ভয়াবহ ও হৃদয়বিদারক ঘটনা যেন পুনরাবৃত্তি না হয়

সম্পাদকীয়

কোনোভাবেই যেন দুর্ঘটনা রোধ হচ্ছে না। একের পর এক ভয়াবহ সব দুর্ঘটনায় মানুষ চলে যাচ্ছে না ফেরার দেশে। বাড়ছে লাশের সংখ্যা। জাতীয় শোক দিবসে পুরো জাতি যখন শোকে মূহ্যমান, তখন এলো আরও দুটি শোকাবহ খবর। এর মধ্যে একটি রাজধানীর চকবাজারে অগ্নিকা-ে ৬জন ও আরেকটি উত্তরায় নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের গার্ডার ধ্বসে একই পরিবারের ৫ জনের মৃত্যু। রাজধানীর উত্তরায় প্রাইভেট কারের ওপর ফ্লাইওভারের গার্ডার পড়ে ৫ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন আরও দুজন। নিহতদের মধ্যে ৪ বছর ও ৬ বছরের দুই শিশু রয়েছে। সোমবার বিকেলে জসিম উদ্দীনের প্যারাডাইস টাওয়ারের সামনে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা সবাই একই পরিবারের সদস্য। এ দুটি ঘটনাই অনাকাক্সিক্ষত। এর মধ্যে চকবাজারে প্রায়ই আগুনের খবর পাওয়া যায়। আগুনের ঘটনায় ৬ ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস। সেখানে কেমিক্যাল পদার্থ মজুদ থাকায় হতাহতের সংখ্যাও অনেক বেশি হয়।

এরপরও পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যাল গোডাউন সরানো যায়নি। এটাকে ব্যর্থতা বলেই স্বীকার করতে হবে। অন্যদিকে সাধারণ মানুষের চলাচলের রাস্তায় কোনো ধরনের নিরাপত্তা ছাড়াই নির্মাণকাজ চালু রাখার খেসারত দিতে হলো ৫ জনকে। একই পরিবারের ৫ জন নিহত হওয়ার ক্ষত পরিবারটিকে আজীবন বহন করতে হবে। এর দায় কে নেবে? এসব কার্যক্রম পরিচালনায় আরও বেশি সতর্ক হওয়ার বিকল্প নেই। একইসাথে কোনো পক্ষের গাফিলতি রয়েছে কিনা সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে। সেজন্য যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে আমরা সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানাই।

আমরা বলতে চাই, এই ধরনের ঘটনা কতটা ভয়ানক এবং ভীতিপ্রদ বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে তা আমলে নেয়ার বিকল্প থাকতে পারে না। এমন আলোচনায় উঠে এসেছে যে, কয়েক বছর ধরে চলা বিআরটি প্রকল্পের কাজ অবহেলাজনিত এক ধরনের মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। সঙ্গত কারণেই সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, এই ঘটনাটি আমলে নেয়ার এবং এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করাসহ কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করা। এবারের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জানা গেছে, উত্তরা সেক্টর-৩ এর প্যারাডাইস টাওয়ারের সামনে বিআরটি প্রকল্পের এলিভেটেট এক্সপ্রেসওয়ের বক্সগার্ডার ক্রেন দিয়ে সরানোর সময় নিচে পড়ে যায়। গার্ডারটি একটি প্রাইভেট কারের ওপর পড়ে।

অপর এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, পুরান ঢাকার চকবাজারে একটি প্লাস্টিক কারখানায় আগুন লেগে ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। আগুনে পোড়া ভবন থেকে ছয়জনের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ওই কারখানায় কীভাবে আগুনের সূত্রপাত হলো, সে বিষয়ে কোনো ধারণা দিতে পারেননি ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। আগুন আশপাশ এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট কাজ করেছে। সোমবার দুপুর ১২টার দিকে লাগা এ আগুন দুই ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে আসে। কারো কারো মতে গ্যাস সিলিন্ডার থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। আগুনে ছয়জনের মৃত্যু হওয়ার ঘটনা অত্যন্ত মর্মান্তিক।

এর আগে রাজধানীর কল্যাণপুরের নতুন বাজার ও মহাখালী বস্তিতে আগুন লাগে। চট্টগ্রামে মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে তিনটি অগ্নিকা-ে পুড়েছে ছয়টি বস্তি। এক বছর আগে ভেড়ামারা বস্তিতে এমনই এক অগ্নিকা-ে পুড়েছিল ৯টি তাজা প্রাণ। এসব ঘটনা তদন্তে প্রতিষ্ঠানগুলোর আন্তরিকতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বস্তির বাসিন্দারা বরাবরই অভিযোগ করে আসছে, উদ্দেশ্যমূলকভাবে কেউ বস্তিতে আগুন দিয়ে তাদের স্বপ্ন পুড়ে ছাই করে দিয়েছে। আমরা বলতে চাই, অগ্নিকা-ের ঘটনাগুলো আমলে নিয়ে সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করতে হবে। একের পর এক ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটতে থাকবে এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, যখন এই ধরনের ভয়াবহ ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে- তখন তা কতোটা আশঙ্কাজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে বলাই বাহুল্য। সঙ্গত কারণেই এবারের ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করার পাশাপাশি এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। প্রকল্প এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারে পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়টি আমলে নিতে হবে। এছাড়া কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়ায় এবারের দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ- এই বিষয়টিকেও এড়ানোর সুযোগ নেই। দুর্ঘটনায় একের পর এক ঝরে যাবে তরতাজা প্রাণ-এই পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়ানক। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে এমন ভয়াবহ ও হৃদয়বিদারক ঘটনার পুনর্রাবৃত্তি রোধে সব ধরনের পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More