জীবননগরের পিআইওসহ দুই আসামিকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ হাইকোর্টের
ভুয়া অনুষ্ঠান দেখিয়ে জিআর প্রকল্পের ৬শ টন চাল আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের মামলা
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে ভুয়া অনুষ্ঠান দেখিয়ে খাদ্য ও অর্থ সহায়তা (জিআর) কর্মসূচির ৬০০ মেট্রিক টন চাল আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের করা মামলায় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আশরাফ হোসেনসহ দুই আসামিকে জামিন দেননি হাইকোর্ট। একইসঙ্গে আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে জেলার দায়রা জজ আদালতে তাদের আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
মামলার আসামিরা হলেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আশরাফ হোসেন, একই কার্যালয়ের অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক মো. সাইফুর রহমান মালিক। তাদের আগাম জামিন আবেদনের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইানজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এদিন আদালতে আসামিপক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট আব্দুর রউফ। দুদকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট কামরুন্নেসা রত্না। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আগামী ১৫ মার্চ তদন্ত প্রতিবেদন প্রাপ্তি সাপেক্ষে মামলার পরবর্তী আদেশের জন্য দিনধার্য রয়েছে চুয়াডাঙ্গা বিশেষ আদালতে।
মামলার বিবরণীতে দেখা যায়, ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি হতে ওই বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে ভুয়া অনুষ্ঠান দেখিয়ে খাদ্য ও অর্থ সহায়তা (জিআর) কর্মসূচির ৬০০ মেট্রিক টন চাল আত্মসাতের অভিযোগে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাসহ দুজনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি দুদকের উপ-পরিচালক (মানি লন্ডারিং) আবদুল মাজেদ বাদী হয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা ও দায়রা জজ (বিশেষ জজ) আদালতে এ মামলা করেন। ওই মামলায় উচ্চ আদালতে জামিন নিতে এলে আদালত দুই আসামির জামিন নামঞ্জুর করেন।
আসামিদের মধ্যে সাইফুর রহমান গত বছরের জানুয়ারিতে অবসর প্রস্তুতিকালীন ছুটিতে গেছেন। ২০১৬ সালে জীবননগর পিআইও দপ্তরে চাকরি করার সময় আশরাফ হোসেন ও সাইফুর রহমান ২ কোটি ১৮ লাখ ১ হাজার টাকা ৩০০ টাকা মূল্যের চাল আত্মসাৎ করেন বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। মামলাসূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে জীবননগরে দায়িত্ব পালনকালে পিআইও আশরাফ হোসেন ও সাইফুর রহমান যোগসাজশ করে ভুয়া মাস্টাররোল ও বিল ভাউচার দেখিয়ে জিআর প্রকল্পের ৬০০ মেট্রিক টন চাল আত্মসাৎ করেন। পরে বিষয়টি তদন্ত করে দুদক প্রাথমিক সত্যতা পায়।
দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে জানা গেছে, কোনো ধরনের প্রস্তাব বা চাহিদাপত্র না থাকা সত্ত্বেও জীবননগরের ২০০টি স্থানে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের শেষ দিকে (২৬ জুন) চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসককে ৬০০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। পরে জীবননগর উপজেলার তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুরুল হাফিজ ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার যৌথ স্বাক্ষরে ৩০ জুন স্থানীয় খাদ্য গুদাম থেকে ৬০০ মেট্রিক টন চাল উত্তোলন করা হয়।
জীবননগরে চাল বরাদ্দ আসার পর কথিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে ২০০ আবেদনপত্র সংগ্রহ দেখানো হয়েছে। পরে আবেদনগুলো অ্যাডভান্স রেজিস্ট্রারে লিপিবদ্ধ করেন সাইফুর রহমান। তবে আবেদনপত্রে আবেদনকারীর স্বাক্ষরের সঙ্গে অ্যাডভান্স রেজিস্ট্রারের স্বাক্ষরের মিল পায়নি দুদক।