করোনাভাইরাস সংক্রমণের সাথে লম্বা হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল
মেহেরপুর অফিস: মেহেরপুরে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন গাংনী উপজেলার করোমদি গ্রামের ইসাহক আলীর স্ত্রী নাজমা খাতুন (৩৫), সদর উপজেলার চাঁদবিল গ্রামের সার্থক আলীর স্ত্রী ফজিলা খাতুন (৫৫) ও মুজিবনগর উপজেলার কেদারগঞ্জ বাজার কমিটির সভাপতি হেকমত আলী জোয়ার্দ্দার। এছাড়া করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন আরো ৫ জন। আর নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৪০ জন। আক্রান্তের হার শতকরা ২৪ দশকি ৩৯ ভাগ। এ পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা ৮৪ জন। আর আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৭৫৮ জন। প্রতিদিন মেহেরপুরে মৃত্যুর মিছিলে যোগ হচ্ছে নতুন নতুন মুখ। করোনা সংক্রমণে লম্বা হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। দিনেদিনে করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এতে মেহেরপুরে সচেতন মানুষের মাঝে বাড়ছে উদ্বেগ উৎকন্ঠা। মেহেরপুরের লকডাউন কঠোরভাবে পালনে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। সাথে যোগ হয়েছে র্যাব, সেনা সদস্য ও বিজিবি। তবে গতকাল শুক্রবার মেহেরপুর শহরে লকডাউন পালিত হয়েছে ঢিলেঢালা। আর গ্রামে লকডাউন পালিত হচ্ছে না বলে অনেকে মন্তব্য করেছেন।
গত ২৪ ঘণ্টায় মেহেরপুর জেলায় নতুন করে আক্রান্ত ৪০ জনের মধ্যে মেহেরপুর সদর উপজেলায় ২৫ জন, গাংনী উপজেলায় ১৩ জন ও মুজিবনগর উপজেলায় ২৪ জন রয়েছেন। এনিয়ে বর্তমানে জেলায় মোট করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৭৫৮ জন। গতকাল রাতে সিভিল সার্জন ডা. মো. নাসির উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
মেহেরপুর সিভিল সার্জন অফিস থেকে আরো জানা যায়, কুষ্টিয়া ল্যাব থেকে ১৬৪ টি নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৪০ জন করোনা রোগী চিহ্নিত হয়েছেন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন মোট ৭৫৮ জন করোনা রোগীর মধ্যে সদর উপজেলার বাসিন্দা ২৬৫ জন, গাংনী উপজেলার বাসিন্দা ৩৮৯ জন ও মুজিবনগর উপজেলার বাসিন্দা ১০৪ জন। এছাড়া ট্রান্সফার্ড হয়েছেন ১১৯ জন। এদের মধ্যে সদর উপজেলার ৭৬ জন, গাংনী উপজেলার ১৮ জন ও মুজিবনগর উপজেলার ২৫ জন রয়েছেন। এ ছাড়া এ পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন এক হাজার ৫৬৩ জন। যার মধ্যে সদর উপজেলায় ৮৮১ জন, গাংনী উপজেলায় ৪৭৮ জন ও মুজিবনগর উপজেলায় ২০৪ জন রয়েছেন। এছাড়া এ পর্যন্ত জেলায় মারা গেছেন ৮৪ জন। যার মধ্যে সদর উপজেলায় ৩৪ জন, গাংনী উপজেলার ৩২ জন ও মুজিবনগর উপজেলার ১৮ জন রয়েছেন। এদিকে করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় দফায় উদ্বেগজনক হারে সংক্রমন বৃদ্ধিতে মেহেরপুর জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রেখেছে। মাঠে নেমেছে র্যাব, সেনাবাহিনী ও বিজিবি সদস্যরা।
গতকাল শুক্রবার দুপুরের দিকে পৌর এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে সেনা টহল অব্যাহত ছিলো। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যশোর সেনানিবাস ২৭ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারির ক্যাপ্টেন মাহিন চৌধুরী বিপুর নেতৃত্বে শহরের কোর্ট এলাকা থেকে শুরু করে শহরের প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে সচেতনতামূলক অভিযান চালানো হয়। এসময় অযথা যারা বাইরে ঘোরাফেরা করছিলেন তাদেরকে সতর্ক করে দেয়া হয়। একইসাথে অযথা ঘরের বাইরে না আসার জন্য সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
এদিকে এদিন সকালের দিকে ‘মাস্ক পরার অভ্যেস, করোনামুক্ত বাংলাদেশ’ এ সেøাগানকে সামনে রেখে মেহেরপুর পুলিশের একটি দল শহরের হোটেল বাজার মোড় এবং পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় জনসচেতনতামূলক প্রচারণা চালান। অযাথা ঘরের বাইরে বের না হওয়ার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়। করোনায় সংক্রমিত হওয়া থেকে বাঁচতে সকলকে যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান তারা।