মেহেরপুর-ঝিনাইদহসহ সারাদেশে বজ্রপাতে আরও ১৮ জনের মৃত্যু

দেশে ঢুকেছে বর্ষা : সারাদেশে বিস্তার লাভের সম্ভাবনা

স্টাফ রিপোর্টার: দেশের পূর্বাঞ্চলে মৌসুমী বায়ু তথা বর্ষা ঢুকেছে। উত্তরবঙ্গসহ দক্ষিণ-পশ্চিামেও বর্ষা বিস্তারলাভের অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করছে। অপরদিকে উত্তর বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। ফলে দেশে এবার বৃষ্টির ঘাটতি না থাকারই সম্ভবনা বেশি। মেহেরপুর-ঝিনাইদহসহ সারাদেশে বজ্রপাতে আরও ১৮জনের মৃত্যু হয়েছে। গত রোববার সন্ধ্যা থেকে গতকাল সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে এসব বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু চট্টগ্রাম, বরিশাল, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগ পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছে। দেশের অবশিষ্ঠাংশে মৌসুমী বায়ু আরও অগ্রসর হওয়ার জন্য আবহাওয়াগত পরিস্থিতি অনুকূলে রয়েছে। মৌসুমী বায়ু দেশের পূর্বাঞ্চলের উপর সক্রিয় এবং উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে এটি মাঝারী অবস্থায় বিরাজ করছে। ঢাকা ময়মনসিংহ, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের বেশিরভাগ জয়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। ফরিদপুর, রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ এবং কুষ্টিয়া অঞ্চল সমূহের উপর দিয়ে তাপ প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তা প্রশমিত হতে পারে। ৪৮ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, দেশের অবশিষ্টাংশে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু বিস্তার লাভ করবে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। সোমবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ঈশ^রর্দী ৩৭ দশমিক ৭ ও সর্বনি¤œ সন্দ্বীপে ২২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত মাইজদীকোর্টে ৫১ মিলিমিটার রেকর্ড করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গায় সোমবার ১৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। তবে দিনে ছিলো ঝলমলে রোদ। রাতেও মেঘের ঘণঘটা ছিলো চুয়াডাঙ্গাসহ পাশর্^বর্তী এলাকার আকাশে।
এদিকে, রাজশাহীতে মা-ছেলেসহ সারাদেশে ঝড়-বৃষ্টিতে বজ্রপাতে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত রোববার সন্ধ্যা থেকে গতকাল সোমবার বজ্রপাতে রাজশাহীতে চার জন, মানিকগঞ্জে চার জন, দিনাজপুরে দুই বোন, সাতক্ষীরায় দুই জন, ফরিদপুর, নওগাঁ, মেহেরপুর, পটুয়াখালী, ঝিনাইদহ ও মাদারীপুরে এক জন মারা যায়।
মুজিবনগর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মুজিবনগর উপজেলার মাঝপাড়ায় বজ্রপাতে উকিল (৩৪) নামে এক কৃষক মারা গেছে। গতকাল সোমবার বিকেলে বড় ভায়ের আম বাগানে আম কুড়াতে যেয়ে এ ঘটনা ঘটে। নিহত উকিল মুজিবনগর উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের মাঝপাড়া গ্রামের মৃত তেতুলির ছোট ছেলে। স্থানীয় ইউপি সদস্য সোহরাব হোসেন জানান, গ্রামের বাড়ীর পাশে বড় ভাই ইখতারের আম বাগানে উকিল আম কুড়াতে যেয়ে হটাৎ ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়। এসময় বজ্রপাতে তিনি আহত হয়। স্থানীয় লোকজন দেখতে পেয়ে মুজিবনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ নিয়ে যায়। এসময় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সন্ধ্যায় তার লাশ গ্রাম্য কবরস্থানে দাফন করা হয়।
কালীগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার মহেশ্বরচাঁদা গ্রামে বজ্রপাতে মোহাম্মদ আলী (৫৫) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। রোববার রাত সাড়ে ৯টার দিকে তার মৃত্যু হয়। নিহত মোহাম্মদ আলী উপজেলার মহেশ্বরচাঁদা গ্রামের হাজারিকা খাঁর ছেলে। নিহত মোহাম্মদ আলীর ভাইপো মিঠু মালিথা জানান, সন্ধ্যার দিকে মাঠ থেকে তিনটি গরু ছেড়ে বাড়িতে ফিরে আসেন মোহাম্মদ আলী। কিন্তু একটি গরু বাড়ি ফিরে না আসায় রাত ৯টার দিকে খুঁজতে বের হন তিনি। এরপর মহেশ্বরচাঁদা গ্রামের মাঠে বজ্রপাতে তিনি গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা তাকে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। কালীগঞ্জ থানার ওসি মুহা. মাহফুজুর রহমান মিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঘিওরে বজ্রপাতে চার জন নিহত এবং এক জন আহত হয়েছেন। মৃতরা হলেন উপজেলার চরবৈলট গ্রামের মুক্তার মিয়ার ছেলে ও মহাদেবপুর ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি ১ম বর্ষের ছাত্র শাহীন মিয়া (১৮), উপজেলার ঠাকুরকান্দি গ্রামের আর্শেদ মিয়ার ছেলে জুলহাস মিয়া জুলু (২৮), উপজেলা কুস্তা গ্রামের মো. লতিফ মিয়ার ছেলে মো. ইবাদুল (৩০) এবং দৌলতপুর উপজেলার বাচামারা ইউনিয়নের চরভাঙ্গা গ্রামের মহিষের গাড়িচালক গোলাম মোস্তফা (৪০)।
নওগাঁ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, সাপাহারে বজ্রপাতে কিশোর হোসেন আলীর (১৪) মৃত্যু হয়েছে। হোসেন আলী সাপাহার উপজেলার সাহাবাজপুর গ্রামের আব্দুল মজিদের ছেলে।
মাদারীপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, শিবচরে বজ্রপাতে রাকিব শেখ (১৮) নামে এক যুবক নিহত হয়েছে। গতকাল উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের দোতারা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। রাকিব দোতারা এলাকার মোলাকান্দী গ্রামের জহির উদ্দিন শেখের ছেলে।
রাজশাহী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, চারঘাট উপজেলার চককাপাসিয়া এলাকায় বজ্রপাতে দুই শিশুসহ চার জন নিহত ও এক জন আহত হয়েছেন। তারা হলেন আজম আলীর স্ত্রী মুক্তা বেগম (৩৫) ও ছেলে সোহান আলী (১০), কাবিল উদ্দিনের স্ত্রী আলেয়া বেগম (৫৫) ও জনির ছেলে পরশ আলী (১০)। গতকাল উপজেলার ইউসুফপুর ইউনিয়নের চককাপাসিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
দিনাজপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, হাকিমপুর উপজেলায় বৃষ্টির মধ্যে আম কুড়ানোর সময় গতকাল বজ্রপাতে আপন দুই বোনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। মৃতরা হলেন উপজেলার চেংগ্রামের মফিজ উদ্দীনের দুই মেয়ে মোছা. মোবাশ্বেরা খাতুন (৭) ও মোছা. মহসিনা খাতুন (১২)। মহসিনা ৬ষ্ঠ শ্রেণির এবং মোবাশ্বেরা ১ম শ্রেণির ছাত্রী।
পটুয়াখালী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, উপজেলার মজিদবাড়িয়া ইউনিয়নের তারাবুনিয়া গ্রামে গত রোববার বজ্রপাতে আব্দুল জলিল (৪০) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি ওই গ্রামের মৃত শেরজন হাওলাদারের ছেলে।
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বজ্রপাতে সাতক্ষীরায় দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ভোমরা ইউনিয়নের চৌবাড়িয়া গ্রামের মো. বজলুর রহমানের কন্যা মোছা. রাবেয়া খাতুন (২০) এবং তালা উপজেলার নগরঘাটা ইউনিয়নের হরিণখোলা গ্রামের আশুতোষ ম-লের ছেলে মত্স্যঘের ব্যবসায়ী কিশোর ম-ল (৩৭)।
ফরিদপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, চরভদ্রাসনে বজ্রপাতে সিয়াম প্রামানিক (১৩) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সিয়াম সদর ইউনিয়নের বালিয়াডাঙ্গী গ্রামের বাসিন্দা সৌদি প্রবাসী শামসু ম-লের একমাত্র ছেলে ও চরভদ্রাসন পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More