ভারপ্রাপ্ত জেলা জজ বজলুর রহমান এবং জজশীপের দুই কর্মচারীর বদলি ও শাস্তির দাবি

চুয়াডাঙ্গায় আইনজীবী সমিতির মানববন্ধন কর্মসূচি পালন : অনির্দিষ্টকালের আদালত বর্জন কর্মসূচি অব্যাহত

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা জেলা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক এবং অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-১ মোহা. বজলুর রহমান, জেলা জজ আদালতের নাজির মো. মাসুদুজ্জামান এবং সেরেস্তা সহকারী জহুরুল ইসলাম কর্তৃক আইনজীবীগণের ওপর পরিকল্পিত হামলার প্রতিবাদে এবং জেলা জজশিপ থেকে বদলি ও শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে জেলা আইনজীবী সমিতি। গতকাল রোববার বেলা সাড়ে ১০টায় জেলা আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনের সড়কে এ কর্মসূচি পালন করেন আইনজীবীরা। এ সময় জেলা আইনজীবী সমিতির সহকারীবৃন্দরাও আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন। আইনজীবীদের ডাকে অনির্দিষ্টকালের আদালত বর্জন কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে।
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আলমগীর হোসেনের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বারের সেক্রেটারি তালিম হোসেন, অ্যাড. বেলাল হোসেন (পিপি), সাবেক সভাপতি সেলিম উদ্দিন খান, নুরুল ইসলাম, এমএম শাহজাহান মুকুল, সাবেক সেক্রেটারি এসএম রফিউর রহমান, আবুল বাশার, মহ. শামসুজ্জোহা, সৈয়দ হেদায়েত হোসেন আসলাম, শামীম রেজা ডালিম ও আ স ম আব্দুর রউফ, সিনিয়র আইনজীবী মোসলেম উদ্দিন, মাহতাব হোসেন, ওয়াহেদুজ্জামান বুলা, আকসিজুল ইসলাম রতন, শফিকুল ইসলাম ও মানি খন্দকারসহ আইনজীবী নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
মানববন্ধনে অ্যাড. আকসিজুল ইসলাম রতন বলেন, দুর্নীতিগ্রস্ত পেশকার জহুরুল ইসলাম চারটি বাড়ির মালিক, কোটি কোটি টাকার মালিক এবং প্রচুর জমির মালিক। এ ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশন চেয়ারম্যানের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। অ্যাড. শামীম রেজা ডালিম বলেন, বিচার অঙ্গন মানুষের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল। কোথাও অন্যায় হলে, নির্যাতিত হলে আদালতের আশ্রয় নেয়। সেই আদালত অঙ্গন যদি দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়, তাহলে আর মানুষের জায়গা থাকে না। আজকে এখানে সেই অবস্থা তৈরি হয়েছে। মানুষ এখন কোথায় যাবে? জামিন পেতে যদি লক্ষ লক্ষ টাকা দিতে হয়, মামলার রায় পেতে যদি লক্ষ লক্ষ টাকা দিতে হয়, তাহলে এই বিচারালয়ের কিসের প্রয়োজন? আজ এই কারণে আমি বলবো, যারা দুর্নীতিবাজ, যে সমস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আইনজীবীদের ওপর লাঠি তুলেছেন, আপনাদের হিসাব করা দরকার ছিলো। এই আইনজীবীরা এই চুয়াডাঙ্গার মানুষ, অন্য কোনো জেলা থেকে এই চুয়াডাঙ্গাতে আসে নাই। এই চুয়াডাঙ্গার মাটিতে তাদের জন্ম, এই চুয়াডাঙ্গার মাটিতেই তারা লালিত পালিত হয়েছেন। এই চুয়াডাঙ্গার মাটিতে বড় হয়েছেন। কার ইন্ধনে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতিসহ কার্যকরি কমিটির সদস্যদের ওপর হামলা চালানো হলো?
সাধারণ সম্পাদক তালিম হোসেন বলেন, বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, চোরের মায়ের বড় গলা। যারা দুর্নীতিবাজ, তারাই আজ আমাদের বিরুদ্ধে লাঠি তোলে! খুবই দুঃখজনক ঘটনা।
সাবেক সভাপতি এমএম শাহজাহান মুকুল বলেন, চুয়াডাঙ্গায় বিচারপ্রার্থী মানুষ বিচার পাচ্ছে না। চুয়াডাঙ্গার মানুষ বিচার খরিদ করছে। তারই প্রতিবাদে আজকের মানববন্ধন। চুয়াডাঙ্গার ভারপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ বজলুর রহমান অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ পদে যোগদানের পর থেকে ঘুষ দুর্নীতির আখড়া বানিয়েছেন। তিনি জামিন দিয়েছেন ঘুষ নিয়ে, তিনি রায় দিয়েছেন ঘুষ নিয়ে, আমার কাছে প্রমাণ আছে, মামলার নম্বর আছে। আমি এসপি সাহেবকে অনুরোধ করবো পুলিশ বাহিনী দক্ষতার সাথে মামলা তদন্ত করে। অথচ, সেই মামলা যখন চলমান থাকে, সেই চলমান মামলায় স্বীকারোক্তির আসামির জেল দেয় না। সেই স্বীকারোক্তির আসামিকে খালাস দেয়!
হাইকোর্টের একজন বিচারপতিকে দিয়ে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে অনুরোধ জানিয়ে সেলিম উদ্দিন খান বলেন, তদন্তে যারা অপরাধী হয়, তাদেরকে শাস্তি দেয়া হোক। কেনো তারা উস্কানীমূলকভাবে আইনজীবীদের ওপর হামলা চালালো। আমরা হঠকারীতে নয়, শান্তিতে বিশ্বাস করি। পুলিশ প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ আদালত ভবন থেকে হকিস্টিক ও ক্রিকেটের স্ট্যাম্প উদ্ধার করুন।
সাবেক সেক্রেটারি এসএম রফিউর রহমান বলেন, এখানে দুর্নীতি পাহাড় পরিমাণ হয়ে গেছে। সমাধান হলো, এই দুর্নীতিবাজ জজ এবং তার সাথে জড়িত পেশকার ও নাজির যে আছেন, তাদেরকে অপসারণ করুন। একটি নির্বাহী আদেশ যা সম্ভব। আর, এটাকে যদি চ্যালেঞ্জ মনে করেন, তাহলে পরিণত অত্যন্ত ভয়াবহ হবে। সমস্যার দ্রুত সমাধান না হলে আজ মানববন্ধন হচ্ছে, এরপর মিছিল হবে। আমি চাই না এই নিয়ে হরতাল হোক।
সিনিয়র আইনজীবী মোসলেম উদ্দিন বলেন, সিসি ক্যামেরা বন্ধ করে রাখা না হলে ফুটেজ দেখে সমস্যরা সমাধান করা হতো। সার্বিকভাবে আমরা অন্যায়কারীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি। ভবিষ্যতে যাতে আর কোনো দুর্নীতিবাজরা এমন দুঃসাহস না দেখাতে পারেন।
বারের সভাপতি আলমগীর হোসেন বলেন, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমরা আদালত ছেড়ে মাঠে এসেছি। রাস্তায় নেমেছি। জজ বজলুর রহমানের সহযোগিতায় মাসুদ ও জহুরুল দুর্নীতির পাহাড় গড়ে তুলেছেন। আজকে চুয়াডাঙ্গা জেলাতে হাটবাজারে সের দরে বিচার বেচাকেনা হচ্ছে। এসবের প্রতিবাদে, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়েছি। প্রতিবাদ করছি, শাস্তি দাবি করছি। আমরা কোর্ট বর্জন করেছি। আমাদের আন্দোলনের সঙ্গে সারাদেশের বারগুলো সংহতি প্রকাশ করেছে। সচিবের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আমি তাকে বলে দিয়েছি, ওই দুর্নীতিবাজ জজ এবং মাসুদ ও জহুরুলকে সরিয়ে দিতে। মাসুদ কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য এবং জহুরুলের শহরে চারটি বাড়ি ও গ্রামে মাছের ঘের রয়েছে। দেড় পয়সার কর্মচারীর এতো সম্পদ আসে কোথা থেকে? চুয়াডাঙ্গার আদালত পাঙ্গণকে ঘুষ ও দুর্নীতিমুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ।
অবিলম্বে দুর্নীতিগ্রস্ত ভারপ্রাপ্ত জেলা জজ মোহা. বজলুর রহমানসহ দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মচারীদের বদলি ও শাস্তি নিশ্চিত করে দুর্নীতিমুক্ত আদালত প্রতিষ্ঠায় সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের আদালত বর্জন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আলমগীর হোসেনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ভারপ্রাপ্ত জেলা জজ মোহা. বজলুর রহমানের সাথে আদালত পরিচালনার বিষয়ে সাক্ষাত করতে গেলে বিচারকের খাসকামরায় জজশিপের কর্মচারীরা আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দের ওপর লাঠি নিয়ে হামলা করে। এসময় কয়েকজন আইনজীবী আহত হন। পরে জেলা আইনজীবী সমিতিতে জরুরি সাধারণ সভায় অনির্দিষ্টকালের আদালত বর্জনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন বারের সভাপতি আলমগীর হোসেন।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More