ভাষা সৈনিকদের ‘স্বাধীনতা সংগ্রামী’ স্বীকৃতি দিতে হবে : গোলাম কাউসার চানা

মেহেরপুর অফিস: মেহেরপুরের ভাষা সংগ্রামী গোলাম কাউসার চানা। বয়স ৯২ বছর। বসবাস করছেন শহরের হোটেল বাজারের পিয়াদাপাড়ায়। তিনি মরহুম তিনকড়ি শেখের ছেলে। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে মেহেরপুর পৌরসভার কর আদায়কারী এ ভাষা সৈনিক মেহেরপুর উচ্চ ইংরেজি মডেল স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। গোলাম কাওসার জানান, ২০১৯ সাল থেকে জেলা প্রশাসনের পক্ষে ২১ ফেব্রুয়ারির দিন এক তোড়া ফুল আর ক্রেস্ট দিয়ে সম্মানিত করা হচ্ছে। এর আগে কেউ খোঁজখবর নেননি। তার দাবি, জীবিত অথবা প্রয়াত ভাষা সৈনিকদের প্রথম সারির স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসেবে সরকারি স্বীকৃতি দিতে হবে এবং তাদের উপযুক্ত সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। ভাষা সংগ্রামী কাউসার বর্তমানে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। বার্ধক্যজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে বাকরুদ্ধ প্রায়। তারপরও তিনি দেশের সর্বত্র বাংলা ভাষার প্রচলন দেখে যেতে চান। মরতে চান ভাষা সংগ্রামীদের যথার্থ মূল্যায়নের খবর নিয়ে। ভাষাসৈনিক গোলাম কাউসার চানা সরকারের কাছে আরও বেশকিছু দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, জীবিত ভাষা সৈনিকদের সম্মানজনকহারে সরকারিভাবে মাসিক ভাতা প্রদান করতে হবে। প্রয়াত ভাষা সৈনিকদের পরিবারের সদস্যদের জন্য সরকারি সুযোগ-সুবিধা এবং চাকরির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোটা বরাদ্দ করতে হবে। গৃহহীন এবং আবাসন সমস্যায় জর্জরিত ভাষা সংগ্রামীদের সরকারি আবাসন প্রকল্পে বিনামূল্যে আবাসন ব্যবস্থা করতে হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের মতো ভাষা সৈনিকদেরও রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন কাজের ব্যবস্থা করতে হবে।’ এই ভাষা সংগ্রামী জানান, ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির ডাকা ধর্মঘট চলাকালে ঢাকায় ছাত্রদের মিছিলে পুলিশ গুলি করে। এ খবর পেয়ে তৎকালীন উচ্চ ইংরেজি মডেল স্কুলের ছাত্ররা প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। তিনিও তখন ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ২৩ ফেব্রুয়ারি এক সমাবেশ হয়। সমাবেশে সরকারের নীতি নির্ধারণের সমালোচনা ও রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে জোরালো বক্তব্য রাখা হয়। মুন্সি সাখাওয়াত হোসেনের নেতৃত্বে মেহেরপুর উচ্চ ইংরেজি মডেল স্কুলের ছাত্ররা পোস্টারিং, পিকেটিং করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিদ্যালয়ের ছাত্ররা ২৪ ফেব্রুয়ারি ক্লাস থেকে বেরিয়ে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে মিছিল নিয়ে শহরে বের হয়। শিক্ষকরা প্রাচির হয়ে দাঁড়িয়েছিলো সেদিন। তিনি স্মৃতিচারণ করে বলেন, সেদিন শিক্ষার্থী মুন্সি সাখাওয়াৎ হোসেন, জান মোহাম্মদ, আবুল হোসেন, সুলতান শেখ, ইসহাক বিশ্বাস, দেওয়ান ইয়ারুল ইসলাম, গোলাম গাউস খান, আওলাদ হোসেন, মীর মোজাম্মেল হক, রফেজ উদ্দীন মল্লিক রতন, সিরাজুল ইসলাম, শান্তি নারায়ণ, ইউনুস আলী, মকছেদ আলী, বংকু ঘোষ ওরফে সতীনাথ ঘোষ, সাদেক আলীসহ অনেক শিক্ষার্থী মিছিল করে। মিছিলটি তৎকালীন রিপন ইংরেজি উচ্চ বিদ্যালয় অতিক্রম করে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। গোলাম কাউসার চানা আশা করেন, তার দাবিগুলো সরকার সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করবে। অচিরেই প্রথম সারির স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে তাদের ও পরিবারের উপযুক্ত সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে একুশের স্মৃতি সজীব রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More