করোনাভাইরাস বিপর্যয়ের বাস্তবতায় বিশ্বজুড়ে অভাবী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণেও বাড়ছে অভাবী মানুষের সংখ্যা। জলবায়ু পরিবর্তন ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতির প্রভাবের কারণেও বিশ্বজুড়ে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন। ফলে দুর্যোগকালে খাদ্য নিরাপত্তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এটা সত্য, বর্তমানে চরম খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় থাকা মানুষের বেশিরভাগই নিম্ন এবং মধ্য আয়ের দেশগুলোর বাসিন্দা।
আশার কথা, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদি খাদ্য নিরাপত্তা বাড়াতে ১৪ বিলিয়ন ডলার দেবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। দক্ষিণ এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান খাদ্য সংকট মোকাবেলায় আগামী তিন বছরে (২০২২-২৫) ১৪ বিলিয়ন ডলার অর্থায়নের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। খাদ্য সংকট মোকাবেলায় দীর্ঘমেয়াদে উন্নতি করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতির প্রভাবের বিরুদ্ধে খাদ্য ব্যবস্থা শক্তিশালী করার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি খাদ্য নিরাপত্তা জোরদার করতে এই অর্থ ব্যবহার করতে পারবে বাংলাদেশসহ এডিবির সদস্যভুক্ত দেশগুলো।
এটা সত্য, ইউক্রেন-রাশিয়ার আগ্রাসন খাদ্যের প্রধান উপাদান ও সারের সরবরাহ ব্যাহত করেছে। এই অঞ্চলে খাদ্য নিরাপত্তার জন্য এডিবির উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছে। চরম দারিদ্র্য দূরীকরণের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখে একটি সমৃদ্ধ, অন্তর্ভুক্তিমূলক, টেকসই এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এডিবি।
উল্লেখ্য, এশিয়ায় ১ দশমিক ১ বিলিয়ন মানুষ নিম্ন আয়ের। ফলে এ অঞ্চলে খাদ্যের দামের কারণে স্বাস্থ্যকর খাবারের অভাব রয়েছে। এটা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বিশ্বজুড়ে চলতে থাকা মন্দায় ইতোমধ্যে অনেকের সামান্য সঞ্চয় শেষ হয়ে গেছে। বিশ্বজুড়ে এই বিপর্যয় সামাল দিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। এশিয়ার অনেক দরিদ্র পরিবারকে ক্ষুধার্ত ও নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে অতি দারিদ্র্যের মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সঙ্কট বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের দেশের অবস্থা কী দাঁড়াবে তা ভাবনার বিষয়। সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে, আমাদের খাদ্য ঘাটতির কোনো সুযোগ নেই, সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। এটা ঠিক বর্তমান পরিস্থিতি আমাদের অনেকটা পিছিয়ে দিচ্ছে। তারপরও আমাদের কৃষির যে অগ্রগতি এটা ধরে রাখতে হবে। আমাদের মানুষের আর যাই হোক তাদের খাদ্যের অভাবটা যেন না হয়। তা আমাদের দেখতে হবে।
মনে রাখা দরকার, কৃষিনির্ভর গ্রামীণ জনপদের মানুষের প্রধান আয়ের উৎস কৃষি। এরপরই রয়েছে প্রবাসী আয়। যার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত প্রায় অর্ধেক মানুষ। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আয়ের উৎস। ফলে সামগ্রিকভাবে বাড়ছে সঙ্কট। এমন অবস্থায় দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন ব্যাপার। তবে সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারের সঠিক পরিকল্পনা ও বাস্তবসম্মত সুষ্ঠু উদ্যোগই কেবল পারে দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে।