সারের বাজারে নৈরাজ্য সৃষ্টি উদ্বেগজনক

সম্পাদকীয়

আমন মরসুম সামনে রেখে সারের বাজারে নৈরাজ্য সৃষ্টির সংবাদ উদ্বেগজনক। মূলত ডিলার পর্যায়ে কারসাজির মাধ্যমে সারের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে নৈরাজ্য সৃষ্টির অভিযোগ উঠেছে। এতে তীব্র সার সংকটে কৃষক দিশেহারাবোধ করছেন, যা কোনোমতেই কাম্য নয়। জানা যায়, দেশে চাহিদার বিপরীতে ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি, এমওপিসহ সব ধরনের সারের পর্যাপ্ত মজুত আছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, জুলাই-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলতি আমন মরসুমে দেশে ইউরিয়া সারের চাহিদা ৬ লাখ ১৯ হাজার টন। বিপরীতে দেশে মজুত রয়েছে ৬ লাখ ৪৫ হাজার টন, যা প্রয়োজনের চেয়ে প্রায় ২৬ হাজার টন বেশি। অন্যান্য সার যেমন-টিএসপির আমন মরসুমে চাহিদা এক লাখ ১৯ হাজার টন; বিপরীতে মজুত রয়েছে ৩ লাখ ৯৪ হাজার টন; ডিএপির চাহিদা ২ লাখ ২৫ হাজার টন; বিপরীতে মজুত ৭ লাখ ৩৬ হাজার টন এবং এমওপির চাহিদা ১ লাখ ৩৭ হাজার টনের বিপরীতে মজুত রয়েছে ২ লাখ ৭৩ হাজার টন। এ অবস্থায় কৃত্রিমভাবে সারের সংকট তৈরি করে কেউ যেন ফায়দা লুটতে না পারে, এজন্য সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে। কৃষি মন্ত্রণালয় ও মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের তদারকি বৃদ্ধির পাশাপাশি কৃত্রিম সংকট সৃষ্টিকারীদের শাস্তির আওতায় আনা জরুরি।

বস্তুত ইউরিয়া সারের দাম কেজিতে ছয় টাকা বাড়ানোর পর থেকেই সারের বাজারে নৈরাজ্য শুরু হয়েছে। এ ধারাবাহিকতায় অন্যান্য সারের দামও কেজিতে অন্তত চার-পাঁচ টাকা বেড়ে গেছে। দুশ্চিন্তার বিষয় হলো, এবার বর্ষা মৌসুমে প্রত্যাশিত বৃষ্টিপাত হয়নি। এতে আমান চাষ অনেকটাই সেচনির্ভর হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় ইতঃপূর্বে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় এবার আমন চাষ নিয়ে বিপাকে আছেন দেশের কৃষক। এমন একটি মুহূর্তে সার নিয়ে যে কারসাজি শুরু হয়েছে, তাতে আমন চাষ আরও অনেক কঠিন হয়ে পড়বে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এবার আউশের উৎপাদন মার খেয়েছে। বন্যা ও খরার কারণে আমনের চাষ দেরিতে শুরু হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, ইউরিয়া সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমন চাষ কম হবে। এতে সংগত কারণে উৎপাদনও কম হবে। শুধু তাই নয়, এ কারণে আগামী দিনে বোরো উৎপাদনও ব্যাহত হতে পারে।

উল্লেখ্য, কোনো একটি সারের দাম বেড়ে গেলে কৃষক তা পুষিয়ে নিতে অন্য সারের ব্যবহারও কমিয়ে দেয়। ডিজেল ও সারের বাড়তি মূল্যের সঙ্গে কৃষি উপকরণ ও শ্রমিকের বাড়তি মজুরি যোগ হওয়ায় কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমন চাষে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে উল্লেখ করে কৃষি উৎপাদন গবেষকরা আশঙ্কা করছেন, এতে ধানের উৎপাদন কমে গিয়ে চালের আমদানি বাড়লে কৃষক আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

বাজার নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সরকারের শক্ত কোনো ভূমিকা নেই-এ অভিযোগ দীর্ঘদিনের। শুধু সার নয়, দেশে নানা অপকৌশলে ভোক্তাদের ঠকানো ছাড়াও কারসাজি ও যোগসাজশের মাধ্যমে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়ার ঘটনা অহরহ ঘটছে। এটি অনৈতিক তো বটেই; একই সঙ্গে অপরাধও। অতীতে নানা উপলক্ষ্যে প্রায়ই বাজার অস্থিতিশীল করার অপপ্রয়াস চালানো হয়েছে। বস্তুত এরই ধারাবাহিকতায় এবার আমন মরসুমে সার নিয়ে ডিলারদের অপতৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা শক্তহাতে নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More