দেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিকল্প নেই

সম্পাদকীয়

যতোই দিন যাচ্ছে দেশের কৃষিজমি কমতে শুরু করেছে। ফলে দেশের সামগ্রিক খাদ্য নিরাপত্তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এটা খুবই উদ্বেগের বিষয়। এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, দেশে এখন কৃষি খানার সংখ্যা এক কোটি ৬৮ লাখ ৮১ হাজার, যাদের অধীন আবাদি জমি রয়েছে এক কোটি ৮৬ লাখ ৮১ হাজার একর। তবে ১১ বছরের ব্যবধানে দেশের মোট আবাদি জমির পরিমাণ কমেছে চার লাখ ১৬ হাজার একর। এ হিসাবে গড়ে প্রতিবছর কৃষিজমি কমছে ৩৭ হাজার ৮১৮ একর। অন্যদিকে কৃষি খানার পরিচালনাধীন মোট জমি (আবাদি ও অনাবাদি) জমির পরিমাণও কমে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে এই সময়ে জমির পরিমাণ কমেছে ৫ লাখ ৩০ হাজার একর। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) কৃষি শুমারি-২০১৯-এর চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এর আগের কৃষি শুমারি হয়েছে ২০০৮ সালে। দেশের কৃষি পরিবারে পরিচালনাধীন মোট জমি বা কৃষি পরিবারগুলোর মালিকানায় যে জমি রয়েছে তার পরিমাণ হলো ২ কোটি ২৯ লাখ ৭৫ হাজার একর, যা ২০০৮ সালের শুমারিতে ছিলো ২ কোটি ৩৫ লাখ ৫ হাজার একর। ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, কৃষি পরিবারগুলোর পরিচালনাধীন জমির পরিমাণ কমে গেছে প্রায় ৫ লাখ ৩০ হাজার একর। অন্যদিকে নিট আবাদি জমির পরিমাণ ২০১৯ সালে কমে দাঁড়িয়েছে এক কোটি ৮৬ লাখ ৮১ হাজার একর, যা ২০০৮ সালে ছিলো এক কোটি ৯০ লাখ ৯৭ হাজার। ফলে ১১ বছরে কৃষিজমি কমেছে ৪ লাখ ১৬ হাজার একর। প্রতি বছরে আবাদি জমি কমেছে প্রায় ৩৭ হাজার ৮১৮ একর করে। দেশে কৃষিজমি আবাদে ব্যবহার করা হচ্ছে এক লাখ ৭৮ হাজার ট্রাক্টর, ৩ লাখ ৫৫ হাজার পাওয়ার টিলার ও ৯ লাখ ১৬ হাজার ফসল মাড়াই যন্ত্র। এটা সত্য বিশ্বব্যাপী খাদ্যোৎপাদন কমতির দিকে-এই বিষয়টি কতোটা উদ্বেগজনক। এশিয়া ও আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশে ব্যাপক খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা রয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) জানিয়েছে, বাইরে থেকে সরবরাহ নিশ্চিত করতে না পারলে আগামী বছর দেশগুলোয় খাদ্য ঘাটতি বড় সংকটের আকার নেবে।

অন্যদিকে, ‘মারাত্মক খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার হুমকিতে থাকা এসব দেশের তালিকায় বাংলাদেশেরও নাম রয়েছে।’ সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধিতে যেমন কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে, তেমনিভাবে কৃষিতে আগ্রহ বাড়াতেও নিতে হবে যথাযথ পরিকল্পনা এবং তার বাস্তবায়নও ঘটাতে হবে। উদ্বিগ্ন এ পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে দেশের এক ইঞ্চি জমিও যাতে অনাবাদি না থাকে সেই বিষয়ের ওপর জোর দিয়েছেন। কৃষিকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে দেশের বেশির ভাগ মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে না। খোদ কৃষকরাও তাদের সন্তানদের এ পেশায় আনতে উৎসাহী নন বলেও আলোচনায় উঠে আসছে। মূল্যস্ফীতির কারণে অন্য খাতগুলোর মতো কৃষি উৎপাদনেও কৃষকের খরচ এখন আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। আর এ পরিস্থিতিতে কৃষিতে নতুন করে আগ্রহ বাড়ানো সরকারের জন্য এখন অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। এক সময়ে দেশের ৮৫ শতাংশ মানুষ কৃষি কাজে জড়িত থাকলেও পর্যায়ক্রমে তা কমে ৪৮ শতাংশে নেমে এসেছে। মূলত নতুন প্রজন্ম ও কৃষকগোষ্ঠীর পরিবার নানা প্রতিকূলতায় এ খাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ফলে পরিস্থিতি মোকাবেলায় উৎপাদন বাড়ানো জরুরি। আর সেই লক্ষ্যে চাষাবাদের আগ্রহ বাড়ানো জরুরি। পাশাপাশি বাড়াতে হবে কৃষিজমি। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এর বিকল্প নেই।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More