চুয়াডাঙ্গায় জমে উঠতে শুরু করেছে ঈদের কেনাকাটা

স্টাফ রিপোর্টার: ঈদে চাই নতুন জামা, জুতো। নিজের কেনাকাটার সঙ্গে স্বজনকেও উপহার দেন অনেকে। অনেকে রমজান শুরুর আগে থেকেই ফর্দ প্রস্তুত করেন। প্রথম রমজান থেকে চাঁদরাত পর্যন্ত চলে কেনাকাটা। তবে এবার এখনও জমে ওঠেনি বাজার। মার্কেটগুলোয় নেই চিরচেনা ভিড়। ব্যবসায়ীদের আশা, ১০ রমজানের পর থেকে বেচাবিক্রি জমে উঠবে। চুয়াডাঙ্গা শহরের কয়েকটি মার্কেটে সরেজমিন এ চিত্র দেখা গেছে। দোকানে দোকানে অলস সময় কাটাচ্ছিলেন বিক্রয়কর্মীরা। আর মালিকরা ক্ষণ গুনছেন চিরচেনা ভিড়ের অপেক্ষায়। প্রথম দুটি রোজায় ক্রেতাদের দেখা না মিললেও তৃতীয় রোজা থেকে জমে উঠতে শুরু করেছে পোশাকের দোকানগুলো। ঈদের আগে ব্যস্ততা বাড়ার আশঙ্কা ও সবার আগে পছন্দের পোশাকটি কিনতে ক্রেতারা এক বিপনিবিতান থেকে আরেক বিপণিবিতানে ছুটছেন। ব্যবসায়ীরা জানান, সব জিনিসপত্রের দাম বেশি। মানুষের হাতেও টাকা নেই। গত বছর প্রথম দিনে টুকটাক বিক্রি ছিলো। এ বছর সেই আমেজ নেই। তবে কয়েকদিন পর মার্কেট জমতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন ব্যবসায়ীরা। রোজার একটি মাস সারা বছরের সবথেকে বেশি বেচাবিক্রি হয়, যে কারণে রোজার আগেই ঈদের জন্য দোকানে নতুন নতুন পোশাক সাজিয়েছেন তারা। গতকাল সোমবার সরেজমিনে শহরের বড় বাজার পুরাতন গলি, নিউ মার্কেট, প্রিন্স প্লাজা, আব্দুল্লাহ সিটি, মুন সুপার মার্কেটসহ বেশকিছু শো-রুম ঘুরে ক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের বেচাকিনিতে ব্যস্ততা চোখে পড়ে। বড় বাজার পুরাতন গলির ব্যবসায়ী আব্দুর রউফ বলেন, প্রথম রোজা থেকেই পুরাতন গলির দোকানগুলোতে ক্রেতাদের আনাগোনা শুরু হলেও গত শুক্রবার থেকে ভিড় বাড়ছে। সারাদিনের মধ্যে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এবং ইফতারের পরে ক্রেতারা বেশি আসছেন। এবার পবিত্র ঈদুল ফিতর গরমে হওয়ায় চাহিদা থাকবে সুতি পোশাকের। ক্রেতাদের কথা চিন্তা করে আমরাও সুতি পোশাকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। এই বিক্রেতা আশা প্রকাশ করেন, আগামী ১০ রোজা থেকে গলির সব দোকানে পুরোদমে বেচাকেনা শুরু হয়ে যাবে। এই বাজারের ঈদের পোশাক ক্রেতা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সালমা খাতুন বলেন, ‘মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা যেমনই হোক না কেন, ঈদ উপলক্ষে মুসলিম সম্প্রদায়ের সবাই নতুন পোশাক কিনবেই। তবে এ বছর বিভিন্ন পোশাকের দাম গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি চাওয়া হচ্ছে। যার কারণে আমি একটু সস্তা দামের জিনিসপত্র কেনাকাটা করছি।’ এদিকে কথা হয় শহরের আব্দুল্লাহ সিটিতে আসা মাসুদ রানা নামের অপর একজন ক্রেতার সঙ্গে। ঈদের পোশাক কিনছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ছুটি থাকায় ঈদের বাজার ঘুরতে এসে নিজের জন্য একটি জিন্স ও একটি শার্ট কিনেছি। আমার বাড়ি খুলনাতে, তবে কর্মসূত্রে চুয়াডাঙ্গাতে বসবাস করায় দুই বছরে এখানে কেনাকাটা করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। পরিবারের অন্য সদস্যদের কেনাকাটা খুলনা থেকেই হবে। শুধু ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার আগে মায়ের জন্য একটি শাড়ি কিনবো। ঈদের এখনও ২৪ দিন বাকি থাকলেও দেখছি অনেক ক্রেতায় এক দোকান থেকে অন্য দোকানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তবে পুরুষের তুলনায় এই মার্কেটে নারী ক্রেতার আগমনই বেশি।’ শহরের নিউ মার্কেটে কেনাকাটা করতে আসা মনোয়ারা বেগম বলেন, ঈদ এলে বাড়িতে আত্মীয়-স্বজনের আনাগোনা বাড়ে। সেই সঙ্গে বাড়ে বাড়িতে কাজের ব্যস্ততা। তাই আগেভাগেই ঘর গোছাতে বিছানার চাদরসহ বেশিকিছু কেনাকাটা করতে এসেছি। নিজের বা পরিবারের সদস্যদের জন্য ঈদের নতুন পোশাক কিনবেন কি না জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ‘ঈদের পোশাক নিয়ে খুব বেশি মাথা ব্যাথা নেই। ছেলে-মেয়ে বড় হয়েছে, তারা নিজেদের পোশাক নিজেরাই পছন্দ করে কেনে। আমি দুটো বিছানার চাদর কিনেছি, গত বছরের থেকে দাম কিছুটা বেশি।’ দাম বেশির বিষয়ে জানতে চাইলে একাধিক ব্যবসায়ী দাবি করেন, ঢাকার বিভিন্ন পাইকারি বাজার থেকে মালামাল কিনতে গত বছরের তুলনায় এ বছর সব পোশাকের জন্য দাম বেশি ধরা হয়েছে। এদিকে, ভিন্ন চিত্র চোখে পড়েছে চুয়াডাঙ্গা রেলবাজারের দোকানগুলোতে। এই বাজারে ক্রেতাদের কমবেশি আগমন ঘটলেও, কিছুটা অলস বসে থাকতে দেখা যায় দোকানীদের। শার্ট, জিন্স ও পাঞ্জাবি বিক্রেতা মো. রাসেল বলেন, রোজার প্রথম দিকে এই মার্কেটে ক্রেতাদের আনাগোনা বড় বাজারের তুলনায় কম থাকে। এ সময় বেচাবিক্রিও কম হয়। তিনি আরও বলেন, ঈদের দিন যত ঘনিয়ে আসবে রেলবাজারের দোকানগুলোতেও ক্রেতাদের সংখ্যা বাড়বে। তবে রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণাধীন থাকায় পুরো রেলবাজার এলাকায় ধুলোর সৃষ্টি হচ্ছে। এর ফলে গত বছরের তুলনায় বেচাকেনা কিছুটা কম হতে পারে এমন আশঙ্কা করছি।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More