চীনের নজিরবিহীন সামরিক মহড়া শুরু : অবরুদ্ধ তাইওয়ান

যুক্তরাষ্ট্রের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির সফরের জের : যুদ্ধের দামামা

মাথাভাঙ্গা মনিটর: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরের জের ধরে চীন-তাইওয়ান যুদ্ধ বেধে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এরই মধ্যে তাইওয়ানের চারপাশ ঘিরে চীন নজিরবিহীন সামরিক মহড়া শুরু করেছে। চীন এ ‘লাইভ-ফায়ার’ সামরিক মহড়ায় অত্যাধুনিক হাইপারসনিক ডিএফ-১৭ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারেরও ঘোষণা দিয়েছে। এরই মধ্যে গতকাল তারা উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব সাগরের যুদ্ধজাহাজ থেকে দফায় দফায় তাইওয়ান সীমারেখার ওপর দিয়ে দংফেং ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। পাশাপাশি আকাশপথে মহড়া দিয়েছে চীনা জে-২০ স্টিলথ জঙ্গিবিমান। একই সঙ্গে তাইওয়ানের আকাশে ওড়ানো হয়েছে চীনা ড্রোন এবং চালানো হয়েছে সাইবার হামলা। অন্যদিকে তাইওয়ানের পক্ষে চীনের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিমানবাহী রণতরী জাপান থেকে তাইওয়ানের উপকূলবর্তী ফিলিপিন্স সাগরের দিকে রওনা হয়েছে বলে মার্কিন নৌবাহিনী জানিয়েছে।

চীনা মহড়া সম্পর্কে গতকাল কম্বোডিয়া সফররত চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াংই বলেন, তাইওয়ানে পেলোসির সফর ছিল একটি ‘সম্পূর্ণ প্রহসন’। যুক্তরাষ্ট্র তথাকথিত ‘গণতন্ত্রের’ আড়ালে চীনের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনে জঘন্য কাজ করছে। তাইওয়ানের স্বাধীনতার নামে বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ সহায়তায় জাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছে। কিন্তু ‘এক চীন’ নীতিকে কেউ বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না এবং তাইওয়ান মাতৃভূমিতে ফিরে আসবে। যারা আগুন নিয়ে খেলে এবং চীনের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করবে তাদের অবশ্যই শাস্তি দেওয়া হবে। এদিকে চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমে জানানো হয়েছে, তাইওয়ানের চারপাশে ছয়টি জায়গায় চীনা সামরিক মহড়া চলছে। এর আগেই চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বিবৃতিতে জানিয়েছিল, তাইওয়ানের উত্তর, দক্ষিণ-পশ্চিম ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে যৌথভাবে আকাশ ও সমুদ্রে চীনের মহড়া চলবে। তাইওয়ান প্রণালিতে দীর্ঘ পাল্লার ‘লাইভ-ফায়ারিং’ করা হবে। প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, আনুষ্ঠানিকভাবে গতকাল স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ৫৬ মিনিটে এসব ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া শুরু হয়। মহড়াটি তাইওয়ান দ্বীপের ১২ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে হচ্ছে। অন্যদিকে তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চীনের ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার প্রতিক্রিয়ায় তারা সংশ্লিষ্ট প্রতিরক্ষা পদ্ধতি সচল করেছে। তাইওয়ানের উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব সাগরে চীন বেশ কয়েকটি দংফেং ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে।

এদিকে মার্কিন নৌবাহিনীর খবর অনুযায়ী, ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের ফ্লাইট ট্র্যাক করতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের এমন একটি বিমানবাহী রণতরী জাপান থেকে এরই মধ্যে তাইওয়ানের উপকূলবর্তী ফিলিপিন্স সাগরের দিকে রওনা হয়েছে। তাইপে থেকে গণমাধ্যম কর্মীরা জানান, এ অবস্থায় তাইওয়ানের রাজধানীতে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক আছে, লোকজন শান্ত থাকলেও তারা উদ্বিগ্ন। আরেক খবর অনুযায়ী, তাইওয়ানের চারপাশ ঘিরে চীন যে বিশাল এবং নজিরবিহীন সামরিক মহড়া চালাচ্ছে তাতে অত্যাধুনিক হাইপারসনিক ডিএফ-১৭ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চীন প্রথমবারের মতো তাইওয়ান দ্বীপের ওপর দিয়ে এ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করতে যাচ্ছে। চীন বলেছে, তাদের এ মহড়া ৭ আগস্ট দুপুর পর্যন্ত চলবে। চীনা গণমাধ্যম জানিয়েছে, যৌথভাবে অবরোধ সৃষ্টি, সমুদ্র অভিযান এবং স্থল ও আকাশ পথের যুদ্ধের মহড়া চালাচ্ছে চীনা সামরিক বাহিনী। মহড়ায় চীনের জে-২০ স্টিলথ জঙ্গিবিমান অংশ নিচ্ছে। চীনের পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ড জানিয়েছে, তারা তাইওয়ান দ্বীপের উত্তর, দক্ষিণ-পশ্চিম এবং দক্ষিণ-পূর্ব এলাকায় ‘লাইভ-ফায়ার’ যুদ্ধের মহড়া পরিচালনা করছে। ছয়টি স্পটেই চীনা সামরিক বাহিনী তাজা গুলি ব্যবহার করছে। তাইওয়ানের মন্ত্রিসভার মুখপাত্র মহড়ার তীব্র নিন্দা করেছেন। তাদের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রেসিডেন্ট দফতরের ওয়েবসাইটে হ্যাকাররা হামলা চালিয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেন। চীনের নজিরবিহীন এ সামরিক মহড়া যে-কোনো সময় সংঘাতে রূপ নিতে পারে। চীন তাদের ভূমি, সমুদ্র ও আকাশ পথে অবরুদ্ধ করে ফেলতে চাইছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, যদি চীন তাইওয়ানের দাবি করা ১২ নটিক্যাল মাইল এলাকায় যুদ্ধজাহাজ কিংবা যুদ্ধবিমান পাঠায়, তাহলে তা তাইওয়ানের মধ্যে ঢুকে আগ্রাসন চালানোর শামিল হবে। আরেক খবরে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির সফরের পরদিন হ্যাকাররা তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে সাইবার হামলা চালিয়েছে। দ্বীপটির প্রত্যন্ত অঞ্চলের ওপর দিয়ে ড্রোন উড়ে গেছে। পেলোসির সফর চীনকে অত্যন্ত ক্ষিপ্ত করে তোলায় এসব ঘটছে বলে মনে করা হচ্ছে। সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকারের সফর কেন্দ্র করে চীন সবচেয়ে দ্রুত যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, তা হলো তাইওয়ান ঘিরে থাকা অঞ্চলগুলোয় সামরিক মহড়া চালানো। মহড়া থেকে আসল গোলা ছোড়া হচ্ছে; যা তাইওয়ানের উপকূল থেকে দূরত্ব মাত্র ২০ কিলোমিটার। তাইওয়ান উপত্যকায় সামরিক মহড়ায় দূরপাল্লার গোলাও ছোড়া হচ্ছে। সিঙ্গাপুরের এস রাজারত্নম স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সহযোগী গবেষক ফেলো জেমস চার বলেন, পেলোসির এ সফর চীনের জনগণের কাছে দেশটির শাসকদের জাতীয়তাবাদের ঝা-া তুলে ধরার সুযোগ করে দেবে। কারণ বেইজিং নিজেদের মানুষের কাছে দুর্বল হিসেবে দেখতে চায় না। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি তাইওয়ানের পর এখন আরেক মার্কিন মিত্র দক্ষিণ কোরিয়া সফর করছেন।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More