রমজানে নিত্যপণ্যের দাম আশ্বাসেই সীমাবদ্ধ

সম্পাদকীয়

প্রতি বছর রমজান এলে বেশকিছু নিত্যপণ্য বিশেষ করে সেহরি ও ইফতার সামগ্রীর দাম কয়েক গুণ বেড়ে যায়। রমজান সামনে রেখে ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসায়িক ফাঁদ পেতে থাকেন। কিন্তু দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের নজরদারি থাকে খুব দুর্বল। এতে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে যায়। এ বছর রমজানের আগেই নিত্যপণ্যের দাম অসহনীয় হয়ে পড়েছে। ডলার সঙ্কটে যথাসময়ে এলসি খুলতে না পারায় আমদানি নির্ভর ভোগ্যপণ্যের দাম তাই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। রমজানে ইফতারসামগ্রী তৈরিতে সাধারণত ছোলা, অ্যাঙ্কর ডাল ও বেসন বেশি ব্যবহার হয়। রোজার দুই সপ্তাহ বাকি থাকলেও এরই মধ্যে এসবের দাম বেড়ে গেছে। গত এক মাসে ছোলার দাম বেড়েছে কেজিতে ১০-১৫ টাকা। অ্যাঙ্কর ডাল কেজিতে ১০ টাকার মতো বেড়েছে। পাকিস্তানি কাবলি বুট গত বছর বিক্রি হয়েছিলো ১৪০-১৬০ টাকা কেজি দরে। এবার এর কেজি ২৪০-২৫০ টাকা। টিসিবির তথ্য মতে, গত এক মাসে ছোলার দাম প্রায় ছয় গুণ এবং এক বছরে ২৩ শতাংশ বেড়েছে। অ্যাঙ্কর ডাল এক বছরে কেজিতে বেড়েছে প্রায় ৪৮ শতাংশ। বছরে ছোলার চাহিদা দুই থেকে আড়াই লাখ টন। রমজানে প্রয়োজন হয় ৭০-৮০ হাজার টন। দেশে বছরে ৬০-৭০ হাজার টন খেজুরের চাহিদা রয়েছে। পুরোটা আমদানিনির্ভর। সারা বছর যে খেজুর প্রয়োজন হয়, এর চেয়ে তিন থেকে চার গুণ চাহিদা বাড়ে রমজানে। দরকার হয় ৪০-৫০ হাজার টন। তবে ডলার সঙ্কটে আমদানিকারকরা দেরিতে এলসি খোলায় এবার রমজানে খেজুরের দাম ২৫-৩০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে ইঙ্গিত দেন ব্যবসায়ীরা। এরপর কেজিতে ২০-৩০ টাকা বেড়ে সপ্তাহ দুয়েক ধরে সাধারণ মানের খেজুর বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৬০ টাকায়। টিসিবির বাজারদর বলছে, খেজুরের দাম এক বছরে বেড়েছে ২০ শতাংশ।

করোনার পর থেকে ভোজ্যতেলের বাজারে শুরু হয় অস্থিরতা। এখনো সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত। বেশির ভাগ সময় সরকারের বেধে দেয়া দাম উপেক্ষিত হয়েছে। ১৫-২০ দিন ধরে পাইকারি বাজারে খোলা সয়াবিন ও পামঅয়েলের দর দুই-এক টাকা করে বাড়ছে। খুচরা বাজারেও একই প্রবণতা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য, দেশে ১৮-২০ লাখ টন ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে তিন থেকে চার লাখ টন তেলের দরকার হয় রমজানে। রমজানে ভোজ্যতেলের চাহিদা বাড়ে। গত ছয় মাসে চারবার দাম বাড়ানোর পরও চিনির বাজারের হইচই থামেনি। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি চিনি আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৩০ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশে নামিয়েছে এনবিআর। তবে এখনো খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি খোলা চিনি ১১৫-১২০ এবং প্যাকেটজাত চিনি ১১২-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সরকারি হিসাবে গত এক বছরে চিনির দাম প্রায় ৪৯ শতাংশ বেড়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাঁচ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৩০-৪০ এবং আমদানি করা পেঁয়াজ ৩৫-৪৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মাছ-গোশত এখন অনেকটা স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে। মধ্যবিত্তরাও কিনতে দ্বিধায় পড়ছেন। মুরগির বাজার দেড় মাস ধরে অস্থির। ডিমের বাজারও বেশি। টিসিবির তথ্য বলছে, এক বছরে ব্রয়লারের দাম ৮৫, ডিম ১৬ এবং রুই মাছের দাম প্রায় ৩৫ শতাংশ বেড়েছে। লেবু আমদানি করতে হয় না। তবু হঠাৎ করে অস্থির লেবুর বাজার। বছরের অন্য সময়ের চেয়ে রমজানে বেগুনের চাহিদা বাড়ে কয়েক গুণ। এবার রমজানের আগে বেগুনের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। শসার টান নেই; অথচ দাম তুলনামূলক বেশি। কাঁচামরিচের দামও চড়া। যদিও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর মতবিনিময় সভা এবং জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের একাধিক বৈঠকে ব্যবসায়ীরা ‘আশ্বাস’ দিয়েছিলেন, রমজান ঘিরে নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে না; সেই ‘আশ্বাস’ আশ্বাসেই সীমাবদ্ধ। বাস্তবে রমজান শুরুর আগে আরেক দফা বেড়েছে কয়েকটি নিত্যপণ্যের দাম। ইফতার সামগ্রীতে ব্যবহৃত পণ্যের দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। কয়েকটির দাম এতোটাই বেড়েছে যে, অনেকের নাগালের বাইরে চলে গেছে। এই যখন নিত্যপণ্যের বাজারের অবস্থা, তখনো সরকারের কোনো হেলদোল নেই। মূলত দুর্বল বাজারব্যবস্থাপনার কারণে সাধারণ মানুষের পকেট থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More