স্টাফ রিপোর্টার: করোনাকে রুখতে সবাই এখন ভ্যাকসিনের দিকে তাকিয়ে আছেন। আগামী জানুয়ারির শেষ বা ফেব্রুয়ারিতে দেশে ভ্যাকসিনের প্রথম ৫০ লাখ ডোজ আসবে। যা ২৫ লাখ মানুষকে দেয়া যাবে। ভ্যাকসিন এলে প্রথম ধাপে কারা কারা পাবেন, তার একটি অগ্রাধিকার তালিকা তৈরি হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে টিকা বণ্টনের বিষয়ে ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ে নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠি পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন সিভিল সার্জন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা। করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য জেলা ও উপজেলা কমিটি গঠন করা হচ্ছে। ১৩ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় কমিটির বিষয়ে চিঠি পাঠানো হয়। এসব কমিটিতে ১৬ জন করে সদস্যের উল্লেখ আছে। জেলা কমিটির পাঁচটি ও উপজেলা কমিটির চারটি সুনির্দিষ্ট কাজের কথা চিঠিতে উল্লেখ আছে। মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে ভ্যাকসিন বিষয়ক জাতীয় পরিকল্পনা। সেটা চলে গেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে।
জানা গেছে, গত ১৩ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নির্দেশনা পাওয়ার পর থেকে এ কমিটি গঠনের কাজ শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রেরিত নির্দেশনায় এই কমিটির কর্মপরিধিও নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্দেশনা প্রাপ্তির পর উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন শুরু করেছেন সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা। তারা জানিয়েছেন, ভ্যাকসিন বিতরণে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একটি গাইড লাইন বেঁধে দেয়া হয়েছে। তবে ভ্যাকসিন বরাদ্দের বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। কবে নাগাদ এ ভ্যাকসিন আসতে পারে সে বিষয়েও নির্দেশনায় কিছু বলা নেই।
করোনা ভ্যাকসিন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মীগণ, সম্মুখ সারির কর্মীগণ, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাহীন জনগোষ্ঠী, বয়োজ্যেষ্ঠ জনগোষ্ঠী, দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠী অগ্রাধিকার পাবে। নির্দেশনায় কমিটিকে ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ করতে বলা হয়েছে। ভ্যাকসিন প্রদানকালীন সময়ে বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টিও উল্লেখ আছে নির্দেশনায়।
এ বিষয়ে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মাদ রুহুল আমিন জানান, তার উপজেলায় ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম সংক্রান্ত কমিটি গঠনের কাজ চলছে। একটি লিখিত গাইড লাইনও তারা পেয়েছেন। সেই নীতিমালা অনুসারে ভ্যাকসিন বিতরণ কমিটি কাজ করবে বলে জানান তিনি। বীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আব্দুল কাদের জানান, কমিটি গঠন সংক্রান্ত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চিঠি পেয়েছেন। নির্দেশনা অনুসারে তার উপজেলায় কার্যক্রম শুরু করেছেন। তবে ভ্যাকসিনের বরাদ্দ বা ডোজের বিষয়ে তাদের এখনো কিছু জানানো হয়নি। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে উপদেষ্টা করে গঠন করা কমিটিতে সভাপতি থাকবেন সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসার। এতে সদস্য সচিব থাকবেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা এবং সচিব থাকবেন স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কাজ করে এমন দু’টি এনজিও’র প্রতিনিধি। কমিটির অন্য সদস্যদের মধ্যে থাকবেন-সহকারী কমিশনার (ভূমি), থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), পৌরসভার মেয়র, উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, উপজেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, আইসিটি অধিদপ্তরের সহকারী প্রোগ্রামার এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার কর্তৃক মনোনীত দুইজন গণ্যমান্য ব্যক্তি। এ বিষয়ে একজন সিভিল সার্জন বলেন, চিঠি পেয়েছি। নির্দেশনা অনুসারে কাজ শুরু করেছি। জেলা পর্যায়ে কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্র মতে, করোনার টিকা ব্যবস্থাপনার জন্য জাতীয় পর্যায়ে তিনটি কমিটি গঠিত হয়েছে। প্রথমটি কোভিড-১৯ টিকা ব্যবস্থাপনা টাস্কফোর্স কমিটি, এই কমিটির সভাপতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী। পরের কমিটি টিকা ব্যবস্থাপনা ওয়ার্কিং গ্রুপ। এর নেতৃত্বে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব। জাতীয় পর্যায়ে তৃতীয় কমিটির নাম কোভিড-১৯ টিকা বিতরণ ও প্রস্তুতি কমিটি। এর নেতৃত্বে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন)। টিকাবিষয়ক জেলা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক। সদস্য সচিবের দায়িত্বে থাকবেন জেলা সিভিল সার্জন। কমিটির উপদেষ্টা হিসেবে থাকবেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। এতে মোট সদস্য সংখ্যা ১৬ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, দেশের সব মানুষের জন্য একসঙ্গে টিকার ব্যবস্থা করা সম্ভব না। যে টিকা দেশে আসবে, তা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেয়ার চিন্তা চলছে। অগ্রাধিকারের এই তালিকা তৈরির কাজ জটিলতা তৈরি করতে পারে। প্রতি ব্যক্তির টিকার দুটি ডোজের প্রয়োজন পড়বে। তাই সারা দেশে এই অগ্রাধিকার তালিকা তৈরি করে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় ভ্যাকসিন কার্যক্রম সম্পন্ন করাই বড় চ্যালেঞ্জ।