হিমেল হাওয়ায় তীব্র শীত : মঙ্গলবার থেকে শৈত্যপ্রবাহ
বঙ্গোপসাগরের অবস্থানরত লঘুচাপটি ঘণীভূত হয়ে নিম্নচাপে পরিণত
চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন স্থানে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ অব্যাহত
স্টাফ রিপোর্টার: শীতে কাঁপছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলা চুয়াডাঙ্গা। এ জেলার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শীতের তীব্রতায় বিপাকে পড়েছে এ জেলার দরিদ্র খেটে খাওয়া মানুষরা। গতকাল শুক্রবার জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রকিবুল হাসান এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, শুক্রবার সকাল ৯টায় জেলার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতার পরিমাণ ছিলো ৮৫ শতাংশ। আগামীকাল তাপমাত্রা আরও কমতে পারে। এদিকে, দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরের মধ্যাঞ্চল এবং তার পাশের এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি ঘণীভূত হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। এটি বর্তমানে দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও এর পাশের এলাকায় অবস্থান করছে। এ দিকে সারা দেশে রাত এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বদলগাছীতে ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এ ছাড়াও রাজশাহী ১০ দশমিক ৫, ঈশ্বরদীতে ১০ দশমিক ৭, চুয়াডাঙ্গায় ১০ দশমিক ৮ ও রাজারহাট ১১ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। তাপমাত্রা কম থাকায় এসব এলাকায় শীতের তীব্রতা বাড়ছে। ভোর ও মধ্য রাতে কুয়াশাও পড়ছে।
এদিকে বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৭ ডিগ্রি, রাজশাহীতে ১০ দশমিক ৫, রংপুরে ১২ দশমিক ৮, ময়মনসিংহে ১৪ দশমিক ৫, সিলেটে ১৫ দশমিক ৯, চট্টগ্রামে ১৬ দশমিক ৮, খুলনায় ১৪ দশমিক ৪ ও বরিশালে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা টেকনাফে ২৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
পরবর্তী তিন দিনে আবহাওয়ার অবস্থায় বলা হয়েছে, এ সময়ের শেষের দিকে তাপমাত্রা বাড়তে পারে। ঢাকায় গতকাল উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৫ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে বাতাস প্রবাহিত হয়েছে। সকালে ঢাকায় বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা ছিল ৭২ শতাংশ।
এদিকে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের দেখা মিললেও মৃদু হিমেল বাতাসের কারণে কমেনি ঠা-ার মাত্রা। ফলে দুর্ভোগ পোয়াচ্ছে এ এলাকার মানুষ। তীব্র শীত ও ঠা-া বাতাস মিলিয়ে ব্যাহত হচ্ছে সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন এ এলাকার খেটে খাওয়া মানুষ। এলাকার বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে ও চায়ের দোকানে শীত নিবারণের চেষ্টায় খড়কুটো জ্বালিয়ে উত্তাপ নিতে দেখা গেছে নিম্ন আয়ের মানুষদের। তীব্র শীতে প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না। শীত থেকে বাঁচতে সরকারি বিভিন্ন সাহায্য সহযোগিতা চেয়েছেন এসব সাধারণ মানুষ। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মাহবুবুর রহমান মিলন বলেন, তীব্র শীতে শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়াসহ শীতজনিত বিভিন্ন রোগে হাসপাতালের আউটডোরে প্রচুর রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। এছাড়া প্রতিদিন তিন থেকে চারশ শিশু আউটডোরে চিকিৎসা নিচ্ছে। শীতজনিত কারণে নিউমোনিয়া রোগী সংখ্যাও বাড়ছে।
রিকশাচালক মাসুম বলেন, পেটের দায়ে বাড়ি থেকে বের হলেও যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। হালকা বাতাসে পুরো শরীর কাঁপছে। এ রকম আরও কয়েকদিন হলে সকালে কাজে বের হওয়া যাবে না।
ইউসুফ নামের এক দিনমজুর বলেন, শীতের কারণে শুক্রবার ভোরে কাজে যেতে পারিনি। এভাবে ঠা-া পড়লে কাজে যাওয়া সম্ভব হবে না। না খেয়ে দিন পাড় করতে হবে।
সাজু নামের একজন হোটেল কর্মচারী বলেন, প্রতিদিন সকালে নাশতার জন্য হোটেলে প্রচুর চাপ থাকে। এজন্য ফজরের আজানের পর থেকেই কাজ করতে হয়। ভোরে পানিতে হাত দিলে মনে হয় অবস হয়ে যাচ্ছে। আঙুলগুলো নাড়ানো যাচ্ছে না। তারপরও পেটের দায়ে কাজ করছি। আজ শনিবার থেকে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়বে, তারপর আগামী মঙ্গলবার থেকে ফের শৈত্যপ্রবাহ শুরু হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গতকাল আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরের মধ্যাঞ্চল এবং তার পাশের এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি ঘণীভূত হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। এটি বর্তমানে দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও এর পাশের এলাকায় অবস্থান করছে। এর বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ বিহার ও এর পাশের এলাকায় অবস্থান করছে। আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ বলেন, লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হলেও আমাদের দেশে খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না। কুয়াশাচ্ছন্ন থাকায় শুক্রবারও দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে। পরশু থেকে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়বে।
ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, আলমডাঙ্গার ভোদুয়া গ্রামের, জমিদার হাজী বাখের আলী মিঞার, উত্তরসূরী এম এ মান্নান রতন জমিদারের উদ্যোগে ৪ শত শীতার্থ লোকের মাঝে কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল সকাল সাড়ে ৮টার সময় আলমডাঙ্গা উপজেলার জামজামি ইউনিয়নের ভোদুয়া গ্রামে আমেরিকা প্রবাসী এমএ মান্নান রতন জমিদার তার নিজ গ্রামে উপহার স্বরূপ গ্রামের সকল গরিব দুঃখী, শীতার্ত অসহায় ও জনসাধারণের মাঝে ৪ শত পরিবারের মধ্যে শীতবস্ত্র হিসেবে ১টি করে কম্বল বিতরণ করেন।
কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জামজামি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন বাবলু ও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঐশিকা সংস্থার শাকা হিশাব রক্ষক শাজ্জাত হোসেন, কয়েন, শাহা, ওযাইদুল, হাজি নেকবার আলী ম-ল, মিন্টু আলী শাহা, মুকল মাস্টার, মন্টু শাহা, আব্দুর রশিদ, জহুরুল চৌধুরী, রবিউল ইসলাম, ছোরাব আলী, মুনজিদুর রহমান, অনুঠানটি পরিচালনা করেন সাঈদ মিয়া।
অপরদিকে, দামুড়হুদার কার্পাসডাঙ্গায় আমেনা নজির ফাউন্ডেশনের পক্ষ হতে দুস্থদের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টায় ডা. নজির আহমেদ কমপ্লেক্স ভবন প্রাঙ্গণে দরিদ্র নারী-পুরুষের হাতে এই শীতবস্ত্র তুলে দেয়া হয়। শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে ফাউন্ডেশনের পরিচালক হাজি আমিরুজ্জামান বাচ্চুর সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন হাজি ওয়াহিদুজ্জামান, হাজি ডা. হাসানুজ্জামান, হাজি আবুল কাশেম, তারিকুজ্জামান প্রমুখ। বিতরণ কালে বলেন, প্রতি শীত মরসুমে দুস্থদের মাঝে কম্বল বিতরণ ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক ও মানবিক কর্মকা-ে ভূমিকা রেখে চলেছে আমেনা নজির ফাউন্ডেশন। ইতিমধ্যে তীব্র শীত শুরু হয়েছে। অনেক অসহায় মানুষ শীত নিবারণ করতে পারছেন না। সুবিধাবঞ্চিত ওই সকল অসহায়দের পাশে এসে দাঁড়ানোর জন্য এলাকার বিত্তশালীদের এগিয়ে আসার আহবান জানান। বিতরণ অনুষ্ঠানে কার্পাসডাঙ্গা ও কুড়ুলগাছি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের ৬০০ জন দরিদ্র পরিবারের মাঝে এ কম্বল বিতরণ করা হয়। ভিক্ষুক, ছিন্নমূল, ভূমিহীন, অতিদরিদ্র ও দরিদ্র এই পাঁচ ক্যাটাগরিতে ভাগ করে সবার মধ্যে কম্বল বিতরণ করা হয়।