ভুয়া নবাব আসকারী ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে চুয়াডাঙ্গায় মামলা : শ্যালক জনি গ্রেফতার

স্বাস্থ্য বিভাগে চাকরি দেয়ার নাম করে তিন দফায় ১৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ নিকটাত্মীয়র
স্টাফ রিপোর্টার: ঢাকায় গ্রেফতারকৃত ভুয়া নবাব নওয়াব আলী হাসান আসকারী ও তার স্ত্রীসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় মামলা হয়েছে। গতকাল সোমবার আসকারীরই স্ত্রী মেরিনা আক্তার হেনা আসকারীর নিকটাত্মীয় বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। মামলা রুজুর পরপরই চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশ মেরিনা আক্তার হেনার ভাই রায়হান উদ্দীন জনিকে গ্রেফতার করে। আজ মঙ্গলবার তাকে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ডের আবেদন জানাতে পারেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।
নওয়াব আলী হাসান আসকারী আনুমানিক ৩ বছর আগে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের সবুজপাড়ার হাতেম আলীর মেয়ে মেরিনা আক্তার হেনার সাথে বিয়ে করেন। নওয়াব আলী হাসান আসকারী যখনই চুয়াডাঙ্গাস্থ তার শ^শুরবাড়ি আসতেন তখনই মহল্লায় ফুটিয়ে তুলতেন উৎসবের আমেজ। মাস খানেক আগে মেরিনা আক্তার হেনা কন্যা সন্তান প্রসব করেন। মেয়েকে দেখতে ওই সময় আলী হাসান আসকারী চুয়াডাঙ্গায় আসেন। ওই সময় এলাকায় উন্নতমানের খাবারও পরিবেশন করেন। এরপরই গত গত বুধবার ঢাকায় প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার হলে অনেকেরই ভুলভাঙে। মাথায় হাত ওঠে চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার বিষ্ণুপুর গ্রামের সহিদুল ইসলামের ছেলে রফিকুল ইসলামের। তিনিও প্রতারিত হয়েছেন। রফিকুল ইসলামের বোনকে স্বাস্থ্য বিভাগে চাকরি দেয়ার নাম করে তিন দফায় মোট ১৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তিনি গতকাল চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। অভিযোগে রফিকুল ইসলাম বলেছেন, মেরিনা আক্তার হেনা আমার নিকটাত্মীয়। আমার বোনের চাকরির জন্য চেষ্টা করতে থাকি। মেরিনা আক্তার হেনা বলেন, তার স্বামী নবাব পরিবারের ছেলে। দেশের সরকারি সব দফতরেই স্বামী আসকারীর হাত রয়েছে। সহজেই চাকির দিতে পারবে। এরপর আসকারী, হেনা ও হেনার ভাই জনি জানায়, চাকরির জন্য টাকা দিতে হবে। স্বাস্থ্য বিভাগে চাকরি দেয়ার কথা বলে প্রথমে ৭ লাখ টাকা নেন আসকারী। ওই টাকা ব্যাংকের মাধ্যমেই দেয়া হয়। এরপর আরও দু’দফায় মেরিনা ও জনির হাতে আরও ৬ লাখ টাকা দেয়া হয়। টাকা নিয়েও চাকরি দিতে না পেরে দিনের পর দিন ঘোরাতে তাকে। আজ হবে, কাল হবে বলে ঘুরাচ্ছিলো। এরই মাঝে টেলিভিশনের খবরে প্রকাশ পায় আসকারী প্রতারণা মামলায় ঢাকায় গ্রেফতার হয়েছেন। এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার জনিকে কোর্ট রোড থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এদিকে জানা গেছে, প্রতারণার অভিযোগে ঢাকায় গ্রেফতারকৃত আসকারী চুয়াডাঙ্গা সবুজপাড়ার মেরিনা আক্তার হেনার দ্বিতীয় স্বামী। মেরিনা আক্তার হেনার আগেও বিয়ে হয়েছিলো। প্রথম স্বামীর সংসারে হেনার রয়েছে ছেলে। তার বয়স বর্তমানে ১২ বছর। আর আসকারীর সংসারে এসেছে এক কন্যা সন্তান। পক্ষকাল আগে মেরিনার কোল জুড়ে এসেছে এক কন্যা। এই কন্যা হওয়ার খবর পেয়ে আসকারী চুয়াডাঙ্গায় এসে এলাকায় উন্নত মানের খাবার বিতরণ করেন। তখনও অনেকে বুঝতে পারেননি তিনি কতো বড় প্রতারক। তাছাড়া গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মেরিনা আক্তার হেনা চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে প্রার্থী হয়েও পরিচিতি পান। মুসলিম লীগ মনোনীত হারিকেন মার্কা নিয়ে নির্বাচনে নামলেও ভোট পেয়েছিলেন কয়েকটি। অবাক হলেও সত্য যে, তাকে গ্রেফতারের পরও পুলিশ নিশ্চিত হতে পারছে না তার আসল নাম ঠিকানা। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে আসকারী শুধু স্বীকার করছেন, তিনি একজন বিহারি। পুরান ঢাকায় তার জন্ম। নবাব পরিবারের সদস্য না হয়েও নবাব পরিচয় দিয়ে মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। নবাবি এস্টেটের সম্পদ দখল করতে ভুল তথ্য দিয়ে জন্মনিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্টও তৈরি করেছেন তিনি। সম্পত্তির মোতাওয়াল্লিহওয়ার জন্য এরই মধ্যে পাঁচটি ‘মিস কেস’ (অন্যের জমি অবৈধভাবে দখলের জন্য মামলা) করেছেন আসকারী।
উল্লেখ্য, গত বুধবার রাজধানীর মিরপুর থেকে আসকারীকে গ্রেফতার করে ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের ইকোনমিক ক্রাইম ও হিউম্যান ট্রাফিক টিম। তার পাঁচ সহযোগীকেও গ্রেফতার করা হয়। এরপর তাদের তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বিষয়টি তদন্তের সঙ্গে যুক্ত এক কর্মকর্তা জানান, নবাব আলী হাসান আসকারী নামে প্রথমে জন্মনিবন্ধন সনদ নিয়েছেন এই ভুয়া নবাব। পরে একই নামে জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট তৈরি করেন। পাসপোর্ট ও এনআইডিতে আসকারি তার স্থায়ী ঠিকানা দেখান- ‘আহসান মঞ্জিল’। এনআইডিতে অস্থায়ী ঠিকানা হিসেবে লেখা রয়েছে- ১০৭ এ, ৭ নম্বর সেক্টর উত্তরা। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আসকারি দাবি করেছেন, ২০০৭ সালে উত্তরার ওই ঠিকানায় তার বাবা আমানুল্লুহ আসকারী মারা যান। যদিও এর স্বপক্ষে কোনো তথ্য-প্রমাণ দেখাতে পারেননি তিনি।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More