খবর দুটিই খেলা-ধূলা সংক্রান্ত। একটি ঘটনার বর্ণনায় উঠে এসেছে, সংকীর্ণতায় আক্রান্ত হিনমানসিকতার নগ্ম বহিঃপ্রকাশসহ প্রতিবাদ চিত্র, অপরটি বিশাল হৃদয়ের অনন্য দৃষ্টান্ত। দুটি সংবাদই আমাদের সমাজের হালচিত্র। নারী ক্রিকেটার যখন উত্যাক্তর শিকার হয়ে প্রতিবাদ করে ক্রীকেটারসহ তিন প্রতিবাদী যুবক শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হন তখন বুঝতে বাকি থাকে না, সমাজটা এখনও কতটা অন্ধকারাচ্ছন্ন। আবার খেলার মাঠের জন্য যখন দুজন ব্যবসায়ী তাদের জমি রেজিস্ট্রি করে দেন, গ্রামের সাধারণ মানুষ স্বতস্ফূর্তভাবে টাকা দেন তখন অবশ্যই আশাবাদীদের চোখে আসে আনন্দ অশ্রু। নারী ক্রিকেটারকে যারা উত্যাক্ত করেছে তাদের প্রতি যেমন ঘৃণা, তেমনই খেলার মাঠ নির্মাণে দানবীরদের প্রতি হৃদয় নিঁংড়ানো ভালোবাসা। একই সাথে নারী ক্রিকেটারকে উত্যাক্ত করার প্রতিবাদ করেছেন যারা তাদের প্রতি সংগ্রামী অভিবাদন। অন্যায়ের প্রতিবাদকারীরাই প্রকৃত যোদ্ধা।
এক সময় পরিত্যাক্ত জমি যাকে আঞ্চলিকভাষায় বাচড়া বলা হতো, সেই জমিতে পাড়ার দামাল ছেলেরা যেমন খেলায় মেতে উঠতো, তেমনই বসতি গড়ে ওঠার সাথে সাথেই অনিবার্য হয়ে উঠতো খেলা ধুলার নির্ধারিত মাঠ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসংলগ্ন এলাকাতেই খেলার মাঠ গড়ে তোলা হতো। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য যেমন জমিদানে সিদ্ধহস্ত হতেন হৃদয়বান সম্পদশালীদের অনেকে, তেমনই অনেকেই খেলার জন্য পতিত জমিও দিতেন মাঠও নির্দি¦ধায়। যদিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে জমি রেজিস্ট্রি করে দেয়ার বাধ্যবাধকতা ছিলো, খেলার মাঠের ক্ষেত্রে অতোটা না থাকায় পরবর্তিতে দাতার বেশিরভাগ শরীকেরাই সেই জমি দখল নিয়ে বিক্রি করে খেলাধূলার মাঠশূন্য করে ছেড়েছেন। চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুরসহ সারা দেশে এরকম উদাহরণ হাজারে হাজার। ফলে অধিকাংশ গ্রামই এখন খেলার মাঠশূন্য। কোন কোন গ্রামে নতুন করে খেলার মাঠ গড়ার তাগিদ অনুভূত হচ্ছে, অনেকের উদার মানসিকতায় তার বাস্তবায়নও ঘটছে। তবে বিষয়টি খুব সহজ নয়। বেশ কঠিন। এই কঠিন কাজটিই করতে সক্ষম হয়েছে চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার পল্লি আইন্দিপুর গ্রামবাসী। এ গ্রামের দুজন কৃতি সন্তান মোটাদাগে জমি দেয়ার পাশাপাশি গ্রামের সাধারণ মানুষ সাধ্যমত অর্থ দিয়ে খেলার মাঠ গড়ে তুলে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। খেলার মাঠ পেয়ে গ্রামের যুব সমাজ উল্লাসে মেতেছে। তারই খ-চিত্র গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গায় উঠে আসে। অনলাইন সংস্করণেও গুরুত্বসহকারে তুলে ধরা হয়। ফলে দেশ বিদেশের অসংখ্য শাদামনের মানুষ আইন্দিপুরগ্রামবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে দাতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। একই সাথে ধিক্কার জানিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের মাখালডাঙ্গার রাস্তায় ঘটনার হোতাদের। শুধু নারী ক্রিকটার বলে নয়, অন্যান্য ক্ষেত্রেও নারী অগ্রযাত্রায় বাঁধামূলত সংর্কীর্ণ মানসিকতা। তাছাড়া নারীর উত্যাক্তকারীদের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে যারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাদেরকেও অভিনন্দন জানানো হয়েছে। তাই-ই হওয়া উচিৎ। যে সমাজে অন্যায়ের প্রতিবাদ হয়, সেই সমাজ ন্যায়ের দিকেই এগিয়ে যায়।
যখন যা থাকে না, তখন মনে হয় তা থাকলে পুরোটাই কাজে লাগাতাম। থাকলে সব সময় সকলে তার গুরুত্ব অনুধাবন করেনও না। যেমন যেসব গ্রামে বা পাড়া মহল্লায় খেলার মাঠ রয়েছে সেব মাঠ কি সরব? অবশ্যই না, যে গ্রামে নতুন খেলার মাঠ হলো সেই গ্রামের মাঠটিও কি জমজমাট হবে? সমাজের বাস্তবতায় এসব প্রশ্ন অবশ্যই অবান্তর নয়। মাঠ সরগরম করতে উদ্যোগতার অভাব যেমন, তেমনই ক্রীড়া শৈলির চেয়ে পেশি শক্তিপ্রয়োগের মানসিকতা গড়ে উঠেছে। খেলার উত্তাপ যখন দর্শকদের উষ্ণতার বদলে খেলার পরিবেশ পুড়ায় তখন বুঝতে হয় সমাজ সঠিক অবস্থানে নেই। সংস্কার দরকার। খেলার মাঠ স্থাপনের পাশাপাশি খেলাধূলার পরিবেশও গড়তে হবে। নারী অগ্রযাত্রায় এগিয়ে আসতে হবে সকলকে। সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে তুলতে দরকার সচেতনতা। নিজের মতবাদ অন্যের ওপর চাপানো. কিম্বা মেধা চর্চার বদলে পেশিশক্তি প্রয়োগ তথা ব্যাক্তি স্বার্থপরতা পুরো সমাজকে কলুষিত করে।
পূর্ববর্তী পোস্ট
পরবর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ