স্টাফ রিপোর্টর: নিরাপত্তা সহায়তা নিয়ে বাংলাদেশকে মানবাধিকার সুরক্ষার শর্ত দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র এক চিঠিতে গত ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে শর্তযুক্ত সম্মতিপত্রে সই করার আহ্বান জানিয়েছিল। ওই চিঠিতে এটাও বলা হয়, ১ জানুয়ারি ২০২২ সাল থেকে ‘লেহি ল’ নামের আইনটি কার্যকর হয়ে যাবে। তার আগে সম্মতিপত্রে সই না করলে নিরাপত্তা সহায়তা বন্ধ হতে পারে বলেও ইঙ্গিত করা হয়। বাংলাদেশ অবশ্য এ ব্যাপারে আরও সময় চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে জবাব পাঠিয়েছে। জবাবে ঢাকার তরফে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের মানদ- পালন যথাযথ না হলে বাংলাদেশকে সহায়তা বন্ধের আগে জানাতে হবে। এদিকে রোববার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সাম্প্রতিক বিভিন্ন ইস্যুতে বিদেশি কূটনীতিকদের ব্রিফ করেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে আমরা বদ্ধপরিকর। ব্রিফিংকালে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, এলজিআরডি মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও ৪০ জন বিদেশি কূটনীতিক এতে উপস্থিত ছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের লেহি ল-এর শর্তে বাংলাদেশ সম্মতি জানাবে কি না জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক রোববার বলেন, ‘আমরা বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখছি। এটি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কি না, সেটি বিবেচ্য।’ তিনি জানান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সময় চেয়েছে। এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন যুগান্তরকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে।’ তিনি বিষয়টি নিয়ে আর বিস্তারিত কিছু জানাতে অস্বীকার করেন। যুক্তরাষ্ট্র লেহি ল নামের আইনে সংশোধনী আনতে যাচ্ছে। এতে নির্যাতন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-, গুম, ধর্ষণের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা যেসব সংস্থা ঘটাবে, তাদেরকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর এবং প্রতিরক্ষা দপ্তরের সহায়তা বন্ধ করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়। এসব শর্ত মানতে বাংলাদেশ সম্মত কি না, তা গত ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশকে জানানোর জন্য চিঠি দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশ তখন সময় চাইলে যুক্তরাষ্ট্র জানায়, ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ সিদ্ধান্ত না জানালে সহায়তা বন্ধ হয়ে যাবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র রোববার জানায়, ৩১ ডিসেম্বরের আগে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আরও সময় চাওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সম্মতিপত্রের খসড়া আইন মন্ত্রণালয় এবং নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর মতামতের জন্য পাঠানো হয়। আইন মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, বিষয়টি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর মতামত এখনো জানা যায়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের লেহি ল মোতাবেক, নিরাপত্তা বাহিনীর প্রশিক্ষণ, সামরিক সরঞ্জাম এবং অপরাপর সহায়তা পেতে হলে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে মানবাধিকার সুরক্ষা করতে হবে। ১৯৭৭ সাল থেকে বাংলাদেশ শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ৩৬৮ মিলিয়ন ডলার (৩ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা) সহায়তা নিয়েছে। অস্ত্র ও সরঞ্জাম সরবরাহ, সামর্থ্য বৃদ্ধি, পুলিশ, প্রতিরক্ষা বাহিনী, সীমান্ত ও নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ-এসব সহায়তার অংশ। এছাড়াও, সুশীলসমাজের সদস্যরা বিভিন্ন কর্মসূচির অধীনেও এসব সহায়তা লাভ করেছে। স্থিতিশীলতা রক্ষা, সন্ত্রাস দমন, আন্তঃদেশীয় অপরাধ দমন, মাদক পাচার বন্ধ প্রভৃতি খাতেও সহায়তা পাওয়া গেছে।
বাইডেন প্রশাসন মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে সম্প্রতি বাংলাদেশের এলিট ফোর্স র্যাব এবং তার কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। বাংলাদেশ বিষয়টি নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলারকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে আগে না জানিয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করায় ঢাকার অসন্তোষের কথা জানানো হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন টেলিফোনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেনকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান। এ বিষয়ে লবিং করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে ল ফার্ম নিযুক্ত করেছে বাংলাদেশ।
বিদেশি কূটনীতিকদের ব্রিফ : পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বিভিন্ন ইস্যুতে রোববার সকালে বিদেশী কূটনীতিকদের ব্রিফ করেছেন। এ সময় তিনি বলেন, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে আমরা বদ্ধপরিকর। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে নতুন বছরের শুভেচ্ছা বিনিময় করতে এই ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপনের বিষয় উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিগত বছর ছিল পুনরুদ্ধার এবং আশার বছর। মন্ত্রী এ সময় দারিদ্র্য বিমোচন, আর্থসামাজিক উন্নয়ন, অবকাঠামো উন্নয়ন, ডিজিটাইজেশন প্রভৃতি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উন্নতির উল্লেখ করেন। এক্ষেত্রে মহামারি মোকাবিলায় বাংলাদেশের সাফল্য এবং বিভিন্ন প্যাকেজ ঘোষণার কথা জানান। তিনি বলেন, মহামারি সত্ত্বেও গত বছর বাংলাদেশ পাঁচ দশমিক চার শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।
পূর্ববর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ