চুয়াডাঙ্গায় কাবিখার ৪শ’ বস্তা চাল আটকের ১৩ ঘণ্টা পর ছেড়ে দিলো গোয়েন্দা পুলিশ

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় কাবিখা’র ৪শ’ বস্তা চাল আটকের ১৩ ঘণ্টা পর জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ছেড়ে দিয়েছে। মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জীবননগর উপজেলার আন্দুলবাড়িয়া এলাকায় পিয়াস তেল পাম্পের সামনে থেকে সরকারি ৪শ’ বস্তা চালসহ একটি ট্রাক আটক করে। চালসহ আটক ট্রাকটি রাতেই চুয়াডাঙ্গা পুলিশ লাইনে নেয়া হয়। বুধবার বেলা ১টার দিকে চালসহ আটককৃত ট্রাকটি ছেড়ে দেয় পুলিশ।
জানা গেছে, মেহেরপুর জেলার গাংনী বাজারের ধান, গম ও ভূষিমাল ব্যবসায়ী মেসার্স আব্বাস ট্রের্ডাসের স্বত্বাধিকারী আব্বাস আলী গত মঙ্গলবার রাতে কাজের বিনিময় খাদ্য কর্মসূচির (কাবিখা) এইচবিবি রাস্তা প্রকল্পর ৪শ’ বস্তা সরকারি চাল একটি ট্রাকযোগে চুয়াডাঙ্গার জীবননগরের দেহাটি তৃপ্তি অটো রাইচ মিলে ছাঁটাই করার উদ্দেশে নিয়ে আসেন। সরকারি চাল পাচার করার খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল অভিযান চালিয়ে ৪শ’ বস্তা চালসহ ট্রাকটি আটক করে পুলিশ হেফাজতে নেয়।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, গত ২১ জুন কাজিপুর প্রকল্প চেয়ারম্যান ইউপি সদস্য সাহিদুল ইসলাম বেতবাড়িয়া হালসোনাপাড়া টিপুর বাড়ি হতে রুস্তম হালসোনার বাড়ি মুখি রাস্তা এইচবিবি করণসহ রাস্তা পুনঃনির্মাণে বরাদ্দকৃত ৭ মেট্রিকটন চালের মধ্যে শেষ কিস্তির সাড়ে ৩ মেট্রিকটন চাল, প্রকল্প চেয়ারম্যান বাওট কবরস্থান কমিটির সভাপতি সাহাবুদ্দিন বাওট কবরস্থানের রাস্তা ফ্লাট সোলিংসহ রাস্তা পুনঃনির্মাণে ৮ মেট্রিকটন চালের মধ্যে শেষ কিস্তির ৪ মেট্রিকটন চাল, প্রকল্প চেয়ারম্যান ধানখোলা ইউপি সদস্য আবু বক্কর আড়পাড়া আনোছদ্দিনের বাড়ি হতে মিন্নালের বাড়িমুখি রাস্তা এইচবিবি করণসহ রাস্তা পুনঃনির্মাণে ৯ মেট্রিকটন চালের মধ্যে শেষ কিস্তির সাড়ে ৪ টন চাল, খাসমহল ধসার মাঠের বদির জমি হতে লবণ খালের জমি পর্যন্ত বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প চেয়ারম্যান কাথুলী ইউপি সদস্য একরামুল হক ৫ টন চালের মধ্যে শেষ কিস্তির আড়াই মেট্রিকটন চাল, করমদি আলমগীর মাস্টারের বাড়ি হতে পাঁকা রাস্তা মুখি এইচবিবি করণসহ রাস্তা পুনঃনির্মাণ প্রকল্পের চেয়ারম্যান তেতুঁলবাড়িয়া ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলম বরাদ্দকৃত ৬ মেট্রিকটন গমের মধ্যে শেষ কিস্তির ৩ মেট্রিকটন গম, সাহারবাটি মেইন রাস্তা হতে ইবাদতখানা হুজুরের ঘর পর্যন্ত রাস্তা এইচবিবি করণসহ রাস্তা পুন:নির্মাণে প্রকল্প চেয়ারম্যান সাহারবাটি ইউপি সদস্য আব্দুল মজিদ ৫ টন চালের মধ্যে শেষ কিস্তির আড়াই মেট্রিকটন চালের ডিও লেটারের মাধ্যমে সরকারি গুদাম থেকে উত্তোলন করেন।
সূত্র জানায়, প্রকল্পগুলো ইট, বালু, খোয়া, সিমেন্টসহ সরজ্ঞামাদি ক্রয় করার জন্য প্রকল্প চেয়ারম্যানগণ এসব চাল ডিও লেটারের মাধ্যমে গাংনী বাজারের বিশিষ্ট ভূষিমাল ব্যবসায়ী আব্বাস আলীর নিকট বিক্রি করেন। তিনি ক্রয় সূত্রে (চুয়াডাঙ্গ-ট-১১০৭১৮) ট্রাকযোগে ওই ৪শ’ বস্তা চাল ছাঁটায় করার জন্য জীবননগরের দেহাটি তৃপ্তি অটো রাইচ মিলে প্রেরণ করেন। খবর পেয়ে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ রাত ১১টার দিকে অভিযান চালিয়ে চালসহ ট্রাকটি হেফাজতে নেয়। গতকাল বুধবার এ চালের বৈধ কাগজপত্র দাখিল করায় বেলা ১টার দিকে পুলিশ সুপারের নির্দেশে চাল মালিক আব্বাস আলীর হেফজতে চাল ও ট্রাকটি হস্তান্তর করা হয়।
ট্রাক মালিক তৃপ্তি অটো রাইচ মিলের মালিক আসাদুজ্জাঁমান আকুল জানান, ব্যবসায়ী সূত্রে চালের মালিক গাংনীর আব্বাস আলী আমার ট্রাকটি ৬ হাজার টাকায় ভাড়া নিয়ে ৪শ বস্তা চাল চালানপত্রসহ ছাঁটাইয়ের জন্য পাঠায়। এ চাল আমি তার নিকট থেকে ক্রয় করিনি।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মামুন অর রশিদ বলেন, ‘উপজেলা নির্বাহী অফিসারের স্বাক্ষর ছাড়া চাল ওঠে না। তাদের বৈধ কাগজপত্র রয়েছে। গাংনী এলাকার চালব্যবসায়ী আব্বাস আলী ওই চাল স্থানীয় মেম্বার ও চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে বৈধ পন্থায় ক্রয় করেন। বুধবার সকালে গাংনী উপজেলার চালব্যবসায়ী আব্বাস আলী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের স্বাক্ষরিত বৈধ কাগজপত্র নিয়ে আসেন চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপারের কাছে। পুলিশ সুপার চাল কেনা ও উত্তোলনের সকল কাগজপত্র দেখেন। পুলিশ সুপার স্যার কাগজপত্র দেখার পর আমরা বেলা ১টার দিকে চালসহ ট্রাকটি ছেড়ে দিই।’ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি আরও জানান, ‘প্রতিটি বস্তায় ৫৯ কেজি করে চাল ছিলো। সে হিসাবে ২০ টন চাল ছিলো ৪শ’ বস্তায়। চালগুলো বাছাই করার জন্য আন্দুলবাড়িয়ার একটি রাইচ মিলে নেয়া হচ্ছিল। কাবিখার চাল বিক্রি করা যায়। সরকারি চাল বিক্রি করা যাবে আইন আছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে চাল বিক্রি করা যাবে, কিন্তু তার স্বাক্ষরিত হতে হবে। সেসব কাগজপত্রা আমাদের দেখিয়েছে।’
চাল আটকের পর ছেড়ে দেয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার সুপার জাহিদুল ইসলাম বলেন ‘ওসি ডিবি বলতে পারবে। এ বিষয়ে আমাকে ফোন দেবেন না।’
প্রসঙ্গত, গত ৮ জুন চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের সাতগাড়ি এলাকায় দুটি গোডাউন থেকে এক হাজার ২৬৬ বস্তা সরকারি চাল জব্দ করেছিলো জেলা প্রশাসন। ওই চালগুলো মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার খাদ্য গুদামের ছিলো। চালের মালিকরা সে সময় বৈধ কাগজপত্র দেখালে জেলা প্রশাসন চাল ছেড়ে দেয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গাংনী প্রকল্প কর্মকর্তা (পিআইও) নিরাঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, আমরা পিআইসিদের ডিও দিয়ে দিই। তারা খাদ্য গুদাম থেকে চাল তুলে কোথায় কিভাবে বিক্রি করবে সেটা আমার জানার বিষয় না। তবে তারা নিয়মানুযায়ী ৬০% বিক্রি করতে পারেন।
খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা (ওসিএলএলএসডি) মতিয়ার রহমানের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, পিআইসিরা ডিও নিয়ে এলে আমরা খাদ্য গুদাম থেকে চাল দিয়ে দিই। তারা চাল তুলে কি করবে সেটা তারা নিজেরাই জানে। এর বাইরে কিছু বলতে পারবো না। তবে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইলফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More