অনেক প্রশ্ন রেখে গেলেন তিনি উত্তর দেবে কে?

সম্পাদকীয়

মোটা অঙ্কের পাওনা টাকা উদ্ধার না করতে পেরে একজন ব্যবসায়ীকে নিজের গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার এক নজিরবিহীন ঘটনার সাক্ষী হলো বাংলাদেশে। প্রকাশ্য দিবালোকে খোদ রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে ঘটা এই ঘটনায় থমকে গেছে অসংখ্য মানুষের জীবনের স্বাভাবিক কর্মকা-। তাদের প্রশ্ন কতোটা অসহায়, নিরুপায় হলে একজন মানুষ নিজের গায়ে আগুন দেয়ার মতো ভয়াবহ কা- ঘটাতে পারেন? দেশে কি কোনো আইন নেই? একজন মানুষও কি ছিলো না তার পাশে দাঁড়ানোর?

আমরা এরই মধ্যে জেনেছি, বছর পঞ্চাশ বয়সের ওই ব্যবসায়ীর নাম গাজী আনিসুর রহমান। বাড়ি কুষ্টিয়া কুমারখালী উপজেলায়। ঠিকাদারী ব্যবসা শুরুর আগে ছাত্রজীবনে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন তিনি। ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের কর্যনির্বাহী কমিটির সদস্যও। হেনোলাক্স কোম্পানির চেয়ারম্যান নুরুল আমিন ও তার স্ত্রী ফাতেমা আমিনের বারবার অনুরোধে তাদেরকে ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা ধার দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই টাকা ফেরত দিচ্ছিলেন না তারা। শুধু তাই নয়, উল্টো তার প্রাণনাশেরও হুমকি দিয়েছেন নুরুল আমিন। এসব ঘটনা গড়িয়েছে আদালত চত্বরেও। কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি।

নুরুল আমিন ও তার স্ত্রীকে ধার দেয়া টাকার পুরোটা আনিসুর রহমানের ছিলো না। তার মধ্যে বড় একটা অংশ ছিলো অন্যের কাছ থেকে ধার করে আনা। তারাও টাকা ফেরত পেতে চাপ দিচ্ছিলেন আনিসুরকে। সব মিলিয়ে একটা চাপে পড়ে যান তিনি। পরিস্থিতি যখন এমন তিনি বহু মানুষের কাছে ধরনা দিয়েছেন পাওনা টাকা উদ্ধারের অনুরোধ নিয়ে। এমনকি বুকে পোস্টার সেঁটে প্রেসক্লাবের সামনে একা দাঁড়িয়েছেন সেই টাকা পেতে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি। এক পর্যায়ে গত সোমবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের শরীরেই আগুন লাগিয়েছেন। মঙ্গলবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটিতে মৃত্যু হয়েছে তার। স্পষ্টই প্রতারণার শিকার হয়েছিলেন স্কুল-কলেজে পড়া তিন কন্যা সন্তানের জনক আনিসুর রহমান। তার ফেসবুক পোস্টের লাইনে লাইনে উঠে এসেছে নুরুল আমিন ও তার স্ত্রীর প্রতারণার কাহিনি। সেখানে এক জায়গায় তিনি লিখেছেন, ‘ভীষণ মানসিক নিপট খরায় আমি উল্লেখিত তথ্যাদি উপস্থাপন করলাম। আমার সামনে বিকল্প পথ না থাকায় ফেসবুকেও সবাইকে জানালাম।’

আমাদের প্রশ্ন, কেন একটা মানুষকে এমন ভয়ঙ্কর পথ বেছে নিতে হলো? কেন দিনের পর দিন বলার পরও নুরুল আমিনদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়া গেলো না? আদালতে গিয়েও কেন প্রতিকার পেলেন না?

আমরা মনে করি, আনিসুর রহমান আত্মহত্যা করেননি। তাকে হত্যার মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে নুরুল আমিন এবং তার স্ত্রী ফাতেমা আমিনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। যাতে অন্য কারো এমন পরিস্থিতিতে পড়তে না হয়।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More