শীত ও গ্রীষ্মের মধ্যে বসন্তের দেখা নেই

সম্পাদকীয়

আর কয়েক দিন পরে শুরু হবে গ্রীষ্মকাল। আবহাওয়াবিদদের শঙ্কা, এবার দেশে প্রচ- গরম পড়তে পারে। বলা হচ্ছে- তাপপ্রবাহ অসহনীয় পর্যায়ে যেতে পারে। প্রচ- তাপপ্রবাহে অস্থির হয়ে পড়তে পারে জনজীবন। এর আলামত হিসেবে দেখা যাচ্ছে, এখন ভরা বসন্তে নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া উবে গিয়ে তাপমাত্রার পারদ চড়ছে প্রতিদিন। শীত ও গ্রীষ্মের মধ্যে বসন্তের দেখা নেই। অবস্থা এমন যে, গত বৃহস্পতিবার কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে দেশের সর্বোচ্চ প্রায় ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। ঢাকায় ৩৪ দশমিক ১। তাপমাত্রা এখন বাড়তে থাকবে। তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকতে পারে। এ মাসের শেষের দিকে দেশের পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ওপর দিয়ে দু’-তিনটি মৃদু (৩৬-৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বা মাঝারি (৩৮-৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। দুই থেকে তিনটি মাঝারি আকারের ও এক থেকে দুটি তীব্র কালবৈশাখী আঘাত হানতে পারে।

আবহাওয়ার পূর্বাভাসে আরো বলা হয়েছে, এপ্রিল মাসে তীব্র তাপপ্রবাহ, সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় আর কালবৈশাখী ও বজ্রঝড়ের দাপট থাকবে। এপ্রিল মাসটি বাংলাদেশের জন্য এক ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সময় হয়ে আসছে। তাপমাত্রার তীব্রতা এপ্রিলে চরমভাবাপন্ন থাকতে পারে, বিশেষ করে দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে। ওই অঞ্চলে তাপপ্রবাহ বইতে পারে; যা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যেতে পারে। এমনিতেই বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে জলবায়ুর বিরূপ প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশের ওপর বেশ কয়েক বছর ধরে পরিলক্ষিত হচ্ছে। গত আট বছর ধরে এল-নিনোর প্রভাবে প্রতি বছর প্রকৃতির বিরূপ আচরণের মুখোমুখি হতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। গত বছরও দেশ দেখেছে প্রকৃতির বৈরী আচরণ। ভূ-ম-লীয় উষ্ণতা বৃদ্ধির সাথে এল-নিনোর প্রভাবে আসন্ন গ্রীষ্ম মৌসুমে বাংলাদেশ রেকর্ড তাপপ্রবাহের কবলে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের একদল বিশেষজ্ঞ। তাদের মতে, প্রশান্ত মহাসাগরের এল-নিনোর প্রভাবে জলতলের তাপমাত্রাও বেড়ে গেছে। ফলে ভারত মহাসাগর, আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরে জলীয়বাষ্পের জোগানে টান পড়েছে। এদিকে জাতিসঙ্ঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও) বলছে, গত ১০ মাসে বায়ুম-লের গড় তাপমাত্রা দীর্ঘমেয়াদি গড়ের চেয়ে শূন্য দশমিক ৫৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা কোনো নিশ্চল অবস্থায় নেই। এ ধারা অব্যাহত থাকলে বার্ষিক গড় তাপমাত্রা অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে।

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ শীর্ষ ১০-এ রয়েছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ায় আমাদের দেশে প্রতিনিয়ত আবহাওয়া চরমভাবাপন্ন হয়ে উঠছে। ফলে দেশে আবহাওয়ার তারতম্য ঘটছে। উষ্ণতার হার বাড়ছে ব্যাপকভাবে। আবার শীতও অনুশাসন মানছে না। এসব চিহ্ন দেখে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এবার তাপমাত্রা অব্যাহতভাবে বাড়তে পারে। এ মাসে দিন ও রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকতে পারে। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময় থেকে তাপমাত্রা বাড়ছে। মার্চে তাপমাত্রা গত বছরের মার্চ মাসের চেয়ে বেশি হতে পারে। লক্ষণীয়, প্রতি বছর গরমের সময় পানির জন্য হাহাকার পড়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। উপকূলবর্তী জনপদে যেমন, তেমনি শহরাঞ্চলেও পানিসঙ্কট তীব্র হয়ে ওঠে। খাবার পানির জন্য মানুষজনকে বিপাকে পড়তে হয়। শুধু পানি নয়, এবার গ্রীষ্মে বিদ্যুতের তীব্র লোডশেডিং হতে পারে। কারণ, হিসেবে বলা হচ্ছে- ডলার সঙ্কটে বিদ্যুতের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানি করা যাচ্ছে না। ফলে আসন্ন গ্রীষ্মে বাড়তি বিদ্যুৎ জোগান দেয়া সম্ভব হবে না। এতে অনিবার্যভাবে শহরাঞ্চলে জনজীবন আরো বিপন্ন হবে। কিন্তু সরকারের যে প্রস্তুতি তাতে মনে হয় না পানি ও বিদ্যুৎ সঙ্কট সামাল দিতে পারবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More