯৬৪ জন। অবস্থা আশঙ্কাজনক ৫৩ হাজার ৯৬৪ জনের। সুস্থ হয়েছেন ৪ লাখ ২ হাজার ৯৪৬ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৪২ হাজার ৯৭৩ জন। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছেন ২৭ হাজারের বেশি। এরপর ব্রাজিলে ২৪ হাজার, ভারতে ১১ হাজার,রাশিয়ায় ৮ হাজার এবং চিলি ও পাকিস্তানে ৬ হাজার করে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। বিশ্বে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৪ হাজার ৬০৩ জন। আক্রান্তের তালিকায় শীর্ষে থাকা যুক্তরাষ্ট্রে গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৭৯১ জনের। দেশটিতে মোট রোগীর সংখ্যা ২১ লাখ ২১ হাজার ৯২২ জন, মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ৯২৫ জনের। ব্রাজিলে গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৮৪৩ জনের। দেশটিতে মোট আক্রান্ত ৮ লাখ ৩১ হাজার ৯০২ জন,মারা গেছেন ৪১ হাজার ৯৫২ জন। করোনায় মৃত্যুর হিসাবেও বর্তমানে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে ব্রাজিল। একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রেই দেশটির চেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে। গত সপ্তাহেই ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের গবেষকরা সতর্ক করেছেন,আগামী আগস্ট মাসের আগেই ব্রাজিলে আরও এক লাখ মানুষ মারা যেতে পারেন। অর্থাৎ মৃত্যুতে ব্রাজিলের যুক্তরাষ্ট্রকেও ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিশ্ব তালিকায় তৃতীয় স্থানে থাকা রাশিয়ায় মোট রোগীর সংখ্যা ৫ লাখ ২০ হাজার ৪২৩ জন, মৃত্যু হয়েছে ৬ হাজার ৮২৯ জনের।যুক্তরাজ্যে মোট আক্রান্ত ২ লাখ ৯২ হাজার ৯৫০ জন, মারা গেছেন ৪১ হাজার ৪৮১ জন। স্পেনে মোট আক্রান্ত ২ লাখ ৯০ হাজার ২৮৯ জন,মারা গেছেন ২৭ হাজার ১৩৬ জন। এরপর ইতালিতে আক্রান্ত ২ লাখ ৩৬ হাজার ৩০৫ জন, মারা গেছেন ৩৪ হাজার ২২৩ জন। এদিকে দেশে ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৫৭৮ জন।এ নিয়ে সর্বমোট ১৭ হাজার ৮২৭ জন সুস্থ হয়েছেন। এর আগে শুক্রবার(১২ জুন) দেশে করোনায় সংক্রমিত ৩ হাজার ৪৭১ জন শনাক্ত হওয়ার কথা জানানো হয়েছিল। মারা গিয়েছিলেন ৪৬ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়,গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩ হাজার ৬৩৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর আগের দিন ১৫ হাজার ৯৯০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল। দেশে ৫৯টি ল্যাবে (পরীক্ষাগার) করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনায় সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্তের ঘোষণা আসে। আর ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। লকডাউন তুলে নেয়ার পার যেসব এলাকায় ভয়াবহ আকারে করোনা ছড়িয়েছে সেব এলাকাকে রেডজোন হিসেবে   চিহ্নিত করে লকডাউন করা হয়েছে। ঢাকার কয়েকটি এলাকায় করোনার ঝুঁকি এড়াতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও স্বাস্থ্যবিধি মানতে সবাইকে অনুরোধ করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা। অনলাইন ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন,শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা তুলে ধরা সুখকর নয়। প্রতিদিনই আমার ও আপনার আত্মীয় এই সংখ্যায় যুক্ত হচ্ছে। চিকিৎসক,মন্ত্রী,জনপ্রতিনিধি সবাই এই পরিসংখ্যানে যুক্ত হচ্ছেন। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে এটি কমবে না। সর্বশেষ গতকাল করোনা সংক্রমিত ‘রেড জোনের’ বাসিন্দাদের বাসায়া নামাজ আদায়ের নির্দেশ দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। শনিবার জারি করা নির্দেশনায় বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে ‘রেড জোন’ ঘোষিত এলাকার বাসিন্দাদের নিজ নিজ ঘরে ইবাদত,উপাসনা করতে হবে।

এরআগে গত ৬ এপ্রিল বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সারাদেশে এ নিয়ম চালু করা হয়েছিল। ওয়াক্তের নামাজে মসজিদ সম্পৃক্ত অনধিক পাঁচজন এবং জুমায় ১০ জনের জামাতের অনুমতি দেয়া হয়। এক মাস পর ৬ মে থেকে মসজিদে বহিরাগত মুসল্লি প্রবেশে বাধা তুলে নেওয়া হয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে মসিজদে জামাতের অনুমতি দেওয়া হয়। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, লাল জোন হিসেবে চিহ্নিত এলাকায় মসজিদের খতিব, ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমগণ ব্যতীত বাকিরা বাসায় নামাজ আদায় করবেন। মসজিদে নামাজ চালু রাখতে প্রয়োজনে খতিব, ইমাম, মুয়াজ্জিন, খাদেমসহ অনধিক ৫ জন জামাত করবেন। জুমার জামাতে অনধিক ১০ জন অংশ নেবেন। রেড জোনে মন্দির, গির্জাসহ কোনো উপসনালয়ে সমাবেত হওয়া যাবে না। শুধু রেড জোন নয় দেশের কোথাও ওয়াজ মাহফিল,তাফসির মাহফিল,তাবলিগের তালিম বা মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা যাবে না। অন্যান্য ধর্মীয় ও সামাজিক আচার অনুষ্ঠানের জন্য সমবেত হওয়া যাবে না। কেউ নির্দেশ অমান্য করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে। তবে বেশ ক’দিন পর গতকাল চুয়াডাঙ্গায় নতুন করোনা রোগী শনাক্ত হয়নি। নতুন কোন রিপোর্ট আসেনি। শনিবার চুয়াডাঙ্গা থেকে নতুন নমুনা পরীক্ষার জন্য কুষ্টিয়া কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাবে প্রেরণ করা হয়েছে। জেলায় আক্রান্ত রোগির সংখ্যা ১৪০ জন। চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন কার্য্যলয় সূত্রে জানা যায়,শনিবার কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাব থেকে করোনা পরীক্ষার কোন রিপোর্ট আসেনি। নতুন ৫৪টি নমুনা পরীক্ষার জন্য পিসিআর ল্যাবে প্রেরণ করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গার চারটি উপজেলায় এ পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ১৪০ জন। সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৮৬ জন। ৫৪ জন বর্তমানে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় করোনার নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসার আগেই ফয়েজ উদ্দিন (৫০) নামে এক ব্যাংক কর্মকর্তার মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার রাত ১২টার দিকে সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে তার মৃত্যু হয়। ফয়েজ উদ্দিন উপজেলার কুল্যাপাড়া গ্রামের হেদা মোল্লার ছেলে। তিনি ঢাকাতে ন্যাশনাল ব্যাংকে চাকরি করতেন। গত তিন দিন আগে তিনি অসুস্থ অবস্থায় বাড়িতে ফেরেন। এছাড়া ঝিনাইদহ জেলায় নতুন করে আরও ১০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। শনিবার সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ডা. সেলিনা বেগম।তিনি জানান, কুষ্টিয়া ল্যাব থেকে ৮৪টি নমুনার রিপোর্টে ১০ জন করোনায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন। এরমধ্যে ঝিনাইদহ সদরে ৭,কালীগঞ্জে দুই ও হরিণাকুতে একজন শানাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে মোট জেলায় ১২০৩ টি নমুনার রিপোর্টে ৮২ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এরমধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৪৩ জন। করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। মেহেরপুরেও শনিবার একজনের মৃত্যু হয়েছে।উপসর্গ নিয়ে রশিদা বেগম (৬০) নামের এক গৃহবধুর মৃত্যু হয়। তিনি গাংনী উপজেলার গাড়াবাড়িয়া গ্রামের আক্কাস আলীর স্ত্রী। শনিবার দুপুরের দিকে গাড়াবাড়িয়া গ্রামের তার নিজ বাড়িতেই তিনি মারা যান। রশিদা বেগম সম্প্রতি জ্বর ঠান্ডা কাশি নিয়ে ঢাকায় তার মেয়ের বাড়ি থেকে নিজ গ্রাম গাড়াবাড়িয়ায় পৌঁছায়। শনিবার দুপুরের দিকে নিজ বাড়িতে তামার তার মৃত্যু হয়। গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স’র আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা: সাদিয়া সুলতানা জানান,করোনা উপসর্গ নিয়ে রশিদা বেগমের মৃত্যু হয়েছে এমন সন্দেহে উর্দ্ধত্বন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার ফলাফল হাতে না পাওয়া পর্যন্ত এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা সম্ভব হচ্ছেনা। গত ২৪ ঘন্টায় মেহেরপুরে কুস্টিয়া মেডিকেল কলেজ থেকে প্রাপ্ত ৩ টি রিপোর্টের সবকয়টি করোনাভাইরাস নেগেটিভ পাওয়া গেছে বলে মেহেরপুর জেলা সিভিল সার্জন অফিস জানায়। শনিবার সন্ধায় মেহেরপুর সিভিল সার্জন অফিসে এ রিপোর্ট আসে। করোনা ভাইরাস সন্দেহে সোয়াব পরীক্ষার জন্য যে নমুনা পাঠানো হয়েছিল তার মধ্যে আরো ৩ জনের রিপোর্ট এসেছে যার সবগুলো নেগেটিভ। এপর্যন্ত মেহেরপুর জেলায় ১  হাজার ৩শ ৩৬ জনের নমুনা পরীক্ষার করে ৩২ জনের পজেটিভ পাওয়া যায়। যার মধ্যে ৮ জন সুস্থ হয়েছে। মৃতু হয়েছে দুজনের।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More