চুয়াডাঙ্গায় ভ্যাপসা গরমের পর স্বস্তির বৃষ্টি : সাগরে তৈরি হচ্ছে ঘুর্ণিঝড় : দেশে বজ্রপাতে নিহত ১৭

স্টাফ রিপোর্টার: মঙ্গলবার সারাদিন চুয়াডাঙ্গা যশোরসহ পার্শ্ববর্তি এলাকায় ছিলো তীব্র খরা। বাতাসে ছিলো লু হাওয়া। অসহনীয় গরমে প্রাণীকূলককে হাসফাস করতে হয়েছে। তবে সন্ধ্যার মেঘের আনাগোনার সাথে সাথে ঝড়ো বাতাসে পরিবেশ অনেকটাই স্বস্তিকর হয়ে ওঠে। রাত সোয়া ১১টার দিকে চুয়াডাঙ্গায় স্বস্তির বৃষ্টি নামে। দীর্ঘ সময় ধরে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির সাথ ছিলো মেঘ গুড়গুড়। অপরদিকে বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের সৃষ্টি হয়েছে। এটা পূর্ণ শক্তি নিয়ে ঘুর্ণিঝড়ে রূপ নেবে কিনা তা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে স্পষ্ট হওয়া যাবে। এ ঝড়ের নাম দেয়া হয়েছে যশ। পূর্ণ শক্তি নিয়ে আঘাত হানলে তা উপকূলে পৌছুতে পারে ২৪/ ২৫ মে। অপরদিকে এবার জুনের প্রথম দিকেই বর্ষা ঢুকতে পারে বলেও ভারতের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে। দেশের কয়েকটি জেলায় বজ্রপাতে মঙ্গলমার মারা গেছেন ১৭ জন।
দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা মঙ্গলবারও যশোরে ৩৯ সর্বনিনিম্ব, ময়মনসিংহে ২২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ ৩৭ দশমিক ৪ ও সর্বনিম্ন ২৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদফতর। উপরের তাপমাত্রা কিছুটা কম হলেও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা উপরে উঠে আসায় অস্বস্তির মাত্রা বেড়েছে। বিশেষ করে বৃষ্টির পর সূর্য্যরে প্রখরতার কারণে ভূ পরিম-লে বেড়েছে বাস্পর মাত্রা। এ কারণেই বাতাস অস্বস্তিকর হয়ে উঠেছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েঢছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। যশোর ও কুষ্টিয়া অঞ্চলসহ ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট বিভাগের কিছ’ কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, সীতাকু-, রাঙ্গামাটি, কুমিল্লা, চাঁদপুর, ফেনী, নোয়াখালী, রাজশাহী ও পাবনা অঞ্চলসহ খুলনা ও বরিশাল বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারী ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। ৪৮ ঘণ্টায় আবহাওর সামান্য পরিবর্তন হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। ৫ দিনের শেষেলদিকে বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপের সৃষ্টি হতে পারে। অপরদিকে ভারতের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বঙ্গোপসাগরে ঘুর্ণিঝড় তৈরি হচ্ছে। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে স্পষ্ট হওয়া যাবে এটা পূর্ণ শক্তি সঞ্চয় করে শক্তিশালী ঘুর্ণিঝড়ে রূপ নেবে কিনা। নিলে আগামী ২৪/২৫ মে উপকূল আঘাত হানতে পারে। সুন্দরবন হয়ে বাংলাদেশেও ঢুকতে পারে। অপরদিকে কেরলা হয়ে যে মৌসুমি মেঘ ঢোকে তা এবার জুনের প্রথম দিকেই ঢুকতে পারে। দেশের বিভিন্ন স্থানে বজ্রপাতে ১৭ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে নেত্রকোনায় আটজন, ফরিদপুরে চারজন, মানিকগঞ্জে দু’জন এবং ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জে প্রাণ হারিয়েছেন একজন করে। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন ১৩ জন।
নেত্রকোনার খালিয়াজুরী, মদন, পূর্বধলা ও কেন্দুয়ায় বজ্রপাতে মারা গেছেন আটজন। আহত হয়েছেন ৯ জন। এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন উপজেলায় মঙ্গলবার বেলা পৌনে ৩টার দিকে শুরু হয় বৃষ্টি। কেন্দুয়া উপজেলায় বৃষ্টির মধ্যে মাঠে কাজ করার সময় বজ্রপাতে কৃষক ফজলু মিয়া ও বাচ্চু খান নিহত হন। মদন উপজেলায় নিহত হন পশ্চিম ফতেপুর গ্রামের মৃত আবদুল কাদিরের ছেলে হাফেজ মোহাম্মদ শরীফ (১৮), মৃত আবদুল মন্নাফের ছেলে মাওলানা আতাবুর রহমান (২১), মাঘান ইউনিয়নের ঘাটুয়া গ্রামের মঞ্জিল হকের ছেলে মনির হোসেন (২৭)। বজ্রপাতে পশ্চিম ফতেপুর গ্রামের রবিন মিয়া, রুস্তমান মিয়া, তিয়শ্রী ইউনিয়নের বাস্তা গ্রামের ভিক্ষু মিয়ার স্ত্রী কণা আক্তার ও চন্দন মিয়ার স্ত্রী সুরমা আক্তার আহত হন। তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেপে ভর্তি করা হয়েছে। খালিয়াজুরী উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামের খেলু ফকিরের ছেলে কৃষক অছেক মিয়া (৩২), আমির সরকারের ছেলে কৃষক বিপুল মিয়া (২৮) বজ্রপাতে নিহত হন। তারা ওই এলাকার বরবরিয়া হাওরে কাজ করছিলেন। এ সময় আহত হয়েছেন অন্তত পাঁচজন। একই সময়ে পূর্বধলার ধলামূলগাঁও ইউনিয়নের পাটুরী গ্রামের ইসহাক ফকিরের ছেলে জুনায়েদ (১১) বজ্রপাতে মারা যায়। নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক কাজী মো. আবদুর রহমান জানান, নিহত প্রত্যেকের ১৫ হাজার এবং আহত প্রত্যেককে তিন হাজার টাকা সহায়তা দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
ফরিদপুরে বজ্রপাতে নারীসহ চারজন নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার বিকেলে ফরিদপুর পৌরসভার পশ্চিম গঙ্গাবর্দী, মোল্লাডাঙ্গী মহল্লা এবং নর্থচ্যানেল ইউনিয়ন ও মধুখালীতে বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। মোল্লাডাঙ্গী মহল্লায় নিহতের নাম আনোয়ারা বেগম (৪৫)। তিনি স্বামী ও ছেলের সঙ্গে মাঠ থেকে ধান নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তিনি ওই গ্রামের কৃষক কাবুল শেখের স্ত্রী। পশ্চিম গঙ্গাবর্দী এলাকায় মাঠ থেকে ধান নিয়ে ফেরার পথে বজ্রপাতে মৃত্যু হয় কৃষক কবির মোল্লার (৪৮)। এ ছাড়া সদর উপজেলার নর্থচ্যানেল ইউনিয়নে দুলাল খান নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। মধুখালী উপজেলার চাঁদপুরে মারা গেছেন কবির শেখ (৪০) নামে এক কৃষক। ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানার ওসি এমএ জলিল এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলায় মঙ্গলবার দুপুরে বজ্রপাতে আতিকুল ইসলাম (১৭) নামে এক কিশোর নিহত হয়েছে। সে উপজেলার খালিশাজাহান গ্রামের আমজত আলীর ছেলে। বৃষ্টির মধ্যে বন্ধুদের নিয়ে বাড়ির পাশে ফুটবল খেলতে নেমেছিল আতিকুল। বজ্রপাতে আহত হয়েছেন কবির নামে আরেক যুবক।
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে বাড়ির উঠানে কাজ করার সময় বজ্রপাতে কহিনুর বেগম (৩৬) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় উপজেলার আজগানা ইউনিয়নের চিতেশ্বরী টান পলাশতলী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। তিনি ওই গ্রামের লতিফ মিয়ার স্ত্রী। মঙ্গলবার আজগানা ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আলেয়া ভূইয়া এ তথ্য জানিয়েছেন।
মানিকগঞ্জে মঙ্গলবার বিকেলে বজ্রপাতে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন তিনজন। নিহতরা হলেন ঘিওর উপজেলার বড়টিয়া গ্রামের কৃষি শ্রমিক আজমত আলী (৫০) এবং সদর উপজেলা গিলন্ড গ্রামের শিক্ষার্থী আসিফ মোল্লা (১৬)। মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন জানান, আজমত আলী মানিকগঞ্জ পৌর এলাকায় পৌলি গ্রামে আব্দুল হকের বাড়িতে দিনমজুর হিসেবে কাজ করতেন। বিকেলে ক্ষেত থেকে ধান নিয়ে ফেরার পথে বজ্রপাতে মারা যান। আর শিশু আসিফ মাঠে ঘুড়ি ওড়াতে গিয়ে বজ্রপাতের শিকার হয়। আহত হয় তার দুই বন্ধু আবদুল্লাহ ও অনিক। তাদের মধ্যে অনিককে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়া হয়েছে। সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলায় সোমবার বিকেলে ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে মাঠ থেকে গরু আনতে গিয়ে বজ্রপাতে হালিমা খাতুন নামে এক গৃহবধূ নিহত হয়েছেন। তিনি উপজেলার নাড়া তেঘরী গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনের স্ত্রী।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More