শিপরা ও তার ছেলে শুকুর আবারও গ্রেফতার : বিপুল মাদক উদ্ধার

চুয়াডাঙ্গার বুজরুকগড়গড়ি বুদ্ধিমানপাড়ায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযান
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় অভিযান চালিয়ে মাদক সম্রাজ্ঞী শিপরা বেগম ও তার ছেলে শুকুর আলীকে গ্রেফতার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। এসময় উদ্ধার করা হয়েছে এক হাজার ২৪৫ পিস ইয়াবা, এক বোতল দেশি মদ, ৫০০ গ্রাম গাঁজা ও নগদ ৪২ হাজার ৪৬০ টাকা। গ্রেফতারকৃত শিপরা চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার বুজরুকগড়গড়ি গ্রামের মৃত বাবুল রহমানের স্ত্রী। তার বিরুদ্ধে পঞ্চাশেরও বেশি মাদক মামলা রয়েছে। তিনি মাদক মামলায় এ যাবৎ শতাধিকবার গ্রেফতার হয়েছেন। তার ছেলে শুকুর আলীর বিরুদ্ধেও রয়েছে বেশ কয়েকটি মাদক মামলা। রোববার বিকেল ৩টায় সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেন জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মাহাব্বুর রহমান। তিনি জানান, দুপুরে মাদক কেনাবেচার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার বুদ্ধিমানপাড়ায় অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দুপুরে মাদক কেনা-বেচার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাব্বুর রহমানের নেতৃত্বে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার বুজরুকগড়গড়ি বুদ্ধিমানপাড়ায় অভিযান চালান উপ-পরিদর্শক সোহেল রানা, সহকারী উপ-পরিদর্শক আহসান কবীর, রজিবুল হক, সাজদার রহমানসহ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল। এসময় তার নিজ বাড়ি থেকে হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয় জেলার শীর্ষ মাদক স¤্রাজ্ঞী শিপরা বেগম (৬০) ও তার ছেলে শুকুর আলীকে (৪০)। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ১ হাজার ২৪৫ পিস ইয়াবা, ১ বোতল দেশি মদ, ৫০০ গ্রাম গাঁজা ও নগদ ৪২ হাজার ৪৬০ টাকা।
তিনি আরও জানান, গ্রেফতার শিপরা বেগমের বিরুদ্ধে পঞ্চাশেরও বেশি মাদক মামলা রয়েছে। তার ছেলে শুকুর আলীর বিরুদ্ধে রয়েছে বেশ কিছু মাদক মামলা। বিকেলে গ্রেফতারকৃতদের সদর থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় তাদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য আইনে একটি মামলা দায়ের করেছেন গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক সোহেল রানা। আজ সোমবার সকালে গ্রেফতারকৃত শিপ্রা বেগম ও তার ছেলে শুকুর আলীকে আদালতে তোলা হবে।
পুলিশ সূত্রে জানাগেছে, গ্রেফতারে সেঞ্চুরি করেছেন ৬০ বছর বয়সী নারী মাদককারবারি শিপরা বেগম। আর মামলায় করেছেন হাফসেঞ্চুরি। তার পরিবারের সবাই মাদক ব্যবসায়ী। পুলিশ অভিযানে গেলেই বাড়ির শৌচাগারের গোপন দরজা দিয়ে পালিয়ে যান তিনি। এলাকার কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করেন চুয়াডাঙ্গার শীর্ষ এই নারী মাদক কারবারি। প্রাণের ভয়ে তার বিরুদ্ধে মুখ খোলেন না কেউ। প্রথমে সীমান্ত এলাকায় বিভিন্ন পণ্য চোরাচালান করতেন শিপরা বেগম। পরে শুরু করেন মাদক ব্যবসা। এলাকায় পরিচিতি পান মাদক সম্রাজ্ঞী হিসেবে। পুলিশের প্রবেশ ঠেকাতে তার বাড়ির চারপাশে রয়েছে ১০ ফুট উঁচু দেয়াল। দেয়ালের ওপরে রয়েছে অসংখ্য কাঁচের টুকরো। তার বাড়ির পাশেই রয়েছে ফসলের মাঠ। অভিযানে তার ঘরের ভেতর গোপন দরজার সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। শৌচাগারের পেছনের এই গোপন দরজা দিয়ে বাড়ির পাশে মাঠের দিকে পালিয়ে যেতেন শিপরা ও তার পরিবারের অন্য সদস্যরা। সর্বপ্রথম তার বিরুদ্ধে মামলা হয় ১৯৯১ সালে। তারপর এই ৩০ বছরে ৫১টি মাদকের মামলা হয় তার বিরুদ্ধে। গ্রেফতার হন শতাধিকবার। বিভিন্ন মেয়াদে সাজাও হয়েছে চার মামলায়। তার পরিবারের সবাই মাদক ব্যবসায়ী। শিপ্রার স্বামী বাবুল মারা যান ২০১৫ সালে। তিনিও একাধিক মাদক মামলার আসামি ছিলেন। তার ছেলে শুকুর আলী পাঁচ মামলার আসামি। ২০১৫ সাল থেকে একটি মামলায় ৩২ বছরের সাজা হয় তার। এলাকার কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করেন চুয়াডাঙ্গার শীর্ষ এই নারী মাদককারবারী। প্রাণের ভয়ে তার বিরুদ্ধে মুখ খোলেন না কেউ। প্রতিবার গ্রেফতারের পর আদালত থেকে জামিন নিয়ে থাকেন শিপরা। জামিনে বাইরে এসে এলাকায় আবারও রাজত্ব শুরু করেন এই মাদক স¤্রাজ্ঞী।
জেলার শীর্ষ নারী মাদককারবারি শিপরা বেগমের নেটওয়ার্ক ধ্বংস করতে কাজ করা হচ্ছে বলে জানান চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More