কুষ্টিয়ায় যৌন হয়রানির শিকার কলেজ শিক্ষার্থী : নিরাপত্তাহীনতায় পরিবার

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ায় জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় গৃহীত অনার্স ৪র্থ বর্ষের পরীক্ষা দিতে এসে সংখ্যালঘু পরিবারের এক কলেজ শিক্ষার্থী ওই পরীক্ষা হলের দায়ীত্ব পালনকারী শিক্ষক রাকিবুল হাসান রাকিব নামের এক শিক্ষক কর্তৃক যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ওই শিক্ষার্থী কলেজ কর্তৃপক্ষের বরাবর লিখিত অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাননি বলে অভিযোগ ওই পরিবারের। এছাড়া ঘটনার সুনির্দিষ্ট লিখিত অভিযোগ থাকলেও অভিযুক্ত ওই শিক্ষক এখনও ধরাছোয়ার বাইরে এবং তার অনুসারীদের মাধ্যমে নানা ভাবে হুমকি, ভয়ভীতি দেয়ায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন ওই শিক্ষার্থীর সংখ্যালঘু পরিবার।
অভিযোগসূত্রে জানা যায়, গত ২০২২ সালে ১৯ জানুয়ারী কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজের পরীক্ষা কেন্দ্রে ২০২০ সালের অনার্স ৪র্থ বর্ষের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষা শেষের দিকে ওই কক্ষে দায়িত্ব পালনকারী শিক্ষক মো. রকিবুল ইসলাম ওই শিক্ষার্থীকে ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ কৌশলে একটি নির্জন কক্ষে নিয়ে যান এবং সেখানে শিক্ষক রাকিবুল ওই শিক্ষার্থীর সাথে স্পর্শকাতর আচরণের চেষ্টাকালে শিক্ষার্থী বাধা প্রদান করেন। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থী জোড়পূর্বক ওই কক্ষ থেকে বেড়িয়ে সরাসরি তার নিজ কলেজ কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের দফতরে গিয়ে সব খুলে বলেন এবং বিচার দাবি করে লিখিত অভিযোগ জমা দেন অধ্যক্ষ প্রফেসর কাজী মনজুর কাদিরের কাছে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক আনছার আলী। তিনি বলেন, পরীক্ষার হলে ছাত্রী হয়রানির ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেয়ে ঘটনার প্রতিকার চেয়ে ওই অভিযোগের কপি সংযোজনসহ ঘটনাস্থল কুষ্টিয়া ইসলামি কলেজের অধ্যক্ষ মো. নওয়াব আলী এবং কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত পত্র প্রেরণ করেছি। পরে শুনেছি ওই শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রী যৌন হয়রানির মতো ঘটনায় কেবলমাত্র সাময়িক বাহিষ্কারই দৃষ্টান্তমূলক উদাহরণ নয়। আমরা ওই ছাত্রীর পরিবারের সাথে কথা বলেছি, উনারা সরাসরি মামলা করতে রাজি হননি। শুনেছি মামলা না করার জন্য তাদের উপর ভয়ভীতি প্রদর্শন ও চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ঘটনাস্থল কুষ্টিয়া ইসলামীয়া কলেজের অধ্যক্ষ মো. নওয়াব আলীর সাথে আলাপকালে তিনি জানান, “কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের দফতর থেকে প্রেরিত পত্রে অভিযোগ পাওয়ার পর অভিযুক্ত ওই শিক্ষককে কারণ দর্শানো নোটিশ ইস্যু করেছি। অভিযুক্ত শিক্ষক রাকিবুল ইসলাম কারণ দর্শানো নোটিশের জবাব দিয়েছেন। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন আছে”।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক রাকিবুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে আলাপকালে তিনি বলেন, “আসলে ঘটনা কিছুই না; একটু ভুল বুঝাবুঝি হয়েছিলো মাত্র। পরে আমরা নিজেরা বসে ঠিক করে নিয়েছি”। কি ভুল বুঝাবুঝি হয়েছিলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, “কুষ্টিয়া শহরের আমলাপাড়াস্থ আমার কোচিং সেন্টার বাবদ এক সাংবাদিক কিছু চাঁদা দাবি করেছিলো, সেটা না দেয়াতে ওই সাংবাদিক এ নিউজ ছেপেছিলো। পরে সব ঠিক হয়ে গেছে”। তাছাড়া এ বিষয়ে কেউ কোনো লিখিত অভিযোগও করেননি বলে দাবি করেন অভিযুক্ত শিক্ষক রাকিবুল ইসলাম।
যৌন হয়রানির শিকার ওই শিক্ষার্থীর পরিবারের পক্ষ থেকে করা অভিযোগ, কুষ্টিয়া ইসলামি কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক রাকিবুল ইসলামের নিজস্ব কিছু দালাল ছাত্রীদের মাধ্যমে নিরীহ সাধারণ ছাত্রীদের ফুসলিয়ে ফাঁদে ফেলে এভাবে সর্বনাশ করে আসছে। সমাজ বাস্তবতায় এমন যৌন হয়রানির শিকার হয়েও অধিকাংশ ক্ষেত্রে কেউ মুখ খুলতে চান না। সেজন্য এসব ঘটনার কোনো প্রতিকারও হয় না। খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ভুক্তভোগী ওই ছাত্রীর পিতা পল্লি চিকিৎসক আক্ষেপ করে এসব বলছিলেন।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More