মহামারি করোনা কেড়ে নিচ্ছে চুয়াডাঙ্গার একের পর এক তরতাজা প্রাণ : নতুন শনাক্ত ১৪০ জন

নতুন আরও ২৮২ জনের নমুনা সংগ্রহ : বর্তমানে শনাক্তকৃত সক্রিয় রোগী ১১৯৫ জনের মধ্যে বাড়িতে ১১২০ জন

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় করোনা আক্রান্তদের মধ্যে আরও ২ জনসহ উপসর্গ নিয়ে ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগের হিসেবে মৃতের সংখ্যা ১১৩ জন। এ ছাড়াও চুয়াডাঙ্গা ও চুয়াডাঙ্গা শহরতলীর দুজনের মুত্যু হয়েছে। শনিবার চুয়াডাঙ্গায় আরও ১৪০ জন করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। সুস্থ হয়েছেন ৩৬ জন। বর্তমানে শনাক্তকৃত সক্রিয় রোগী ১১৯৫ জনের মধ্যে হাসপাতালে ৭৫ জন বাড়িতে ১১২০জন। এছাড়াও ৬৮ জন রোগী হাসপাতালের হলুদ জোনে গুরুতর অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। অপরদিকে ফুসফুসে সংক্রমণ আরোগ্যে যে ওষুধ জরুরী হয়ে পড়েছে তা চুয়াডাঙ্গায় সরবরাহ কম হওয়ায় সুচিকিৎসা নিশ্চিত করায় সমস্যা দেখা দিয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসারসূত্রে জানা গেছে, জেলা শহরের কলেকপাড়ার কাজী আশফাককের স্ত্রী রোকেয়া পারভিন সম্প্রতি সর্দি কাশি জ¦রে আক্রান্ত হন। তার নমুনা নেয়া হয়। ২৬ জুন র‌্যাপিড এন্টিজেন পরীক্ষায় কোভিড-১৯ পজিটিভ হয়। ৬৪ বছর বসী রোকেয়া খাতুনকে গত ২৯ জুন সন্ধ্যায় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। ভীর্ত করা হয়। গতকাল শনিবার বিকেল ৩ টা ৫৫ মিনিটে হাসপাতালের রেডজোনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। সদর উপজেলার সুমিরদিয়ারর ৫৫ বছর বয়সী বলেহার সর্দি কাশি জ¦র ও গায়ে ব্যাথায় ভুগছিলেন। তাকে গত ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। হলুদ জোনে ভর্তি করে নুমান নেয়া হয়। গতকাল শনিবার সকাল ৮টার দিকে মারা যান বলেহার। তিনি বাবুর আলীর স্ত্রী। তার মৃতদেহ স্বাস্থ্য বিধি মেনে দাফনের পরামর্শ দেয়া হয়। যদিও তা কতোটা মানা হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। জীবননগর উপজেলার আন্দুলবাড়িয়ার মীর জবেদ আলীর ছেলে মীর আব্দুল জলিল বেশ কিছুদিন ধরে সর্দি কাশি জ¦রে ভুগছিলেন। তাকে গত শুক্রবার বিকেল পৌনে ৫টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। হলুদ জোনে ভর্তি করে নমুনা নেয়া হয়। গতকাল শনিবার বেলা পৌনে ৩টার দিকে মারা যান ৫৫ বছর বয়ষী মীর আব্দুল জলিল। এছাড়াও করোনা মহামারির মধ্যে চুয়াডাঙ্গা শহরতলী দৌলাতদিয়াড়ের নাসির উদ্দীনের স্ত্রী মনোয়ারা খাতুন মারা গেছেন। ৫৪ বছর বয়সী মনোয়ারা বেগম গতকাল শনিবার সকাল আনুমানিক ১০টার দিকে জেলা শহরের মুসলিমপাড়ায় মারা যান। তিনিও করোনা উপসর্গে ভুগছিলেন। বাদ জোহর তার মৃতদেহ মুসলিমপাড়া জামে মসজিদে নামাজে জানাজা শেষে জান্নাতুল মওলা কবরস্থানে দাাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়। মনোয়ারা বেগমের নমুনা নেয়া হয়নি। মারা যাওয়ার পূর্ব মূহুতেও নেয়া হয়নি হাসপাতালে। মুসলিমপাড়ার রবিউল ইসলামের স্ত্রী মনিরা বেগম দিন পনেরো ধরে জ¦রে ভুগছিলেন। শনিবার বেলা ১১টার দিকে মারা যান ৪৯ বছরের মনিরা বেগম মারা যান। তাকেও হাসপাতালে নেয়া হয়নি। দামুড়হুদার বিষ্ণপুরের মৃত মোহাম্মদ মোল্লার ছেলে রমজান আলী গত বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। এর আগে ঢাকা স্পেশালাইজড হাসপাতালে নমুনা দিয়ে ২৫ জুন কোভিড-১৯ পজিটিভ হন। পরবর্তিতে তাকে সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। গতকাল শনিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে তিনি হাসপাতালের রেডজোনে মারা যান। মৃত্যুকালে রমজান আলীর বয়েস হয়েছিলো ৭৫ বছর। এছাড়াও আলমডাঙ্গা উপজেলার মাজু গ্রামের একজন নারী করোনার উপসর্গ নিয়ে কুষ্টিয়া হাসপাতালে ভর্তি হন। তারও নমুনা পরীক্ষা করে পজিটিভ হয়। গতকাল শনিবার তিনি মারা যান। এদিকে একের পর এক করোনা রোগী ও করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. ফাতেহ আকরাম বলেছেন, এবারের রোগীদের ফুসফুস আক্রান্তর হার অনেক বেশি। দ্রুত এন্টিভাইরাল, এন্টি ফাআেিরাসিস ওষুধ যোগ না করলে রোগীঅরও খারাপ হয়ে াচ্ছে। ওই ওষুধগুলোর দাম বেশি। রেরাপেনাম সরকারি ওষুধ। যা সিঅএমএসডি ডিপোতে স্বল্পতা থাকায় আমরা পর্যাপ্ত পরিমানে পায়নি। যা আছে তা সরবরাহ পাওয়ার সাথে সাথে শেষ হয়ে যায়। আমরা তথা চুয়াডাঙ্গাতে ঢাকার আইসিইউ দেয়া চিকিৎসা দিচ্ছি। চিকিৎসকদের কোয়ারান্টাইন সুবিধা কমিয়ে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ২ জন করে, রাতে ১ জনক করে দায়িত্বপালন করছেন। রাতে দায়িত্বপালনের পর নাইট অফ না নিয়ে আবারও বিকেল এস চিকিৎসকেরা সাপোর্ট দিচ্ছেন। আমি বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ হওয়ায় আরএমও’র সকাল থেকে রাত পর্যন্ত খারাপ রোগীদের পাশে থাকছি। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিচ্ছি। অথচ কিছু মিডিয়া ও ফেসবুকে বিভ্রান্তমূলক তথ্য প্রচার হচ্ছে। যা কষ্টকর।
চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগ শনিবার নতুন ২৮২ জনের নমুনা সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট ল্যাবে প্রেরণ করেছে। এ নিয়ে মোট ১৪ হাজার ৪শ ৪০ জনের নমুনা নেয়া হয়েছে। শনিবার ৪১৫ জনের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়া যায়। এ নিয়ে মোট ১৩ হাজার ৭শ ৭০ জনের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়া গেছে। শনিবার ৪১৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করে কোভিড-১৯ পজিটিভ হয়েছে ১৪০জনের। এর মধ্যে সদর উপজেলার ৩০ জন, আলমডাঙ্গা উপজেলার ২৮ জন, দামুড়হুদা উপজেলার ৩৬ জন ও বাকি ৪৬ জন জীবননগর উপজেলার। এ নিয়ে জেলা মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৬শ ৫৩ জন। শনিবার আরও ৩৬ জন সুস্থ হয়েছেন। এ নিয়ে মোট সুস্থ হলেন ২ হাজার ৩শ ৪২ জন। চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগের হিসেবে করোনায় মৃতের সংখ্যা ১১৩ জন। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গাতে মারা গেছেন ৯৮ জন। চুয়াডাঙ্গার বাইরে মারা গেছেন ১৫ জন। এছাড়াও চুয়াডাঙ্গায় করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়ার সংখ্যা প্রায় অর্ধশত। অবাক হলেও সত্য যে, অনেকেই উপসর্গে ভুগছেন। অথচ তারা স্বাস্থ্য বিভাগের সাে থ যোগাযোগ করে নিজেদের করোনা ভাইরাস পরীক্ষা করছেন না। এদের কেউ কেউ শ^াসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেও অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে পড়ছে। গতরাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের হলুদ জোনে ৬৮ জন ভর্তি ছিলেন। যাদের অনেরকই অবস্থা শঙ্কাটাপন্ন। এদিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক নজুরুল ইসলাম সরকার বলেছেন, কঠোর লকডাউন নিজ নিজ স্বার্থেই সকলকে মেনে চলতে হবে। জ¦রে আক্রান্ত হলেই নমুনা দিয়ে করোনা পরীক্ষা করতে হবে। কোন ব্যাক্তি বা পরিবার অর্থ সংকটে থাকলে তাদের নমুনা পরীক্ষার কোন ব্যায়ভার বহন করতে হবে না। তাছাড়া যারা করোনা আক্রন্ত হয়েছে তাদেরকে সু চিকিৎসা পেতে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের নম্বরে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। কোন সমস্যা হলে অবশ্যই ট্রিপল নাইন তথা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে বিষয়টি জানাতে হবে।
এ দিকে গতকাল শনিবার যে ১৪০ জন নতুন করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে তার মধ্যে উপজেলা ভিত্তিক যে তথ্য স্বাস্থ্য বিভাগ দিয়েছে তাতে বাস্তবে কিছুটা গড়বড় রয়েছে। প্রকৃত পক্ষে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ৩৬ জনের মধ্যে জেলা শহরের পোষ্ট অফিসপাড়ার ৮ জন, কোর্টপাড়ার ৩ জন, মুক্তিপাড়ার ২ জন, জোয়ার্দ্দারপাড়ার ২ জন, এছাড়াও জেলা সদরের যেসব এলাকায় একজন করে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে ফার্মপাড়া, ভিমরুল্লাহ, বড়বাজারপাড়া, সোনালী ব্যাংক, বনানীপাড়া, থানাপাড়া, কেদারগঞ্জ, পুরাতন হাসপাতালপাড়া, এনএসআই অফিস, পুলিশ ফাঁড়ি, জেলা তথ্য অফিস, বাস স্ট্যান্ডপাড়া, কলেজপাড়া, সহ পৌরসভার পাশর্^বর্তী গ্রামের নবীননগর, জলবিলা, নীলমণিগঞ্জ, সরোজগঞ্জ, কুন্দিপুর ও দৌলাতদিয়াড়। এছাড়াও বিস্তারিত ঠিকানা ছাড়াই শুধুমাত্র সদর উপজেলা বলে উল্লেখ করা দুজন। এ দুজনের বিস্তারিত পরিচয় দৈনিক মাথাভাঙ্গা জানলেও শুধুমাত্রা তাদের গোপনীয়তা রক্ষার্থে বিস্তারিত লেখা হয়নি। আলমডাঙ্গা উপজেলার নতুন শনাক্তকৃতদের মধ্যে রয়েছে আসান নগরে ২ জন, প্রাগপুরের ২জন, হাইরোর্ডের দুজন, হারদীর দুজন রোগী রয়েছে। এ ছাড়াও একজন করে যেসব এলাকায় করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে শ্রীরামপুর, স্টেশনপাড়া, আনন্দধাম, কালীদাসপুর, বৈদ্যনাথপুর, বোয়ালিয়া, ফরিদপুর, মানিকদিহি, বেতবাড়িয়া, পাইকপাড়া, খাদিমপুর, কলেজপাড়া, মুন্সিগঞ্জ, এরশাদপুর, নওদা দুর্গাপুর, নূরপুর ও সোনাপুর। দামুড়–হুদা উপজেলার উপজেলা সদরেরই ৭ জন, দর্শনার ৯ জন, উজিরপুরের দুজন, দলকা লক্ষ্মীপুরের ২ জন, নতুন হাউলীর দুজন, মুক্তারপুরের দুজন, কার্পাসডাঙ্গার দুজনসহ একজন করে যেসব গ্রামের রোগী শনাক্ত হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে কলাবাড়ী, দশমীপাড়া, জুড়ানপুর, চিৎলা, নতুন বাস্তপুর, কুতুবপুর, লোকনাথপুর, পারকৃষ্ণপুর, মদনা। এছাড়াও একই উপজেলার ঠিকানা দেয়া কুষ্টিয়া নরহরপুরের একজন। জীবননগর উপজেলার হাসাদহের ৩ জন, আন্দুলবাড়িয়ার ৫ জন, গোকুলনগরের ৩ জন, হরিয়ানগরের দুজন, দেহাটীর দুজন, পাথিলার দুজন, গুড়দার দ৩ জন, সন্তোষপুরের দুজন, শ্যামপুরের দুজন রয়েছেন। এ ছাড়া একজন করে রোগী যেসব এলাকায় রোগী শনাক্ত হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে বাস্তপুর, নারায়নপুর, গহ্বেশপুর, মুক্তারপুর, কাটাপোল, বাকা আশতলাপাড়া, যদুপুর, শখারিয়া, ইসলামপুর, পিয়ারপুর, কাবিলপুর, কাশেমপুর, ইশাডাঙ্গা, পীরগাছা, মথুরা, হাবিবপুর, ছৃুুুটিয়া, নতুন চাকলা ও ধানখেলা। এসব গ্রামের মধ্যে কিছু গ্রাম পাশর্^বর্তি ঝিনাইদহে মহেশপুরের। এরা জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মাধ্যমে নমুনা দেন।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More