নিখোঁজের দিনই হুরায়রাকে হত্যা করে লাশ পুতে রাখা হয় গোরস্তানে

চুয়াডাঙ্গা তালতলার স্কুলছাত্র নিখোঁজের ২৫দিন পর অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার তালতলা গ্রামের নিখোঁজ শিশু আবু হুরায়রার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। দীর্ঘ ২৫দিন পর গতরাত সাড়ে ১২টার দিকে গ্রামের ঈদগাহ মাঠ সংলগ্ন বড় গোরস্তান থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ বলেছে, এজাহার নামীয় কারো কাছ থেকে কোনো তথ্য না পেয়ে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে দুজনকে আটক করা হয়। তাদের মধ্যে একজনের দেয়া তথ্য এবং দেখানো স্থান থেকে আবু হুরায়রার অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
এদিকে, হত্যাকা-ের মূলহোতা সম্পর্কে পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে বিস্তারিত না জানালেও গ্রামসূত্রে জানা গেছে হুরায়রাকে পুতে রাখার স্থান দেখিয়ে দেয়া যুবকরে নাম মোমিন। সে তালতলার শহিদুল ইসলামের ছেলে। গত ১৯ জানুয়ারি বেলা সাড়ে ৩টার দিকে বাড়ির পাশে প্রাইভেট পড়তে গিয়ে নিখোঁজ হয় এগারো বছর বয়সি আবু হুরায়রা।
আবু হুরায়রার চাচা আতিয়ার রহমান বলেন, গ্রামের শহিদুলের ছেলে মোমিন পুলিশের সাথে গোরস্তানে ঢুকে হুরায়রার কবর দেখিয়ে দেয়। এরপরই পুলিশ তাকে আবার নিয়ে চলে গেছে। শোনা যাচ্ছে, নিখোঁজের দিনই হুরায়রাকে হত্যা করা হয়। রাতেই তার মরদেহ গোরস্তানে পুতে রাখা হয়।
জানা গেছে, ধনাঢ্য ভুট্টা ব্যবসায়ী ও কৃষক আবদুল বারেকের ছয় মেয়ের পর জন্ম হয় ছেলে আবু হুরায়রার। আবু হুরায়রা এ বছর লটারির মাধ্যমে তৃতীয় শ্রেণি ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করে চুয়াডাঙ্গা ভি.জে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। গত ১৯ জানুয়ারি বুধবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে আবু হুরায়রা বাড়ির পার্শ্ববর্তী রনজু হক নামের এক প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়তে বের হয়। প্রাইভেট শিক্ষকের ঘরে বইয়ের ব্যাগটা রাখার পর সে বাইরে বেরিয়ে যায়। এরপর সন্ধ্যায় পরিবারের লোকজন খুঁজতে বের হয়। রাতে পুলিশকে খবর দেয়া হয়। মাইকিং করা হয়। না পেয়ে অনেকেই ধারণা করেন বাড়ির পাশে পুকুরে পড়ে নিখোঁজ হয়েছে হুরায়রা। সন্ধ্যার পর দীর্ঘসময় ধরে পুকুর তল্লাশি করেও তার সন্ধান পান না ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা।
এদিকে, গ্রামের সব মানুষের মুখে মুখে একই কথা আবু হুরায়রাকে জিনরা তুলে নিয়ে গেছে। জিনের মাধ্যমে ফেরত পাওয়া যাবে। এ কথা শুনে সন্তানকে ফেরত পেতে সিরাজগঞ্জ জেলার কথিত এক কবিরাজের সাথে যোগাযোগ করে বাবা-মা। হুরায়রাকে ফেরত দেয়ার জন্য নাকি ওই কবিরাজ ৫০ হাজার টাকার দাবি করেন। তাকে ৩০ হাজার টাকা অগ্রিম দেয়াও হয়। ছেলে ফেরত পাওয়ার পর আরও ২০ হাজার দেয়া লাগবে। তবে সে সময় টাকা দেয়ার কথা অস্বীকার করলেও সিরাজগঞ্জের ওই কবিরাজের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার কথা স্বীকার করেন শিশু আবু হুরায়রার পিতা আবদুল বারেক। ওই কবিরাজ সম্পর্কে গ্রামবাসীরা জানিয়েছে, গত বছরের ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে একইভাবে গ্রামের বিত্তশালী কৃষক হায়াত আলী (৭০) নিখোঁজ হয়েছিলেন। ঘটনার পাঁচদিন পর সন্ধ্যায় তাকে মাঠে পাওয়া যায়। তাকেও নাকি সিরাজগঞ্জের ওই কবিরাজের মাধ্যমে জিনরা রেখে গিয়েছিলো।
লাশ উদ্ধারের পর চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন বলেন, আবু হুরায়রার বাবা আবদুল বারেকের দায়ের করা মামলায় দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। পরবর্তিতে পুলিশের গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আরও দুজনকে আটক করে থানায় নেয়া হয়। তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর একজন হত্যার কথা স্বীকার করে। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গোরস্তানে গিয়ে এবং তার দেখানো স্থান থেকে আবু হুরায়রার অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে এখন সবকিছু বলা সম্ভব নয়। হত্যাকা-ের সাথে আরও কেউ জড়িত আছে কিনা তা দেখা হচ্ছে। তদন্ত শেষে পরে বিস্তারিত জানানো হবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More