ভৈরব নদ খননের সময় পাওয়া গেল জাহাজের লোহা লক্কড় ও মানুষের হাড়গোড় : ইঞ্জিন উদ্ধারের সম্ভাবনা

রতন বিশ্বাস, কার্পাসডাঙ্গা:

চুয়াডাঙ্গায় ভৈরব নদ খননের সময় শত বছর আগে ডুবে যাওয়া জাহাজের ধ্বংসাবশেষ ও মানুষের হাড়গোড়ের সন্ধান পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার রাতে ড্রেজিংয়ের সময় এগুলো উঠে আসে। গতকাল সকালে দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজ সংলগ্ন ভৈরব নদে হাজারো মানুষ এসব দেখতে ভিড় জমান। ধারণা করা হচ্ছে, জাহাজের ধ্বংসাবশেষ ও হাড়গোড় ২০০ বছরের পুরোনো। ব্রিটিশ আমলে ভৈরব নদ দিয়ে ভারতের কলকাতায় যাওয়ার সময় জাহাজটি ডুবে যায় বলে প্রবীণরা জানান। জাহাজের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধারের খবরটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে এলাকার হাজারো কৈৗতূহলী নারী-পুরুষ দিনভর ভিড় জমান ভৈরবপাড়ে।

এলাকা সূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার সুবোলপুরে গত বছরের ১৯ ডিসেম্বরে ভৈরব নদ খনন কাজের উদ্বোধন করা হয়। গত বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজ সংলগ্ন নীল কুঠির নিচে ড্রেজার মেশিনে বাঁধে জাহাজের ধ্বংসাবশেষ। এরপর সেখান থেকে উঠে আসে বিশাল আকারের লোহার চাকা, শেকল, জাহাজের বিভিন্ন অংশসহ মানুষের হাড়গোড়। নদী খননের ঠিকাদার বিশ্বজিতের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘বৃহস্পতিবার দিনগত রাতে নদীর মাটি খনন করতে করতে এগুলো পাওয়া গেছে। কৌতূহলী মানুষ দেখতে ভিড় করছে। তবে এখানে জাহাজের ইঞ্জিনও আছে বলে ধারণা করছি। বিষয়টি আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’ এ বিষয়ে ড্রেজার চালক নাইম জানান, ‘রাতে আমি ড্রেজার মেশিন দিয়ে মাটি খনন করছিলাম। হঠাৎ মেশিনের প্লেটে লোহা বাঁধে। পরে আরো খনন করতে করতে বড় জাহাজের কিছু মালামাল পাই। পাওয়া যায় মানুষের হাড়গোড়ও।’ এলাকাবাসী ধারণা করছে, এটি প্রায় দেড় থেকে দুইশ’ বছর আগে ডুবে যাওয়া জাহাজ। মাটির নিচে আরও খুঁড়লে হয়তো মূল্যবান সম্পদ পাওয়া যাবে বলে স্থানীয়দের ধারণা। এদিকে মাটি খুঁড়ে জাহাজের সন্ধান পাওয়ার বিষয়টি আশপাশে ছড়িয়ে পড়লে কৌতূহলী নারী-পুরুষ সব সময় দেখতে ভিড় করছেন। গতকাল শুক্রবার সকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ভৈরব নদে লোকজন দূর-দূরান্ত থেকে জাহাজের ধ্বংসাবশেষ ও উদ্ধার হওয়া মানুষের হাড়গোড় দেখতে ভিড় করছেন। দেখতে আসা লোকজন মোবাইল ক্যামেরায় ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন।’

কার্পাসডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ হামিদুল ইসলাম জানান, ‘আমাদের কলেজের পাশেই ছিল ব্রিটিশদের নীলকুঠির দ্বিতল ভবন। বিগত সরকারের সময় ভবনটি নিলামে বিক্রি করে দেওয়া হয়। প্রবীণদের কাছে শুনেছি ভারত থেকে এই নীল কুঠিতে ইংরেজ সাহেবরা জাহাজে ভারত যাওয়া-আসা করতেন। ভৈরব নদ দিয়ে কার্পাসডাঙ্গা থেকে কলকাতায় বাণিজ্য করতেন তারা। সে সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগে বা কোনো দুর্ঘটনায় হয়তো জাহাজটি ডুবে গিয়েছিল। এই জাহাজে মূল্যবান সম্পদ থাকতে পারে। মাটি খনন করলে হয়তো আরও মূল্যবান সম্পদ পাওয়া যাবে। ভৈরব নদ খননের সময় জাহাজের যে ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যাচ্ছে সেটি ব্রিটিশদের পণ্যবাহী জাহাজের হয়ে থাকতে পারে।’ পার্শ্ববর্তী বাঘাডাঙ্গা গ্রামের শাহাবুল হক জানান, ‘আমার প্রয়াত বাবা প্রবীণদের কাছে শুনেছিলেন এখানে জাহাজ ডুবে গিয়েছিল। তিনি জীবদ্দশায় আমাদের কাছে এটা জানিয়েছিলেন। আমাদের ধারণা জাহাজডুবির ঘটনাটি কয়েকশ বছর আগের হয়ে থাকতে পারে। উদ্ধার হওয়া লোহালক্কড় ডুবে যাওয়া সেই জাহাজেরই হবে। আর হাড়গোড়গুলো হয়তো জাহাজে আটকে মারা যাওয়া মানুষের হবে।’ এবিষয়ে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, ‘কার্পাসডাঙ্গা থেকে কলকাতায় নদী পথে বাণিজ্য হতো। এখানে বড় বড় নৌকা ও জাহাজ ভিড়তো’। কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম জানান, ‘মাটি খননের সময় ব্রিটিশদের জাহাজের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়া গেছে শুনে দেখতে আসলাম।’ কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদুর রহমান মুকুল জানান, ‘খবর পেয়ে এখানে দেখতে এসেছি। ভৈরব নদের মধ্যে পাওয়া ব্রিটিশদের এই মালামাল প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের নজরে আনা জরুরি, গবেষণায় জানা যাবে এটি কী এবং এর রহস্য ও ইতিহাস।’

ভৈরব নদ সংলগ্ন কোমরপুর গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি মোফাজ্জেল হোসেন জানান, ‘আমার দাদা ব্রিটিশ সাহেবদের কর্মচারী ছিলেন। আমার বাবার কাছে শুনেছি এখানে ঝড়ে সাহেবদের একটি জাহাজ ডুবে গিয়েছিল। পরে জাহাজটি আর উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল করিম বিশ্বাস জানান, ‘জাহাজটির মালামাল ২০০ বছরেরও বেশি পুরোনো বলে ধারণা করা হচ্ছে। আপাতত জাহাজের ধ্বংসাবশেষ ও মানুষের হাড়গোড় উদ্ধার করে ইউনিয়ন পরিষদে রাখার জন্য দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন।’

এ বিষয়ে দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাছলিমা আক্তার বলেন, ‘ভৈরব নদে পাওয়া ব্রিটিশদের এই মালামালের বিষয়ে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সাথে কথা বলার চেষ্টা করছি। তবে যেগুলো পাওয়া গেছে সাবধানতার সাথে ও যত্ন করে রাখতে হবে।’

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More