কাল টিকাদান কর্মসূচি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী; অনলাইনে নিবন্ধন ছাড়া টিকা নয় : হেলথ ডিজি

স্টাফ রিপোর্টার: ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে সরকারিভাবে কেনা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা টিকার প্রথম চালানের ৫০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন দেশে পৌঁছেছে। এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিশেষ ফ্লাইট টিকার চালান নিয়ে গতকাল সোমবার সকালে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। ভ্যাকসিন বর্তমানে বাংলাদেশে সিরাম ইনস্টিটিউটের ‘এক্সক্লুসিভ ডিস্ট্রিবিউটর’ বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের টঙ্গীর ওয়্যারহাউজে রাখা হয়েছে। সেখান থেকে স্বাস্থ্য বিভাগের তালিকা অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হবে। তবে আগামীকাল বুধবার বিকাল সাড়ে ৩টায় রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে একজন নার্সকে টিকা দেয়ার মাধ্যমে করোনা ভ্যাকসিন কর্মসূচির উদ্বোধন করা হবে। আনুষ্ঠানিকভাবে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওইদিন মোট ২০ জনকে টিকা দেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী প্রথম পাঁচ জনের টিকা দেয়ার সময় ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত থাকবেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, ‘উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি সংক্ষিপ্ত হবে। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠান উদ্বোধন করবেন, বক্তব্য দেবেন শুধু স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ভ্যাকসিন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সুরক্ষাতে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন ছাড়া কোনো টিকা দেয়া হবে না। বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান পাপন এমপি বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের বলেন, সিরাম ইনস্টিটিউটের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ৫০ লাখ ডোজ টিকা গ্রহণ করলাম। এটা এখন টঙ্গীতে আমাদের নতুন ওয়্যারহাউজে কোল্ড চেইন মেনটেইন করে রাখা হবে। ওয়্যারহাউজ থেকে প্রতিটি ব্যাচের টিকার নমুনা সরকারের ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হবে। পরীক্ষার পর সবকিছু ঠিক থাকলে ছাড়পত্র দেয়া হবে। ছাড়পত্র পাওয়ার পর টিকাগুলো ৬৪টি জেলায় পৌঁছে দেবে বেক্সিমকো। আগামী চার থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে স্বাস্থ্য বিভাগ যেখানে পৌঁছে দিতে বলেছে আমরা সেখানে পৌঁছে দেব।

নাজমুল হাসান পাপন আরও জানান, টিকার প্রতিটি কার্টুনে একটি করে ইলেকট্রনিক ডিভাইস রাখা আছে। এই ডিভাইস প্রতি ১৫ মিনিট পর পর সিরাম ইনস্টিটিউটে তাপমাত্রার হালনাগাদ তথ্য পাঠাচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা টিকার কার্টনগুলো দেখবেন, এরপর খোলা হবে। বেক্সিমকো ফার্মার এমডি বলেন, পুরো সময় ওই টিকা দুই থেকে আট ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখার কথা। আমাদের দেখাতে হবে পুনে থেকে মুম্বাই, তারপর ঢাকা হয়ে আমাদের ওয়্যারহাউজ এবং সেখান থেকে জেলা পর্যায়ে পৌঁছাতে কোথাও কোনো কোল্ড চেইন ব্রেক হয়নি। যদি কোনো ড্যামেজ, শর্টেজ বা কোনো রকমের সমস্যা থাকে, তাহলে আমরা তা চেইঞ্জ করে দেবো। টিকা পৌঁছে দেয়ার আগ পর্যন্ত কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হলে তার সব দায়দায়িত্ব বেক্সিমকোর। বেক্সিমকোর কর্মকর্তাদের পাশাপাশি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন।

করোনা ভাইরাসের টিকা পেতে সবাইকে অনলাইনে নিবন্ধন করতে হবে। আগ্রহীরা সুরক্ষা প্ল্যাটফরমের ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনে (www.surokkha.gov.bd) গিয়ে অথবা মোবাইলে অ্যাপ ডাউনলোড করে নিবন্ধন করতে পারবেন। অ্যাপটি ফ্রি ডাউনলোড করা যাবে। নিবন্ধনের পর সেখান থেকেই জানা যাবে, কবে কখন টিকা নিতে হবে। ১৮ বছরের কম বয়সিরা টিকার জন্য নিবন্ধন করতে পারবেন না। কারণ অপ্রাপ্তবয়স্কদের ওপর অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হয়নি। এই অ্যাপ্লিকেশনে পরিচয় যাচাইয়ে ১৮টি শ্রেণি করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি শ্রেণি সিলেক্ট করার পর জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ও জন্মতারিখ দিয়ে নিবন্ধন শুরু করতে হবে। স্বয়ংক্রিয়ভাবে জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর যাচাই হবে। সব ঠিক থাকলে স্ক্রিনে নিবন্ধনকারীর নাম দেখানো হবে বাংলা ও ইংরেজিতে। সেখানে একটি ঘরে মোবাইল ফোন নম্বর চাওয়া হবে। পরবর্তী সময় ওই নম্বরেই নিবন্ধনকারীকে টিকাদান সংক্রান্ত তথ্য এসএমএস করা হবে।

মোবাইল নম্বর দেয়ার পর একটি ঘর পূরণ করতে হবে, যেখানে জানাতে হবে নিবন্ধনকারীর দীর্ঘমেয়াদি রোগ বা কোনো মরবিডিটি আছে কিনা, থাকলে কোন কোন রোগ আছে। আরেকটি ঘরে নিবন্ধনকারীর পেশা জানাতে হবে এবং তিনি কোভিড-১৯ সংক্রান্ত কাজে সরাসরি জড়িত কি না তাও জানাতে হবে। এরপর বর্তমান ঠিকানা ও কোন কেন্দ্র থেকে টিকা নিতে ইচ্ছুক তা সিলেক্ট করতে হবে। সব শেষে ফরম সেইভ করলে নিবন্ধনকারীর দেয়া মোবাইল নম্বরে পাঠানো হবে ওটিপি। সেই ওটিপি কোড দিয়ে ‘স্ট্যাটাস যাচাই’ বাটনে ক্লিক করলে নিবন্ধনের কাজ শেষ হবে। নিবন্ধন সম্পন্ন হলে টিকার প্রথম ডোজের তারিখ ও কেন্দ্রের নাম এসএমএস-এর মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে। এরপর জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, জন্মতারিখ দিয়ে লগ ইন করে এসএমএস-এর মাধ্যমে পাওয়া ওটিপি কোড দিয়ে টিকা কার্ড ডাউনলোড করতে হবে। এসএমএসে জানিয়ে দেয়া তারিখে টিকা কার্ড ও জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে নির্ধারিত টিকাদান কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে কোভিড-১৯-এর দুই ডোজ টিকা নিতে হবে। তারপর সুরক্ষা প্ল্যাটফরমের ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন থেকে ভ্যাকসিন প্রাপ্তির সনদ সংগ্রহ করা যাবে।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More