আত্মহত্যা রোধে প্রয়োজন পারিবারিক সচেতনতা

সম্পাদকীয়

ইদানীং তরুণ-তরুণীদের মধ্যে আত্মহনন প্রবণতা আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। দেশের স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৩৬৪ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন, যাদের মধ্যে ১৯৪ জনই ছিল স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থী। আর কলেজপড়ুয়া ৭৬ জন এবং ৫০ জন ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ৪৪ জন মাদরাসায় পড়ুয়া শিক্ষার্থীও আত্মহত্যার মাধ্যমে জীবনাবসানের পথ বেছে নিয়েছে। সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশনের জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এই তথ্য নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক।

আত্মহননকারীরা জীবনের নানামুখী সমস্যা সংকট থেকে মুক্তি পেতেই নিজেকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে নেয়। প্রকৃতপক্ষে নিজেকে ধ্বংস করার ভেতর কোনো বীরত্ব নেই, নেই কোনো কৃতিত্ব। চিকিৎসকদের মতে, আত্মহত্যাকারীদের ৯৫ শতাংশই মানসিক রোগে ভোগেন। দেশে ৬৫ লাখ মানুষ আত্মহত্যার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, এর মধ্যে নারী ৪০ ভাগ। এর জন্য প্রয়োজন সামাজিক ও পারিবারিক সচেতনতা। গভীর হতাশা ও বিষœনতার কারণেই আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে সবচেয়ে বেশি। আত্মহত্যাপ্রবণ মানুষকে সঙ্গ দেয়া, বিনোদনমূলক ও প্রকৃতিনির্ভর কোনো জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যাওয়া উচিত। আর এটা করতে হবে বন্ধু বা আত্মীয়স্বজনকেই। আত্মহত্যা ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে, এই প্রভাব নেতিবাচক।

এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, প্রতি বছর বিশ্বে প্রায় ১০ লাখ মানুষ আত্মহত্যা করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে প্রতি বছর সারা বিশ্বে যে সব কারণে মানুষের মৃত্যু ঘটে তার মধ্যে আত্মহত্যা ত্রয়োদশতম প্রধান কারণ। স্থানীয় গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে আত্মহত্যার হার প্রতি লাখে ৬ থেকে ১০ জন- যা উন্নত দেশের কাছাকাছি। বিশেষজ্ঞদের মতে, পারিবারিক কলহ, নিযার্তন, ভালোবাসায় ব্যর্থতা, পরীক্ষায় অকৃতকার্য, যৌন নির্যাতন, অপ্রত্যাশিত গর্ভধারণসহ বিভিন্ন কারণে নারীর আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে। ইদানীং পুরুষের চেয়ে নারীদের আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে গেছে। আত্মহত্যার ৯৭০টি ঘটনা পর্যালোচনা করে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ। তারা বলেছে, বাংলাদেশে নারীদের ওপর শারীরিক, যৌন ও মানসিক নির্যাতন এবং ইভটিজিংয়ের ঘটনা বাড়ায় অনেকে পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে আত্মহত্যা করছেন। অবিবাহিত নারীদের ক্ষেত্রে বিয়ের আগে যৌন সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য হওয়া অথবা স্বেচ্ছায় যৌন সম্পর্ক স্থাপনের পর গর্ভধারণের কারণে অনেকে আত্মহত্যা করেন। বেশির ভাগ নারী আত্মহত্যা করেছেন গলায় দড়ি দিয়ে, পুরুষরা কীটনাশক খেয়ে। আবেগতাড়িত ও পরিকল্পিত এ দুই ধরনের আত্মহত্যা হয়। তবে দেশে আবেগতাড়িত আত্মহত্যার পরিমাণ বেশি, এটি একটি মানসিক সমস্যা। সঠিক সময়ে চিকিৎসা পেলে এ ধরনের ঝুঁকি থেকে বাঁচানো সম্ভব। কিশোর-কিশোরী আর যাদের বয়স পঁয়ত্রিশ বছরের নিচে, তাদের মৃত্যুর প্রধান কারণ হচ্ছে আত্মহত্যা। নানা দুঃখ কষ্ট হতাশায় অপ্রাপ্তি আর বঞ্চনায় অনেকেই জীবনকে তুচ্ছ ভাবে। আত্মহননের মাধ্যমে জীবনের মায়া ত্যাগ করে পৃথিবী থেকে চলে যায়, ঘটাতে চায় জীবনের পরিসমাপ্তি। এটা কোনো সমাধান নয়। নিজের জীবনকে ভালোবেসে বেঁচে থেকেই জীবনের সমাধান খুঁজতে হবে।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More