সাংবাদিককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করা মামলার এজাহার নামীয় ৩ আসামি গ্রেফতার
রিমান্ডে চেয়েছে পুলিশ
স্টাফ রিপোর্টার: ধারালো যে অস্ত্র দিয়ে সাংবাদিক সোহেল রানা ডালিমকে ক্ষতবিক্ষত করেছে সেই অস্ত্রটি গতরাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত উদ্ধার না হলেও এজাহারনামীয় মুল আসামি রাজুসহ তিনজনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ঘটনার পরপরই রাজুকে এবং গতকাল তার সহযোগি জান্নাত হোসেন ও মোমিনকে গ্রেফতার করা হয়। গতকালই তিনজনকে আদালতে সোপর্দ করে তিন দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়েছে। অপরদিকে সাংবাদিক সোহেল রানা ডালিমের ওপর নৃশংস হামলার প্রতিবাদে ও করনীয় নির্ধারণে গতকাল সকাল ১১টায় জেলার সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ সভায় মিলিত হন। পরে সদর থানার অফিসার ইনচার্জের সাথে মতবিনিময় করতে গেলে তিনি যতো দ্রুত সম্ভব আসামিদের গ্রেফতার করে আইনে সোপর্দ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে হামলাকারীরা যে ঘটনা ঘটিয়েছে তা নিন্দা জানানোর ভাষা আমার জানা নেই। তবে চুয়াডাঙ্গায় আইনভঙ্গকারী সে যেই হোক কোনভাবেই তার পার পাওয়ার সুযোগ নেই।
![](https://www.mathabhanga.com/wp-content/uploads/2021/08/FB_IMG_1629222126213-300x169.jpg)
গতপরশু সোমবার সন্ধ্যার পর চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের ইমার্জেন্সি সড়কের আব্দুল্লাহ সিটির সাতভাইপুকুর প্রান্তের রাস্তায় একটি মোটরসাইকেলের পেছনে ধাক্কা লাগাকে কেন্দ্র করে বাগবিত- হয়। সাংবাদিকের মোটরসাইকেলের চাবি ছিনিয়ে নেয়ার পাশাপাশি উগ্র আচরণ করে কয়েক যুবক। সাংবাদিক আপত্তিকর উক্তির প্রতিবাদ জানালে পেছন থেকে ধারালো অস্ত্রের প্যোচে রকাক্ত জখম করে তারা। হাতে থাকা হেলমেট দিয়ে সাংবাদিক প্রাণরক্ষার চেষ্টা করে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ঘটনাস্থল থেকে কোনরকম প্রাণ বাঁচিয়ে সাংবাদিক অটোযোগে পৌছুন সদর হাসপাতালে। হাসপাতালের জরুরী বিভাগে যখন চিকিৎসক তার শরীরে সেলাইসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিচ্ছিলেন তখন ওইদলভুক্ত যুবকদল সেখানে হামলা চালায়। সাংবাদিক সোহেল রানা ডালিম দৌড়ে প্রাণ রক্ষার চেষ্টা করতে থাকেন। পিছু ধাওয়া করে সাংবাদিকের বুকে পেটে হাতে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করে। পরে তাকে উদ্ধার করে আবারও নেয়া হয় হাসপাতালের জরুরী বিভাগে। দেয়া হয় চিকিৎসা। হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনার পরপরই হাসপাতাল এলাকা থেকে আটক করা হয় রাজু আহমদেকে (২৪)। সাংবাদিকের উপর হামলার খবর পেয়ে পুলিশের পদস্থ কর্মর্কতারাসহ সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ হাসপাতালে পৌছুন। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১১টায় সময়ের সমিকরণ কার্যালয়ে মিলিত হন জেলার সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ। চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক রাজীব হাসান কচি, বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা জেলা ইউনিটের সাধারন সম্পাদক বিপুল আশরাফ, সাবেক সভাপতি জিল্লুর রহমান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রফিক রহমান, প্রবীণ সাংবাদিক এমএম আলাউদ্দীন, মানিক আকবর, জান্নাতুল আউলিয়া নিশিসহ অনেকে। সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ সাংবাদিকের ওপর নৃশংস এবং হাসপাতালে গিয়ে বর্বচিত হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। ঘটনার পর পরই মুল অভিযুক্তকে পুলিশ আটক করলেও বাকি আসামিদের গ্রেফতারের বিষয় নিয়ে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ সদর থানার অফিসার ইনচার্জের সাথে মতবিনিময়ে মিলিত হন। থানার ওসি আবু জিহাদ খান বলেন, মোটরসাইকেলের সাথে মোটরসাইকেলের ধাক্কা নিয়ে যে একজনকে খুনের উদ্দেশে ধারালো অস্ত্র দিয়ে পেছন থেকে আঘাত করার পর হাসপাতালে গিয়ে আবারও হামলা চালিয়ে যে ধৃষ্ঠতা দেখিয়েচে হামলাকারীরা তার নিন্দা জানানোর ভাষা আমরা হারিয়ে ফেলেছি। হাসপাতালে চিকিৎসারত একজনের ওপর হামলা চালানোর বর্ণনা শুনে অবাক হয়েছি। কোনভাবেই আসামিরা পার পাবে না। যতো দ্রুত সম্ভব বাকি আসামিদের গ্রেফতার করা হবে। ঘটনার ২৪ ঘণ্টার আগেই এজাহারনামীয়দের গ্রেফতারের সর্বাত্মক চেষ্টা থাকবে। সদর থানার অফিসার ইনচার্জের এ প্রতিশ্রুতির পর সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ অপেক্ষার প্রহর গুণতে থাকেন। বিকেলেই জানা যায়, এজাহার নামীয় অপর দু আসামিকেও গ্রেফাতার করা হয়েছে। এজাহার নামীয়দের দ্রুত গ্রেফতার করায় সাংবাদিকমহল সন্তোষ প্রকাশ করে সদর থানা পুলিশসহ পুলিশ সুপারকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।
সাংবাদিক সোহেল রানা রাজুর ভাই আরিফ হোসেন বাদি হয়ে দায়ের করা মামলায় এজাহারভুক্ত গ্রেফতারকৃত আসামিরা হলো- চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার ইমার্জেন্সি রোডের মৃত আব্দুল লতিফের ছেলে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক স্কুল ও ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রাজু আহমেদ (২৪), ফেরিঘাট রোডের আব্দুস সাত্তারের ছেলে মোহাম্মদ জান্নাত হোসেন (২৩) ও একই এলাকার নজরুল লতিফের ছেলে আল মমিন (২২)। গতকালই এদেরকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। আদালত তিনজনকেই জেল হাজতে প্রেরনের আদেশ দেন। পুলিশ ৩ জনকে ৩ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়েছেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই হাদিউজ্জামান বলেছেন, যে অস্ত্র দিয়ে সাংবাদিক ডালিমের ওপর হামলা চালানো হয়েছে ওই অস্ত্র উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। তদন্তের স্বার্থে তিনজনকেই রিমান্ডে নেয়ার জন্য আবেদন করেছি। তবে কবে নাগাদ শোনানী হবে তা নিশ্চিত নই। এদিকে সাংবাদিক ডালিমকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাখা হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুরের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদসভা করা হয়েছে বলে আমাদের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন। প্রসঙ্গত, ডালিম ব্রিটিশ আমেরিকা টোবাকাতেও কর্মরত।