মেহেরপুরে নতুন কেউ শনাক্ত না হলেও শৈলকুপা ও কুমারখালীতে উপসর্গ নিয়ে দুজনের মৃত্যু

চুয়াডাঙ্গায় ৩ ঝিনাইদহে ৫ কুষ্টিয়ায় ২৬ জন নতুন করে করোনায় আক্রান্ত
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় করোনা ভাইরাসে নতুন করে তিনজন নারী আক্রান্ত হয়েছেন। গতকাল বুধবার রাতে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাব থেকে এ রিপোর্ট চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন অফিসের কার্যালয়ে আসে। এছাড়া কুষ্টিয়ায় একদিনে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২৬ জন। মেহেরপুরে কেউ শনাক্ত না হলেও ও ঝিনাইদহে নতুন করে আরও ৫জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়াও গত মঙ্গলবার শৈলকুপা ও কুমারখালীতে করোনা উপসর্গ নিয়ে দুজন মারা গেছেন।
চুয়াডাঙ্গায় নতুন করে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অন্যদিকে সাধারণ মানুষের অসচেতনতায় প্রতিদিনই নতুন রোগী শনাক্ত হচ্ছে। বাইরে চলাচল করার সময় সাধারণ মানুষ মাঝে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রবণতা অনেক কম। সামাজিক দূরত্ব না মানা ও বেশির ভাগ মানুষ মাস্ক ব্যবহার না করেই নিজেদের খেয়াল খুশি মতো চলাফেরা করছেন। মানুষের সামাজিক দূরত্ব ও মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে চুয়াডাঙ্গা সদর, আলমডাঙ্গা, দামুড়হুদা ও জীবননগর উপজেলায় জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত নিয়মিত কাজ করছেন। জেলা প্রশাসনের ১১টি ভ্রাম্যমাণ আদালত বিভিন্নস্থানে অভিযান পরিচালনা করে ৫২ জনকে ভিন্ন অপরাধে ৮৬ হাজার ২শ’ টাকা জরিমানা করেছেন।
সিভিল সার্জন অফিসসূত্রে জানা যায়, গতকাল বুধবার রাতে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাব চুয়াডাঙ্গার থেকে ৯২টি নতুন রিপোর্ট আসে। নতুন রিপোর্টের মধ্যে করোনা ভাইরাস পজেটিভ হয়েছে তিনজন নারীর। চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার সিনেমাহল পাড়ার একজন নারী ও জীবননগর উপজেলার খয়েরহুদা গ্রামের দুজন নারী করোনা পজেটিভ হয়েছেন। আক্রান্ত তিনজন নারীর বয়স ২৫-৩৫ বছরের মধ্যে। নতুন আক্রান্ত তিনজন নারী হোম আইসোলেশনে রয়েছেন। বুধবার চুয়াডাঙ্গার চারটি উপজেলা থেকে করোনা পরীক্ষা করার জন্য নতুন নমুনা প্রেরণ করা হয়েছে ৫৪ জনের। এ পর্যন্ত নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১ হাজার ৫৩২টি। জেলায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ১৩৪ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৮৪ জন। প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম আইসোলেশনে বর্তমানে চিকিৎসাধীন রোগী রয়েছেন ৫০ জন।
জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, জীবননগর উপজেলায় আরও দুজনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। গতকাল বুধবার তাদের করোনা পজেটিভ রিপোর্ট পাওয়া গেছে। আক্রান্ত দুজন করোনায় আক্রান্ত স্বাস্থ্য সহকারীর সংস্পৃশে এসে তাদের হয়েছে না-কি তাদের নিকট হতে ওই স্বাস্থ্য সহকারীর হয়েছে তা অবশ্য তাৎক্ষণিকভাবে নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। করোনা শনাক্ত হওয়ার পর গত সোমবার ওই স্বাস্থ্য সহকারীর সংস্পৃশে আসা ৪৯ জন নারী ও শিশুর নমুনা নেয় স্বাস্থ্য বিভাগ। এদের মধ্যে ৪৭ জনের রিপোর্ট নেগেটিভ এলেও দুজন নারীর করোনা পজেটিভ আসে। গতকাল রাতেই তাদের বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। এ নিয়ে জীবননগর উপজেলায় করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো ১১ জনে। এর মধ্যে ৪ জন ইতোমধ্যে সুস্থ হয়েছেন। এ দিকে জীবননগর পৌরসভার অবশিষ্টদের নমুনা গতকাল সংগ্রহ করা হয়েছে।
জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইউএইচএফপিও ডা. জুলিয়েট পারউইন জানান, জীবননগর হাসপাতালের একজন স্বাস্থ্য সহকারীর করোনা পজেটিভ আসে। ওই স্বাস্থ্য সহকারী নারী কেডিকে ইউনিয়নে কর্মরত। তিনি খয়েরহুদা গ্রামের টিকাদান কেন্দ্রে শিশুদের টিকা দেন। এ টিকাদানের পর গত শুক্রবার তার শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। ফলে ওই স্বাস্থ্য সহকারীর নিকট থেকে সেবা নেয়া ৪৯ নারী ও শিশু করোনায় আক্রান্ত হয়েছে কী-না তা নির্ণয়ের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় গত ৮ জুন খয়েরহুদা গ্রাম হতে ৪৯ জনের নমুনা সংগ্রহ করে স্বাস্থ্য বিভাগের একাধিক টিম। ওই ৪৯ জনের মধ্যে গতকাল দুজনের করোনা রিপোর্ট পজেটিভ আসে। এদিকে জীবননগর পৌরসভার অবস্থিত স্টাফদের নমুনা গতকাল সংগ্রহ করা হয়েছে এবং পৌর সভার আক্রান্ত ওই কর্মচারীকে হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঝিনাইদহে নতুন করে আরও ৫ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে এ জেলায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ৬৯ জন। গতকাল বুধবার সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেন ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ডা. সেলিনা বেগম। সিভিল সার্জন ডা. সেলিনা বেগম জানান, যশোর এবং কুষ্টিয়া ল্যাব থেকে ৪২টি রিপোর্ট এসেছে। এর মধ্যে ৫ জনের পজেটিভ এসেছে। আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে শৈলকুপায় ১, হরিণাকু-ু ২, কালীগঞ্জ ১ ও কোটচাঁদপুর উপজেলায় একজন আক্রান্ত। আক্রান্ত ৬৪ জনের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৪১ জন।
অপরদিকে, শৈলকুপা উপজেলায় করোনা উপসর্গ নিয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। গত মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার আবাইপুর ইউনিয়নে নিজ বাড়িতে তার মারা যান তিনি। মারা যাওয়া ওই ব্যক্তির বয়স হয়েছিলো ৫০ বছর। তিনি বেশ কয়েক দিন থেকে জ্বর, সর্দি ও কাশিতে ভুগছিলেন। শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা রাশেদ আল মামুন বলেন, ছয় থেকে সাত দিন আগে করোনার উপসর্গ নিয়ে ঢাকা থেকে নিজ বাড়িতে আসেন ওই ব্যক্তি। বাড়িতেই অসুস্থ অবস্থায় ছিলেন। মঙ্গলবার দুপুরে তিনি মারা যান। করোনা পরীক্ষার জন্য তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। বিকেলে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথের নির্দেশে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ওই ব্যক্তির জানাজা ও দাফন সম্পন্ন করা হয়।
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, কুষ্টিয়ায় বুধবার ২৬ জনের শরীরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় ১৭৯ জন করোনা রোগী শনাক্ত হলেন। এদিকে গত মঙ্গলবার মারা যাওয়া এক বৃদ্ধের নমুনা পরীক্ষার পর জানা গেছে তিনি করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত ছিলেন। সিভিল সার্জন এইচএম আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, জেলায় পজেটিভ হয়ে এটাই প্রথম মৃত্যু। তার পরিবারের অন্য সদস্যদের নমুনাও সংগ্রহ করা হবে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়সূত্রে জানা যায়, বুধবার রাত ৮টায় কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাব থেকে জেলার ২০১টি নমুনা পরীক্ষার ফল পাওয়া যায়। নতুন আক্রান্ত ২৬ জনের মধ্যে সদর উপজেলার ১১ জন, দৌলতপুরে ৩ জন, কুমারখালীর ৩ জন এবং ভেড়ামারার ৯ জন। তাদের মধ্যে ১৮ জন পুরুষ ও ৮ জন নারী। এ নিয়ে কুষ্টিয়ায় ১৭৯ জন কোভিড রোগী শনাক্ত হলেন। সবচেয়ে বেশি রোগী সদর উপজেলায়, ৬৫ জন। এছাড়া ভেড়ামারায় ৩৩ জন, দৌলতপুরে ২৮, কুমারখালীতে ২৬, মিরপুরে ১৫ ও খোকসাতে ১২ জন। সুস্থ হয়ে ছাড়া পেয়েছেন ৩৪ জন। বর্তমানে হোম আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন ১৪০ জন।
কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন এইচএম আনোয়ারুল ইসলাম জানান, জেলায় গত ২২ এপ্রিল প্রথম রোগী শনাক্ত হয়। এ পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ১৭৯ জন। গত ৮ দিনেই শনাক্ত হয়েছেন ১০৭ জন। চলিত মাসে লাফিয়ে লাফিয়ে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। মঙ্গলবার ভোরে কুমারখালী পৌরসভার শেরকান্দি এলাকায় মোকাদ্দেস হোসাইন (১০১) মারা যান। তিনি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। পরে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়। গতকাল বুধবার পরীক্ষার ফল পাওয়ার পর জানা যায় তিনি কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত ছিলেন।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More