পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট দেয়ার মতো কাগজ নেই চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট দেয়ার মতো কোনো কাগজ নেই। একসপ্তাহ যাবত সরবরাহ না থাকায় সঙ্কট পৌঁছেছে চরমে। এতে নানা বিড়ম্বনায় পড়েছেন চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা। প্যাথলজি বিভাগ থেকে একটি রিপোর্ট ফরম ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে রোগী বা স্বজনদের হাতে। রিপোর্ট নিতে হাতে ওই ফরম বা প্যাড ফটোকপি (ছাপিয়ে) করে নিয়ে আসতে হবে। এতে রোগী ফেলে রেখেই ফটোকপির দোকান খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন স্বজনরা। এরপর সেই ফরম এ পরীক্ষার রিপোর্ট তৈরি করে দেয়া হচ্ছে রোগীদের। কোনো রোগীর সাথে স্বজন না থাকায় নারী ও বয়োবৃদ্ধরা পড়ছেন চরম বিপাকে।
তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, সদর হাসপাতালে নিজস্ব ফটোকপির ব্যবস্থা আছে। রোগীদের দিয়ে ফটোকপি করানো দুঃখজনক। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে পরীক্ষা করতে আসার পর রোগী ও স্বজনদের হাতে তিন পৃষ্ঠার রিপোর্ট ফরম (প্যাড) ধরিয়ে ফটোকপি করে নিয়ে আনতে বলা হচ্ছে। এতে রোগীর স্বজনরা দোকান খুঁজে ফটোকপি করে নিয়ে আসছে। আবার স্বজন না থাকায় অসুস্থ নারী ও বয়োবৃদ্ধ রোগীরা চরম হতাশা প্রকাশ করেন। তারা কারোর মাধ্যমে বেশি টাকা দিয়ে ফটোকপি করতে বাধ্য হচ্ছেন। আবার এ নিয়ে কোনো কোনো রোগী কিংবা স্বজনরা প্যাথলজি বিভাগের কর্মরতদের সাথে বাকবিত-ায়ায় জড়িয়ে পড়তেও দেখা গেছে।
প্যাথলজি বিভাগের একাধিক কর্মরতদের সাথে কথা হয় প্রতিবেদকের। তারা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, গত এক সপ্তাহ যাবত রোগীদের রিপোর্টের ফরম (প্যাড) সাপ্লাই নেয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোন সুরাহ হয়নি। সময় স্বল্পতা এবং জনবল সংকটের কারণে বাধ্য হয়ে রোগীদের দিয়ে রিপোর্ট ফরম ফটোকপি করা হচ্ছে। হাসপাতালের নিজস্ব ফটোকপি মেশিন সচল থাকতেও রোগীদের দিয়ে ফটোকপি কেন করানো হচ্ছে এ বিষয়ে প্যাথলজি বিভাগের কর্মকরতরা প্রতিবেদককে এড়িয়ে যান।
তারা আরও বলেন, প্রতিদিন গড়ে ১০০-১৫০ এর বেশি রোগী এখানে বিভিন্ন পরীক্ষা করাতে আসেন। আমাদের পকেটের টাকা দিয়ে তো এতো ফরম ছাপানো সম্ভব নয়। নিজেরা চাইলেও পারিনা। তাই রোগীদেরকে ফটোকপি করতে বলা হচ্ছে।
আলিমুর রেজা নামের এক যুবক বলেন, আমার বাবার রক্ত পরীক্ষার জন্য সদর হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে যায়। টাকা ও রক্ত নেয়ার পর তারা জানায়, রিপোর্ট লেখার ফরম সাপ্লাই নেই। তিন পৃষ্ঠার একটি রিপোর্ট ফরম হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে ফটোকপি করে আসলেই আপনার রিপোর্ট লিখে দেয়া হবে। প্যাথলজি বিভাগের প্রধানের সাথে কথা বললাম তিনিও একই বক্তব্য পেশ করলেন। পরে বাধ্য হয়েই অসুস্থ বাবাকে রেখেই ফটোকপি করে নিয়ে আসি।
তিনি আরও বলেন, এটা কোন ধরনের নিয়ম? দেশ-বিদেশে আর কোথাও কি এই নিয়ম আছে? পরীক্ষা করাতে আসা সকল রোগী বা তাদের স্বজনদের দেখলাম রোগী ফেলে ফটোকপির দোকান খুঁজতে ব্যস্ত হতে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ভোগান্তির অবসান চাই।
চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গা উপজেলার আঠারোখাদা গ্রামের হাজেরা খাতুন নামে এক রোগী বলেন, আমার বয়স প্রায় বয়স ৭৫ ছুঁইছুঁই। বেশ কয়েকদিন যাবত জ্বরে ভোগার পর এখন খাবারের অরুচির জন্য সদর হাসপাতালে এসেছি। চিকিৎসক রক্ত পরীক্ষা করা করতে বলায় কম টাকায় হাসপাতালে পরীক্ষার জন্য এসেছি। এখানে রক্ত ও টাকা নেয়ার পর একটা কাগজ দিলো তারা। বললো ফটোকপি করে নিয়ে আসতে। আমি তো এখানে কিছুই চিনি না। আর বয়সের ভারে ঠিকমত হাটতেও পারি না। তাই এখানে থাকা একজনের মাধ্যমে বেশি টাকা দিয়ে ফটোকপি করিয়ে এনেছি।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কুকিয়া চাঁদপুর গ্রামের আবুল হাসেম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমার বয়োবৃদ্ধ দাদিকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। চিকিৎসক বেশ কয়েকটি পরীক্ষা দিয়েছেন। হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে এলে তারা একটা কাগজ ফটোকপি করে আনতে বলে। আমি অসুস্থ দাদিকে রেখে দোকান খুঁজে ফটোকপি করে নিয়ে আসি। সরকারি হাসপাতালে এসে রোগীদেরই যদি ফটোকপি করতে হয় এটা আসলেই দুঃখজনক।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের স্টোরকিপার হাদি দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, রিপোর্ট ফরম (প্যাড) সাপ্লাই না থাকলেও সদর হাসপাতালে এখন ফটোকপির ব্যবস্থা আছে। আমাকে বললে আমি ফটোকপি করে দিই। রোগীদের দিয়ে ফটোকপি কেন করাবে, এটা আমার বোধগম্য হচ্ছে না।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. ফাতেহ আকরাম দৈনিক মাথাভাঙ্গা বলেন, সদর হাসপাতালে ফটোকপির ব্যবস্থা আছে। রোগীদের দিয়ে ফটোকপি করানোটা দুঃখজনক। ঘটনাটি আমার নজরে এসেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পূর্ববর্তী পোস্ট
চুয়াডাঙ্গা শহর সমাজসেবা প্রকল্প পরিষদের কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন কোর্সের ফাইনাল পরীক্ষা সম্পন্ন
পরবর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ