গাংনী গাছে বেঁধে বেধড়ক মারপিট : স্ট্যাম্পে জোরপূর্বক স্বাক্ষর

গাংনী প্রতিনিধি: গাংনী উপজেলার হাড়াভাঙ্গা গ্রামের ডিস ব্যবসায়ী আরিফিন রেজাকে (২১) বেধড়ক মারপিঠ করা হয়েছে। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। একইসাথে ফাঁকা স্ট্যাম্পে জোরপূর্বক স্বাক্ষর করে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা আদায়ের পাঁয়তারা করছে হাড়াভাঙ্গা গ্রামের ফারুক হোসেনসহ কয়েকজন। এক মাদরাসা ছাত্রীর সাথে প্রেম সম্পর্কের অপবাদ দিয়ে বুধবার রাতে রেজাকে বেধড়ক মারপিট করা হয় বলে অভিযোগ করেছেন রেজা ও তার পরিবার।
গাংনী হাসপাতালের একজন চিকিৎসক জানান, আরিফিন রেজার দুই পায়ের হাড় ফেটে গেছে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে রডের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। আঘাতের তীব্রতা এতোটাই যে আঘাতস্থলের চামড়া উঠে গেছে। তার শারীরিক অবস্থা গুরুতর বলে জানান কর্তব্যরত চিকিৎসক।
অভিযোগে জানা গেছে, ডিস ক্যাবল নেটওয়ার্ক ব্যবসায়ী হাড়াভাঙ্গা গ্রামের কামাল হোসেনের ছেলে আরিফিন রেজা লাইন দেখাশোনার কাজ করেন। বুধবার রাত আটটার দিকে হাড়াভাঙ্গা গ্রামের শাওন নামের এক যুবক তার বাড়ির ডিস লাইন মেরামতের কথা বলে ডেকে নিয়ে যায়। ডিস লাইন মেরামতের এক পর্যায়ে রেজাকে কৌশলে ডেকে হাড়াভাঙ্গা গ্রামের বাগানপাড়ায় নিয়ে যায় একই গ্রামের নৈমুদ্দীন মিলিটারির ছেলে ফারুক হোসেন। সেখানে আগে থেকে ওৎ পেতে থাকা ফারুক ও তার সঙ্গীরা রেজার মুখ ও হাত বেঁধে মারধর শুরু করে। জাম গাছের সাথে রশি দিয়ে বেঁধে মুখে গামছা পুরে রড ও লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারপিঠ করে ফারুকসহ তার সঙ্গীয় লোকজন। আকস্মিক হামলায় রেজার শারীরিক অবস্থা খারাপের দিকে গেলে বিপাকে পড়ে হামলাকারীরা। ফারুক তার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে ফাঁকা স্ট্যাম্পে মিথ্যা স্বীকারোক্তির স্বাক্ষর করতে বাধ্য করে রেজাকে। মারধরের দায় এড়াতে তাৎক্ষনিক এ নাটক সাজায় ফারুক। এক মাদরাসা ছাত্রীর বাড়িতে যাওয়ার মিথ্যা অপবাদ দিয়ে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ফারুকের হাত থেকে ছেলেকে ছাড়ানোর জন্য নগদ ১৫ হাজার দিয়ে বাকি টাকা কয়েকদিন করে পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দেয় রেজার পরিবার। এরপরে পরিবারের লোকজন তাকে নিয়ে গাংনী হাসপাতালে ভর্তি করেন।
ফারুকের কথিত সালিসে উপস্থিত কয়েকজন জানান, বিষয়টি সাজানো নাটক। মাদরাসা ছাত্রীর সাথে যদি রেজার সম্পর্ক থেকে থাকে তাহলে সালিসে ছাত্রী অথবা তার পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত থাকতেন। তাছাড়া আগে থেকেই গোছানো ছিলো স্ট্যাম্প। ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষরের ভয় দেখিয়ে ফারুক এখন ৭০ হাজার টাকা দাবি করছে রেজার পরিবারের কাছে। টাকা না দিলে ওই স্ট্যাম্পবলে মামলার হুমকি দিচ্ছে ফারুক। ডিস ব্যবসার বিরোধের জেরে ফারুক এ নাটক সাজিয়েছে বলে মনে করছেন সালিসে উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শীরা।
আরিফিন রেজার পিতা কামাল হোসেন বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে গ্রামে ডিস ফিডের ব্যবসা করি। সাম্প্রতিক সময়ে ওই ফারুক হোসেন আরেকটি লাইন নিয়ে গ্রামের মানুষের বাড়িতে আমার লাইন কেটে দিয়ে তার লাইন দিচ্ছে। এ নিয়ে তার সাথে আমাদের বিরোধ রয়েছে। এ বিরোধের জের ধরে আমাকে ও আমার ছেলেকে প্রায়ই হত্যার হুমকি দিতো ফারুক। আমার ছেলেকে হত্যার উদ্দেশ্যেই এ হামলা করেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। এ ঘটনার বিচার চেয়ে পুলিশসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে আর্জি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।
স্থানীয় কয়েকজন জানান, রেজা যদি ওই মাদরাসা ছাত্রীর ডাকে গিয়ে থাকে তাহলে ছাত্রী ও রেজা দু’জনই সমান অপরাধী। তাছাড়া গ্রাম্য সালিসের নামে গাছে বেঁধে মারধর এবং জরিমানা করা আইনগতভাবে দ-নীয় অপরাধ। এ ঘটনায় ফারুকসহ তার সঙ্গীয় লোকজনের বিচারের দাবি উঠেছে স্থানীয় বিভিন্ন মহল থেকেই।
এদিকে ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অভিযুক্ত ফারুক ও তার লোকজনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন গাংনী উপজেলা ডিস ক্যাবল মালিক সমিতির সভাপতি আনারুল ইসলাম বাবুসহ ডিস মালিক সমিতি নেতৃবৃন্দ। হামলকারীদের দ্রুত গ্রেফতার পূর্বক বিচারের দাবি জানান তারা।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More