সম্প্রতি জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে অর্থনীতিতে বড় ধাক্কার শঙ্কার বিষয় যেমন সামনে এসেছে, তেমনি নানা বিষয় আলোচনায় আসছে। এরই মধ্যে বাস ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি সামনে আসে। এ ক্ষেত্রে উল্লেখ্য, সরকার, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও মালিক সমিতির পক্ষ থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দেয়া হলেও গত সোমবার বাসে খেয়াল খুশিমতো বাড়তি ভাড়া আদায় করা হয়েছে বলে খবরে উঠে এসেছে। বাস্তবে ‘কঠোর ব্যবস্থা’ নিতে দেখা যায়নি কাউকে- এমন তথ্যও উঠে এসেছে। এছাড়া মুষ্টিমেয় বাসে জরিমানা আদায়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল যাবতীয় তৎপরতা। ভাড়া নৈরাজ্য ঠেকাতে এসব হুঁশিয়ারি লোক দেখানো কিনা, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। সঙ্গত কারণেই আমরা মনে করি, সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই।
বাস ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে- আর এতে কীরূপ প্রভাব পড়বে জনজীবনের ওপর- সেটা যেমন আমলে নেওয়ার বিকল্প নেই, তেমনি সংশ্লিষ্টদের এই বিষয়টিও এড়ানো যাবে না যে, বাস ভাড়া আদায়ে নৈরাজ্য হলে তা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। এর আগেও গণপরিবহণে ভাড়া আদায় কিংবা সার্ভিস সংক্রান্ত নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এমন ঘটনাও ঘটেছে যে, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর কারণে সব গণপরিবহণের ভাড়া বাড়িয়েছিল সরকার। কিন্তু দুঃখজনক হলেও, সে সময়ও সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে সারাদেশে বেশি ভাড়া আদায় করার অভিযোগ উঠেছিল। এমনকি আন্তঃজেলা বাসের ভাড়া নিয়ে চলছে চরম নৈরাজ্য-এমন খবরও পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে উঠে এসেছিল।
জানা যাচ্ছে, সরকারিভাবে নতুন করে বড় ধাপে গণপরিবহণের ভাড়া বাড়ানোর পর বাস শ্রমিকরা তার চেয়ে বেশি টাকা আদায় করায় যাত্রী ক্ষোভও হুহু করে বাড়ছে। তথ্য মতে, বিভিন্ন রুটে গণপরিবহণ শ্রমিকদের সঙ্গে যাত্রীদের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় এমনকি হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে। খবরে উঠে এসেছে, সোমবার রাজধানীর মিরপুর, গাবতলী, আসাদগেট, ফার্মগেটসহ বিভিন্ন এলাকায় আগের দুইদিনের তুলনায় বাসের সংখ্যা কিছুটা বেশি ছিল। যাত্রীরা জানিয়েছেন, তাদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হয়েছে। প্রতিবাদ করলে পরিবহণ শ্রমিকরা যাত্রীদের হেনস্তা করার চেষ্টা করেছে। কাউকে কাউকে জোর করে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে- এমনটিও খবরে উঠে এসেছে। আর এসব নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
আমরা উলেস্নখ করতে চাই, বাড়তি ভাড়া গোনাতেই অধিকাংশ যাত্রীর কণ্ঠে অসহায়ত্বের সুর। তাদের ভাষ্য, আয় বাড়েনি কিন্তু ছোট ছোট পরিবহণেও ভাড়া বেড়েছে। এটি তাদের ওপর একটি বিশাল চাপ তৈরি করেছে। আবার যদি নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি দিতে হয় তবে পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবন করা জরুরি। আমরা মনে করি, ভাড়া আদায়ে কোনো প্রকার নৈরাজ্য সৃষ্টি না হয় সেটি মনিটরিং করতে হবে। জিম্মি করে বেশি ভাড়া আদায় করতে যেন কোনো প্রকার তৎপরতা না হয় সেটিও নিশ্চিত করতে হবে। বিভিন্ন সময়ে ঘটনাগুলো আমলে নেওয়া এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে ভাড়া আদায়ে যেন কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা না হয় সেটি নিশ্চিত করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্টদেরই।
বলা দরকার, যে কোনো কিছুর মূল্যবৃদ্ধিতে জনজীবনের ওপর প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ে। ফলে বাস ভাড়া আদায়ে যেন কোনো প্রকার অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা না হয় সেটি যেমন নিশ্চিত করতে হবে, তেমনি প্রয়োজনীয় মনিটরিংয়ের বিকল্প নেই। আমলে নেওয়া দরকার, এমন বিষয়ও আলোচনায় এসেছে, বেশ কয়েক মাস থেকে নিত্যপণ্যসহ প্রায় সবখানেই উচ্চমূল্য দিয়ে আসা মানুষকে শিগগিরই আবার বাস ভাড়ায় ‘নতুন নতুন দরের’ মুখোমুখি হতে হবে- যার শুরু হলো বর্ধিত বাস ভাড়া দিয়ে।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, যখন বাস ভাড়া বাড়ল তখন যেন গণপরিবহণের ইচ্ছামতো ভাড়া আদায় করা না হয় সেটি আমলে নেওয়া জরুরি। এ ক্ষেত্রে সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে যত দ্রুত সম্ভব করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগী হতে হবে। কেউ যেন মানুষকে জিম্মি করে ইচ্ছামাফিক ভাড়া আদায় করতে না পারে সেই লক্ষ্যে মনিটরিং জোরদার করতে হবে। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।325