দুর্যোগ মোকাবেলায় দরকার সমন্বিত কার্যক্রম

 

সাম্প্রতিক সময়ে দেশে বেশ কিছু বড় অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটেছে। জানমালের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। আর কোনো দুর্যোগ ঘটে যাওয়ার পর সে বিষয়ে সাময়িকভাবে আলোচনার টেবিলে ঝড় তোলার আমাদের প্রচলিত রীতি অনুযায়ী অনেক কথাবার্তাও হয়েছে। চলতি বছরের শুরুতে তুরস্কে প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্পে অর্ধ লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু ও বিপুল ধ্বংসযজ্ঞের দৃশ্যও আমাদের কিছুটা হকচকিত করে থাকবে। তাই দুর্যোগ প্রস্তুতির বিষয়গুলো এখনো আলোচনায় আসছে, দুর্বলতাগুলো চিহ্নিতকরণ ও করণীয় বিষয়ে বিশেষজ্ঞ এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা নানা সুপারিশ তুলে ধরছেন। এরই ধারাবাহিকতায় যুক্ত হলো রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ভূমিকম্প সম্পর্কিত সমীক্ষা প্রতিবেদনের প্রকাশনা। সাম্প্রতিক ঘটনাবলির সাথে অবশ্য এটি সরাসরি সম্পর্কিত নয়। কারণ, সমীক্ষা চালানো হয়েছে গত চার বছর ধরে বিশ্বব্যাংকের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায়। ব্যয় হয়েছে ৫৩৬ কোটি টাকা। বিপুল ব্যয় নিঃসন্দেহে।

ভূমিকম্পের ভয়াবহতা নিয়ে দেশে বড় আকারে সমীক্ষা এটিই প্রথম। গতকাল বুধবার একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সমীক্ষা প্রতিবেদনে অত্যন্ত উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে। বলা হয়েছে, রাজধানী ঢাকা ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। মধুপুরের গড়ের নিচে যে চ্যুতিরেখা বা ফল্টলাইন আছে তাতে ৬ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ঢাকায় প্রায় ৯ লাখ ভবন ধসে পড়বে। দিনের বেলায় এ ভূমিকম্প হলে মারা যাবেন দুই লাখ ১০ হাজার মানুষ, আহত হবেন দুই লাখ ২৯ হাজার। আর আর্থিক ক্ষতি হবে দুই লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকার। ঢাকায় বিপুলসংখ্যক ভবন ধসে পড়বে কারণ, অনেক ভবন জলাভূমি ভরাট করে নরম মাটিতে তৈরি করা হয়েছে। আবার নির্মাণের ক্ষেত্রেও আছে নানা ত্রুটি। বেশির ভাগই ভূমিকম্পসহনীয় নয়। অনেক ভবন সম্পূর্ণ অবৈধভাবে তৈরি। ধসেপড়া ভবন মেরামত ও পুনঃর্নিমাণে সরকারের ব্যয় হবে প্রায় ৪৪ বিলিয়ন ডলার (চার লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকা)। সুতরাং ভূমিকম্প প্রস্তুতির বিষয়টি কোনোভাবে উপেক্ষা করার সুযোগ নেই।

সবারই জানা, বাংলাদেশের অবস্থান দুটি বিপজ্জনক চ্যুতিরেখার ওপর। একটি মধুপুরের চ্যুতিরেখা, অন্যটি সিলেট অঞ্চলের ডাউকি চ্যুতিরেখা।

সাম্প্রতিক সময়ে দেশে বেশ কিছু ছোট-বড় ভূকম্পন হয়েছে। ২০২১ সালে সিলেটে পরপর সাতবার ও চট্টগ্রামে তিনবার মৃদু ভূকম্পন অনুভূত হয়। গত বছর এবং চলতি বছরের শুরুতে সিলেট, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে বেশ কয়েকবার ভূকম্পন অনুভূত হয়। এগুলো দেশে বড় ভূমিকম্পের আলামত বা লক্ষণ। ১৮৯৭ সালে ৮ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পের প্রসঙ্গ সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়। ওই ভূমিকম্পে ঢাকা, সিলেট, ময়মনসিংহ ও রংপুর শহরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিলো। যদিও তখন পাকা ভবন ইত্যাদি ছিলো সামান্যই।

রাজউকের সমীক্ষা প্রতিবেদনের প্রকাশনা একটি সময়োপযোগী কাজ। এটি রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। এখন বাকি কাজ রাজনীতিকদের; অর্থাৎ ক্ষমতাসীন সরকারের। বলা হয়েছে, সমীক্ষা করাই হয়েছে রাজনীতিকদের হাতে তুলে দেয়ার জন্য, যাতে তারা ভূমিকম্পের ভয়াবহতা ও গুরুত্ব বুঝতে পারে। গুরুত্ব বুঝলে তারা সে অনুযায়ী পরিকল্পনা করবেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু এই পর্যায়ে এসে আমাদের মনে অন্যরকম আশঙ্কা দেখা দেয়। তারা জনগণের প্রতি কতোটা দায় বোধ করেন তা নিয়ে সংশয়ের অনেক কারণ রয়েছে।

আমরা মনে করি, ভূমিকম্প, ঝড়-ঝঞ্ঝা, বন্যা, অগ্নিদুর্ঘটনাসহ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার পুরো বিষয়টি নিয়ে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। এ জন্য একটি বড় মন্ত্রণালয় আছে। কিন্তু এর কাজের কোনো দৃশ্যমান প্রতিফলন নেই। যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটলে দেখা যায়, উদ্ধার তৎপরতা চালানোর মতো সরঞ্জাম নেই, জনবল নেই, এমনকি প্রয়োজনীয় আইনবিধিও নেই। ব্যবস্থাপনা, তদারকি তো নেই-ই।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More