স্বামী-স্ত্রী দুজনকে কুপিয়ে গলা কেটে নৃশংসভাবে খুন : দ্বিতীয় স্ত্রী আটক

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা গোবিন্দপুরের বহু জমির মালিক হত্যাকা- নিয়ে নানামুখি সন্দেহ : হাজরাহাটিতেও শোক

ঘটনাস্থল থেকে ফিরে হারুন রাজু/হানিফ মণ্ডল: চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার গোবিন্দপুর মালোপাড়ার ইয়ার আলী (৫৫) ও তার তৃতীয় স্ত্রী রোজিনা খাতুনকে (৪৩) নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও গলা কেটে খুন করা হয়েছে। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় স্বামী-স্ত্রী দুজনের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আটক করা হয়েছে নিহতের তালাকপ্রাপ্ত দ্বিতীয় স্ত্রী ফেরদৌসীসহ ৪জনকে। পুলিশ খুনের নেপথ্য উন্মোচনে তদন্ত শুরু করেছে। আজ সোমবার দুজনের মৃতদেহ চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতার মর্গে ময়নাতদন্ত করা হবে।

?

লাশ উদ্ধারের সময় রক্ত ও আলামত দেখে প্রাথমিকভাবে পুলিশের অনুমান, গতপরশু রাতে যেকোনো সময় ঘরের দরজা ভেঙে দুস্কৃতিরা ঘরে ঢুকে তাদের শয়নকক্ষেই পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে। তবে কেনো খুন করা হয়েছে তা বিষদে তদন্তের আগে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে রক্তমাখা একটি ধারালো অস্ত্র হাঁসুয়া উদ্ধার করা হয়েছে। স্থানীয়দের মধ্যে ইয়ার আলীর বিশাল সম্পদ সম্পত্তি নিয়ে যেমন আলোচনা শুরু হয়েছে, তেমনই উঠে এসেছে ইয়ার আলীর বহু বিবাহ প্রসঙ্গ।
পুলিশ ও এলাকাবাসীসূত্রে জানা গেছে, নিহত ইয়ার আলী পেশায় একজন কৃষক ছিলেন। প্রথম পক্ষের স্ত্রীর ৩ মেয়েই বিবাহিতা। দ্বিতীয় স্ত্রীর কোনো সন্তান নেই। ইয়ার আলী তার তৃতীয় স্ত্রী রোজিনা খাতুনকে নিয়ে গোবিন্দপুর গ্রামের নিজ বাড়িতে বসবাস করতেন। পাশেই আলাদা বাড়িতে বড় ভাই মৃত মসলেম আলী মোল্লা ও মেজ ভাই ইসলাম মোল্লার পরিবারের সদস্যরা বসবাস করেন। হাউলী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শাহা জামাল জানান, রোববার পিয়ার আলীর তার মেয়েকে শ্বশুরবাড়ি থেকে আনতে যাওয়ার কথা ছিলো। কেউ তাকে আনতে যাননি। বাড়িতে একাধিক বার ফোন দিলেও ফোন রিসিভ হয়নি। বার বার ফোন দিয়ে রিসিভ না হওয়ায় সন্ধ্যায় মেয়ে ছুটে আসেন পিতার বাড়ি। বাড়িতে ঘরের বন্ধ দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে চমকে ওঠেন। পান ঘরের দরজা ভাঙা, ভেতরে বাবা ও সৎমায়ের গলাকাটা লাশ পড়ে আছে। এসময় তার চিৎকারে চাচা-চাচাতো ভাইসহ প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। খবর পেয়ে দামুড়হুদা মডেল থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে।


আমাদের দামুড়হুদা অফিস স্থানীয়দের বরাত দিয়ে জানিয়েছেন, হাউলী ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের হিবাত মোল্লার ছিলো প্রচুর সহায়-সম্পত্তি। পৈত্রিক সম্পত্তির পাশাপাশি নিজেও জমি-জমা কিনেছিলেন ইয়ার আলী মোল্লা। সব মিলিয়ে প্রায় অর্ধশত বিঘা জমি-জমার মালিক ইয়ার মোল্লা। তার প্রথম স্ত্রী ফাতেমা ৩ মেয়ে রেখে মারা যান তেইশ বছর আগে। পরের বছরই তিনি ২য় বিয়ে করেন ফেরদৌসীকে। বিয়ের ১২-১৩ বছরের মাথায় ফেরদৌসীর সাথে বিচ্ছেদ হয়। এরপর একে একে ইয়ার মোল্লা বিয়ে করেন কয়েকটি। এর মধ্যে মহেশপুরের মাইলবেড়ের রেহেনাও একজন। তবে সেটাও বেশিদিন থাকেনি। বছর চারেক আগে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকা হাজরাহাটির মেয়ে রোজিনাকে বিয়ে করেন। রোজিনা যতো নম্বর স্ত্রীই হোক, তাকে তৃতীয় স্ত্রী হিসেবেই বিবেচনা করেন প্রতিবেশীরা। ইয়ার আলী ওই রোজিনাকে নিয়েই সংসার করে আসছিলেন। প্রতিবেশীরা জানান, রোববার সকাল থেকেই ইয়ার আলী মোল্লার বাড়ির প্রধান ফটকসহ ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ ছিলো। সারাদিনে ওই বাড়িতে কোনো প্রকার সাড়া শব্দ না পেয়ে প্রতিবেশীদের অনেকেই ধারণা করেন, বাড়ির লোকজন বোধ হয় তাদের আত্মীয় বাড়ি গেছেন। সন্ধ্যায় ছোট মেয়ে তার পিতার বাড়ি ফিরে পিতা ও সৎ মায়ের লাশ দেখে চিৎকার দিয়ে ওঠেন। উদ্ধার করা হয় লাশ। চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু তারেক, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (দামুড়হুদা সার্কেল) আবু রাসেল ও দামুড়হুদা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল খালেকসহ অনেকেই ছুটে যান ঘটনাস্থলে। ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে পুলিশ অফিসারদের অনেকেই অভিমত ব্যক্ত করতে গিয়ে অভিন্ন ভাষায় বলেন, এটা পরিকল্পিত হত্যাকা-। বিষদে তদন্ত শেষ না করা পর্যন্ত বিস্তারিত বলা সম্ভব নয়। পুলিশি জাল বিস্তার করা হয়েছে। হত্যা রহস্য উন্মোচনে মাঠে নেমেছে পুলিশ। যেহেতু ইয়ার আলী মোল্লার মেয়ে, ছেলে সন্তান নেই সেহেতু জমি জমা মেয়েদের নামে দেয়ার কথা চলছিলো। স্বামী স্ত্রী দুজন খুন হওয়ার পর এ প্রসঙ্গ যেমন উঠে এসেছে, তেমনই শরিকদেরও পড়তে হচ্ছে আলোচনার মুখে। তবে পুলিশের এক পদস্থ কর্মকর্তা বলেছেন, হত্যাকারী সে যে বা যারাই হোক তাদের ধরে আইনে সোপর্দ করা হবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More