চুয়াডাঙ্গার গাড়াবাড়িয়ায় পূর্ব শত্রুতার জেরে বাড়িঘর ভাঙচুর ও বৃদ্ধাকে লাঞ্ছিত

স্টাফ রিপোটার: চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার গাড়াবাড়িয়া গ্রামে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে মধ্যযুগীয় কায়দায় বাড়ি-ঘর ভাঙচুর ও বৃদ্ধাকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ছয়জনের নামে মামলা দায়ের করেছে ভুক্তভোগী পরিবার।

জানা গেছে, সদর উপজেলার গাড়াবাড়িয়া গ্রামে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে গত বৃহস্পতিবার দিবাগত সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে বাগানপাড়ার আসাবুল হকের বাড়িতে হামলা ভাঙচুর করে একই গ্রামের মৃত আবু বকর সিদ্দিকের ছেলে আলমগীর সিদ্দিক নাছির, নাছিরের ভাই ও ভাস্তেসহ তার অনুসারীরা। এ ঘটনায় আসাবুল হকের স্ত্রী নাছিমা খাতুন বাদী হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।

ভুক্তভোগী নির্যাতিতদের অভিযোগের ভিত্তিতে গতকাল শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মধ্যযুগীয় কায়দায় দেশীয় অস্ত্র হেমার ও রামদা দিয়ে বাড়ির আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয়েছে। বিদেশি বেনিয়াদের মতো রান্না ঘরের হাড়ি-পাতিল, গ্যাসের চুলা, আলমারি, ড্রেসিং টেবিল, চেয়ার, রান্না করা ভাত, সাববক্স, চৌকি, খাঁট, টেলিভিশনসহ ব্যবহার্য জিনিসপত্র রামদা দিয়ে কুপিয়ে ও হ্যামার দিয়ে ভেঙে তছনছ করা হয়েছে।

মামলার বিবরণসূত্র দিয়ে আসাবুল হকের স্ত্রী নাছিমা খাতুন বলেন, সদর উপজেলার গাড়াবাড়িয়া মৃত আবু বকর সিদ্দিকের ছেলে আলমগীর সিদ্দিক নাছির (৩৮), আহসানুল কবির বসির (৪২), নুর আলম সিদ্দিক বকুল (৫৫), আনারুল সিদ্দিক নাজিম (৩২), আলম সিদ্দিক বকুলের ছেলে মো. অমিও (২২), মৃত মফিজ উদ্দিনের ছেলে কাওছার আলীর (৪২) সাথে জমি-জমা সংক্রান্তে পূর্ব শত্রুতা ছিলো। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে আহসানুল কবির (বসির) আমার ছোট দেবর ইকরামল হকের সাথে তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে তর্কবিতর্ক করে। তারই ধারাবাহিকতায় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তারা বেআইনভাবে সংঘবদ্ধ হয়ে লোহার রড, শাবল, লাঠি, হ্যামার, রামদা, শাবল ইত্যাদি দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ অনধিকারভাবে আমাদের বাড়িতে প্রবেশ করে। আমাদেরকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং বিভিন্ন হুমকি ধামকি প্রদান করে। তখন আমার শাশুড়ি রাহাতুন নেছা (৯৫) নিষেধ করলে তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে জখম করে। এক পর্যায়ে তারা আমার বসত ঘরের মধ্যে অনধিকারভাবে প্রবেশ করে ঘরের ভেতর বিভিন্ন মূল্যবান জিনিসপত্রাদি (ড্রেসিং টেবিল, খাট, শোভা, রাইসকুকার, টেলিভিশন, প্যাচুলা, আলমারিসহ অন্যান্য জিনিসপত্র) ভাঙচুর করে প্রায় দেড় লক্ষাধিক টাকা ক্ষতি। আলমগীর সিদ্দিক নাছিরের নেতৃত্বে তারা আমার ঘরের মধ্যে থাকা স্টিলের আলমারির তালা ভেঙে ড্রয়ারে থাকা জমি বিক্রির নগদ ৩ লাখ টাকা এবং ড্রয়ারে থাক সোনা গয়না যার মূল্য প্রায় দেড় লাখ টাকাসহ সর্বমোট সাড়ে চার লাখ টাকা চুরি করে নিয়ে যায়। একই সময় আমার চাচাতো দেবর শাহিন আলমের বাড়িতেও অনধিকারে প্রবেশ করে ঘরের ভেতর ওয়াল সোকেস, ড্রেসিং টেবিল, আলমারি, টিভি, ফ্রিজসহ অন্যান্য জিনিসপত্র ভাঙচুর করে প্রায় আড়াই লাখ টাকার ক্ষতি করেছে। টাকা ক্ষতিসাধন করে এবং আহসানুল কবির বসির আমার চাচাতো দেবরের দোকানের ব্যবসায়িক নগদ ২ লাখ টাকা এবং প্রায় ৩ লাখ টাকার সোনা গয়না নিয়ে যায়। তখন আমার চাচি শাশুড়ি পারভিনা বাধা প্রদান করতে গেলে নুর আলম সিদ্দিক বকুল তাকে লাথি দিয়ে ফেলে দিয়ে জখম করে এবং অমিও তার গলায় থাকা একভরি ওজনের সোনা চেইন (মূল্য অনুমান ৬০ হাজার টাকা) এবং হাতে থাকা দুটি স্বর্ণের বালা (মূল্য অনুমান ৪০ হাজার টাকা) জোর করে কেড়ে নেয়। তারা আমাদের বাড়িতে থাকা নারীদের মারপিট করে। আমরা চিৎকার করলে আশেপাশের এসে আমাদের রক্ষা করে। তখন তারা আমাদেরকে বিভিন্ন খুন জখমের ভয়ভীতি দেখিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এ ঘটনায় চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় আমি মামলা দায়েরের আবেদন করেছি।

এ দিকে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করার জন্য যাওয়া হয় নাসির-বশিরের বাসায়। বশিরের বাসায় গেলে বশিরের বাসায় কাউকে না পেয়ে কয়েকবার কড়ানাড়া হয়। এর কিছুক্ষণ পর পাশের বাড়ি থেকে বকুল নামে এক ভদ্রলোকের স্ত্রী এসে জানান, তারা কেউ বাড়িতে নেই। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে বকুলের স্ত্রী বশিরের স্ত্রীকে ডেকে নিয়ে আসেন। বশিরের স্ত্রী বলেন, আমার স্বামীকে তারা মারধর করেছে। আমার স্বামী হাসপাতালে ভর্তি ছিল। তাকে আজকে রাজশাহী রেফার করা হবে। বশিরের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তা রিসিভ হয়নি।

অপরদিকে, গত বৃহস্পতিবার রাতে উভয়পক্ষের মারামারি ও বাড়ি ভাঙচুরের খবর পেয়ে সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। সেখান থেকে মৃত বাক্কার ছেলে নাসিরকে এবং সাহাজুল ইসলাম সেলিম ওরফে সেলু নামের দুইজনকে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশ গ্রেফতার করে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মাহাব্বুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় নাসির ও সেলুকে ১৫১ ধারায় আদালতে সোর্পদ করা হয়েছে। বিজ্ঞ আদালত তাদেরকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন। এ ঘটনায় নাছিমা খাতুন বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More