মেহেরপুর অফিস: মেহেরপুর জেলায় আশঙ্কাজনকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে করোনা সংক্রমণ। প্রাণঘাতি করোনাভাইরাস থেকে মানুষকে রক্ষার জন্য বুধবার থেকে দুই সপ্তাহের লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির দীর্ঘ সভায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সভায় করোনা পরিস্থিতির সার্বিক দিক তুলে ধরেন সিভিল সার্জন ডা. নাছির উদ্দীন।
ভার্চুয়াল সভায় অংশ নেয়া সকল সদস্যর মতামতের ভিত্তিতে লকডাউনের ঘোষণা দেন জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মুনছুর আলম খান। এ বিষয়ে একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করছে জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসন লকডাউনের ঘোষণায় বলেন, সকল প্রকার চায়ের দোকান আগামী দুই সপ্তাহ সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে। কোনো স্থানে জমায়েত ও আড্ডা চলবে না। সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কাঁচা বাজার, মুদিদোকান ও খাদ্য দোকান খোলা থাকবে। হোটেল রেস্তোরা সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। তবে কেউ হোটেলে বসে খেতে পারবেন না। প্যাকেট করে খাবার সংগ্রহ করে নিয়ে যেতে হবে। তবে ওষুধের দোকান খোলা থাকবে সার্বক্ষণিক। এছাড়াও শপিংমল, মার্কেটসহ সকলপ্রকার দোকানপাট বন্ধ থাকবে। দরিদ্র মানুষের কাজ বন্ধ থাকায় দুই সপ্তাহ কোনো এনজিও ঋণের কিস্তি আদায় করতে পারবে না।
গণপরিবহনের বিষয়ে তিনি বলেন, আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার সকল যানবাহন বন্ধ থাকবে। পাখিভ্যান, ইজিবাইক, অটো, নছিমন, করিমনসহ এরকম কোনো বাহন চলবে না। রিকশায় একজন যাত্রী বহন করা যাবে। তবে মোটর সাইকেলে কোনো অবস্থায় চালক ছাড়া আরোহী নেয়া যাবে না। তবে জরুরী সেবায় নিয়োজিত যানবাহন চলবে। ঘর থেকে কেউ বের হতে হলে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। কেউ ঘর থেকে বের হলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে জরুরী কাজের সত্যতা নিশ্চিত করে আইন শৃংখলা বাহিনীর অনুমতি নিয়ে বাইরে যাওয়া যাবে। কৃষি শ্রমিক, নির্মাণ শ্রমিক ও অন্যান্য শ্রমিকরা কাজে যেতে পারবেন। তবে জরুরি নির্মাণ কাজ ছাড়া সকল নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকবে। সকলপ্রকার সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ করে তিনি বলেন, বিয়ে, জন্মদিন, সুন্নতে খাতনা ও রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ। আগামী দুই সপ্তাহ সকল প্রকার পার্ক ও বিনোদন কেন্দ্রগুলোও বন্ধ থাকবে। যারা প্রাইভেট ও কোচিং করাচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন জেলা প্রশাসক।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে জনসচেতনার অভাব রয়েছে। অনেকেই সবকিছু জেনেও মানছেন না। তাই জেলার প্রতিটি মসজিদে মাগরিবের নামাজের পর প্রচারণা চালানো হবে। এছাড়াও প্রতিটি ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়ে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক কমিটি গঠন করা হবে। যারা মানুষকে ঘরে রাখা, খাদ্য ও ওষুধ পৌঁছে দেয়াসহ করোনাকালীন বিভিন্ন সহযোগিতায় স্বেচ্ছায় নিয়োজিত থাকবেন।
সভায় অংশগ্রহণ করেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম রসুল, পুলিশ সুপার এসএম মুরাদ আলী, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাড. ইয়ারুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. ইব্রাহিম শাহীন, গাংনী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এএম খালেক, গাংনী পৌর মেয়র আহম্মেদ আলী, মেহেরপুর প্রেসক্লাব সভাপতি ফজলুল হক মন্টু, সাধারণ সম্পাদক আলামিন হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাজেদুল হক মানিক, বাগোয়ান ইউপি চেয়ারম্যান আয়ুব হোসেন, পিরোজপুর ইউপি চেয়ারম্যান বাবলু বিশ^াস, আমঝুপি ইউপি চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দীন চুন্নু ও সদর, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসারবৃন্দ ও করোনা প্রতিরোধ কমিটির অন্যান্য সদস্যবৃন্দ।
জেলা প্রশাসক বলেন, আমরা সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাই সকলে মিলে যদি এগুলো বাস্তবায়ন করি তাহলে অবশ্যই করোনার ভয়াবহতা এড়ানো সম্ভব হবে।
পূর্ববর্তী পোস্ট
চুয়াডাঙ্গার সড়াবাড়ীয়ায় বাড়ীর পাশে পুকুরে ডুবে এক শিশুর মৃত্যু
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ