দামুড়হুদার কার্পাসডাঙ্গা ও বাঘাডাঙ্গার খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সাজ সাজ রব

কড়া নাড়ছে বড়দিন : বর্ণিল সাজে সেজেছে খ্রিস্টানপল্লী
হসমত আলী/শরিফ রতন: দরজায় কড়া নাড়ছে বড়দিন। খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব এটি। এ দিনটি খ্রিস্টান ধর্মালম্বীদের জীবনে বয়ে আনে অনাবিল ভালোবাসা ও সোহাদ্য ভ্রার্তৃত্বপূর্ণ পরিবেশ। যিশু খ্রিস্টের জন্মদিন খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ঘরে ঘরে বয়ে যায় খুশির বন্যা। খ্রিস্টান পল্লির রাস্তাঘাট, ধর্মীয় উপাসনালয় এবং বিশেষ বিশেষ স্থানগুলো ইতোমধ্যে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে। গতবার করোনার কারণে উৎসবে ভাটা পড়লেও এবার উৎসব আমেজে মেতেছেন এখানকার মানুষ।
বড়দিন উপলক্ষে দামুড়হুদার কার্পাসডাঙ্গা ও বাঘাডাঙ্গায় ৪টি গির্জা এবং খ্রিস্টান বাড়িগুলোতে সাজ সাজ রব। বাড়িগুলোর সামনে সাজানো হচ্ছে ক্রিসমাস ট্রি। মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়ে ও পোস্ট কার্ডের মাধ্যমে অতিথিদের আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। অতিথি আপ্যায়নের জন্য বাড়িতে বাড়িতে তৈরি করা হচ্ছে রকমারি পিঠা। গির্জা ও উপধর্মপল্লিগুলোকে সাজানো হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন ঝলমলে আলোকসজ্জায়। গির্জার ভেতরে দৃষ্টিনন্দন ডিসপ্লে করা হয়েছে। প্রাঙ্গণে কুঁড়েঘর নির্মাণ করা হয়েছে। তাতে রাখা হবে মাতা মেরির কোলে যিশুখ্রিষ্টের মূর্তি।
খ্রিস্টানপল্লী ঘুরে দেখা যায়, বড়দিন আগমন উপলক্ষে ব্যস্ত রয়েছে রঙ-বে-রঙয়ের পোষাক তৈরীতে তেমনিভাবে ঘর-দোর সাজানো, বাড়ির আঙ্গিনা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ছাড়াও নির্মাণ করা হচ্ছে রং বেরংয়ের তোরণ। কার্পাসডাঙ্গা বাজারের পোশাকের দোকানগুলোতে দেখা যাচ্ছে উপচে পড়া ভিড়। নারী পুরুষ সকলের আগমন এখন বাজারে। যারা কার্পাসডাঙ্গার বাইরে অর্থাৎ শহরে থাকে তারা আসতে শুরু করছে আপনজনদের কাছে। গীর্জাগুলোতে করা হচ্ছে ব্যাপক আলোকসজ্জা। সবচেয়ে দর্শনীয় স্থান হচ্ছে বেহসতী আদলে তৈরী করা হয় গোশালা ঘর। যেখানে দুহাজার বছর আগে জন্ম নিয়েছিলো যীশুখ্রীস্ট। যুবকরা বাশ-কাবারী ও বিচালি দিয়ে গোশালা তৈরী করতে শুরু করে দিয়েছে। তাছাড়া মা মারিয়ার আবাসস্থলটি তৈরী করা হয়েছে পাথরের টুকরা দিয়ে। সাজানো হয়েছে নানা রঙ্গ। এদিকে ২৪ তারিখ সারাদিন খ্রিস্টানদের ঘরে ঘরে শুরু হয় নানা রকমের পিঠা তৈরীর ধুম। এদিন সন্ধ্যার পর যুবক ছেলেরা সারারাত জেগে আনন্দ উল্ল¬াস করে এই রাতকে জাগনি রাত বলা হয়। ২৪ তারিখ রাত ১২ টার পরে কেক কেটে যীশু খ্রিস্টের জন্মদিন পালন করে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ। সব মিলিয়ে খ্রিস্টান পল্লি¬র গোটা এলাকায় বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ।
কার্পাসডাঙ্গার পবিত্র যিশু হৃদয় ক্যাথলিক গির্জার ফাদার লাভলু সরকার ও সহকারী ফাদার উদয় মন্ডল বলেন, নবরাজ খ্রিস্টকে গ্রহণ করতে বড়দিনের নয় দিন আগে থেকে নভেনা খ্রিষ্ট যাগ বা পাপস্বীকার পর্ব চলছে। আমাদের মুল অনুষ্ঠান ২৪ ডিসেম্বর রাত ৯টায় উপসনা আরম্ভ হবে। দুই গ্রামের প্রায় ৫শ’ পরিবারের প্রায় আড়াইহাজার মানুষ উৎসব উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বড়দিনের কীর্তনের (ক্যারল) মধ্যে দিয়ে এ উৎসব শেষ হবে। এদিকে ক্রাইস্ট চার্চ বাংলাদেশের কার্পাসডাঙ্গার রেভার বা পুরোহিত মৃত্যুঞ্জয় মন্ডল বলেন, আমাদের মুল অনুষ্ঠান ২৫ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সকাল সাড়ে ১০ টা পর্যন্ত উপসনা চলবে।
বাঘাডাঙ্গা গ্রামের গৃহবধূ কিরণ গোমেজ বলেন, ‘বড়দিন উপলক্ষে অতিথিদের আপ্যায়নের জন্য আমরা সপ্তাহ খানেক ধরে বিভিন্ন ধরনের পিঠাপুলি ও কেক তৈরি করছি। আমাদের অনেক আত্মীয়স্বজন দেশের বাইরে ও ঢাকায় বসবাস করে। বড়দিন উপলক্ষে তারা প্রতিবছর গ্রামে আসে। সবাই মিলে উৎসব উদ্যাপন করি। তাদের জন্য হরেক রকমের খাবার রান্না করা হবে।
কার্পাসডাঙ্গা ক্যাথলিক গির্জার ফাদার লাভলু সরকার বড়দিনের প্রস্ততি সম্পর্কে জানান, প্রতি বছরের মত এবারোও বড়দিন পালন করবো আশা করছি। গ্রামে আলোকসজ্জা করেছে স্থানীয়রা। আইন শৃঙ্খলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, সবসময় সরকার আমাদের পাশে থাকে। পুলিশ প্রশাসন বড়দিনের সময় বাড়তি নিরাপত্তা দিয়ে থাকে। তিনি এলাকাবাসীর সবার সহযোগিতা চেয়েছেন।
কার্পাসডাঙ্গা ফাঁড়ির এসআই আতিকুর রহমান জুয়েল জানান, শুভ বড়দিন উৎযাপন খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষজন যাতে ভালোভাবে বড়দিন উদযাপন করতে পারে সে জন্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সজাগ থাকবে।
দামুড়হুদা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, গির্জা ও আশপাশের এলাকায় সর্বাত্মক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। পুলিশ ও আনসার বাহিনীর পাশাপাশি সাদাপোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More