কৃষকের কাঁধে আবারও সারের দামের বোঝা

সম্পাদকীয়

সারের দাম বাড়ানো হবে না এমন কথা সাতদিন আগেই বলেছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। তার সেই কথা টিকলো না। পূর্বঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ বেড়ে গেছে চার ধরনের সারের দাম। কেজিতে পাঁচ টাকা বাড়তি দর কার্যকর হয়েছে গত সোমবার থেকেই। অতিরিক্ত ভর্তুকির চাপ সামাল দিতে ৯ মাসের মধ্যে আরেক দফা সারের দাম বাড়ালো সরকার। এবার দাম বেড়েছে ইউরিয়া, ডিএপি, টিএসপি ও এমওপি সারের। সারে সরকার যে ভর্তুকি দেয়; দাম বাড়ানোর ফলে বছরে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে বলে জানিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়, যা আসবে কৃষকের পকেট থেকে। গত আগস্টে ইউরিয়া সারের দাম কেজিতে ছয় টাকা বাড়ানোর চক্কর থেকে বের না হতেই গত মঙ্গলবার কৃষকের কাঁধে ফের ভর করলো দামের বোঝা।

ডিজেল, বিদ্যুৎ, বীজসহ সব কৃষি উপকরণের ঊর্ধ্বমুখী দরের কারণে ফসল উৎপাদনে কৃষক যখন খাবি খাচ্ছে, তখন বোরো মরসুমে আবারও সারের দর বাড়ার ঘোষণায় বিপদে পড়তে যাচ্ছে কৃষক। সরকারের এমন সিদ্ধান্ত কৃষকের জন্য ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, সেচ ও পরিবহন খরচ বাড়ার সঙ্গে সারের এই বাড়তি দর কৃষককুলকে জাঁতাকলে ফেলবে। খরচ বাড়ার কারণে খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি বেড়ে যাবে কৃষিপণ্যের দাম। প্রতি কেজি ইউরিয়া সার কিনতে কৃষকদের এখন দিতে হবে ২৭ টাকা, যা এতদিন ২২ টাকা ছিলো। আর ডিলাররা ওই সার পাবেন প্রতি কেজি ২৫ টাকা দরে, যা আগে তারা ২০ টাকায় কিনতেন। ডিএপি সার এতদিন ডিলার পর্যায়ে ১৪ টাকা, কৃষকপর্যায়ে ১৬ টাকায় বিক্রি হতো। এখন এ সারের দাম হবে ডিলার পর্যায়ে ১৯ টাকা এবং কৃষক পর্যায়ে ২১ টাকা। টিএসপি সারের দাম বেড়ে ডিলার পর্যায়ে ২৫ টাকা, কৃষক পর্যায়ে ২৭ টাকা হয়েছে, যা আগে যথাক্রমে ২০ ও ২২ টাকা ছিল। এমওপি সারের দাম ডিলার পর্যায়ে ১৩ টাকা থেকে বেড়ে ১৮ টাকা এবং কৃষক পর্যায়ে ১৫ টাকা থেকে বেড়ে ২০ টাকা হয়েছে।

বিশ্ব বাজারে দর বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে ভর্তুকি সামাল দেয়ার চেষ্টায় এর আগে ২০২২ সালের ১ আগস্ট ইউরিয়া সারের দাম কেজিতে ছয় টাকা বাড়ানো হয়। সে সময় অন্যান্য সারের দাম অপরিবর্তিত রাখা হয়েছিলো। আমরা মনে করি, এই দাম বাড়ানোর কারণে কৃষকের ওপর চাপ পড়বে। যদিও দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার পাশাপাশি রবি মরসুমে ফসলের উৎপাদন বাড়াতে পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় সাড়ে ১১ লাখ কৃষককে ৯৮ কোটি ৫৪ লাখ ৫৫ হাজার ৩০০ টাকার সার ও বীজ দেবে সরকার। বলার অপেক্ষা রাখে না, করোনার সময়ে সরকার কৃষির ওপর বেশ গুরুত্ব দিয়েছিল। কারণ করোনা মহামারি আকারে বিস্তার লাভ করায় বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার পূর্বাভাষ দেয়া হয়েছিল। কর্মহীন হয়ে পড়েছিল বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ। এর প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। বাংলাদেশ যেহেতু খাদ্যে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ সেহেতু আমরা আশাবাদী হতে পারি। তাছাড়া এবার দেশে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। দেশ খাদ্য সংকটে পড়বে না। তবে করোনাকালে দেশের যেসব কৃষক বিপদে পড়েছিল তাদের কথা চিন্তা করেই সরকার বিশেষ সহায়তা দিয়েছিলো। সরকার প্রতিবছর কৃষি খাতে সার, সেচ ও বিদ্যুতে ভর্তুকি, নগদ সহায়তা ও প্রণোদনা হিসেবে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে থাকে। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের সরকারি ভর্তুকি ও প্রণোদনার সুযোগ-সুবিধা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। কৃষি উপকরণ যেন কৃষকের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে সেদিকে সরকারকে নজর দিতে হবে। প্রয়োজনে ভর্তুকির পরিমাণ বাড়াতে হবে। সরকারের পরিকল্পিত উদ্যোগই কেবল পারে কৃষকস্বার্থ সংরক্ষণ করতে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More