যারা আন্দোলনেই হারে তারা নির্বাচনে বিজয়ী হতে পারে না

চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে ভার্চ্যুয়ালি বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের

স্টাফ রিপোর্টার: আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিএনপির নেতাদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘কতো হাঁক ডাক! সরকার পতনের কতো দিবাস্বপ্ন! সব খতম। এই খেলা শেষ হয়ে গেছে। কোয়ার্টার ফাইনালে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ বিজয়ী হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ, সোহরাওয়ার্দীর আওয়ামী লীগ, মাওলানা ভাসানীর আওয়ামী লীগ, শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়েছে। সামনে সেমিফাইনাল, তারপর জাতীয় নির্বাচনে ফাইনাল খেলা হবে। বাংলাদেশের আন্দোলনে যারা হারে, নির্বাচনে তারা বিজয়ী হতে পারে না।’ গতকাল সোমবার চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। তিনি ভার্চ্যুয়ালি এই সম্মেলনে যোগ দেন। চুয়াডাঙ্গা টাউন ফুটবল মাঠে কেন্দ্রীয় নেতারা বেলা ১১টার দিকে গাড়িবহর নিয়ে প্রবেশ করলে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসম্পাদক সাবেক মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন ঘোষণা দেন জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে সঙ্গে পতাকা উত্তোলনের। এরপর চুয়াডাঙ্গা জেলা শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীদের সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশন এবং জাতীয় ও সাংগঠনিক পতাকা উত্তোলনের মধ্যদিয়ে সোমবার সম্মেলন শুরু হয়। সঞ্চালকের দায়িত্ব নেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাদুল ইসলাম আজাদ। শুরুতেই পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদ উজ জামান লিটু বিশ্বাস। গীতা থেকে পাঠ করেন সুমির মল্লিক এবং বাইবেল পাঠ করেন লিলটন রায়। টানা সাত বছর পর আয়োজিত সম্মেলনমাঠ নেতাকর্মীতে কানায় কানায় ভরে যায়।

চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দারের সভাপতিত্বে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ। নৌকার আদলে তৈরি অনুষ্ঠানমঞ্চে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম প্রধান বক্তা এবং সাংগঠনিক সম্পাদক ও সংসদ সদস্য বিএম মোজাম্মেল হক, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও সংসদ সদস্য আমিরুল আলম মিলন, সংসদ সদস্য পারভীন জামান কল্পনা ও সংসদ সদস্য গ্লোরিয়া সরকার ঝর্ণা বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন। স্থানীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য হাজি আলী আজগার টগর, দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান মনজু বক্তব্য দেন।

বিএনপির উদ্দেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কত যে হাঁকডাক বিজয় মিছিল করবে ১০ তারিখে! ১০ তারিখ তো চলে গেলো। আতঙ্ক সৃষ্টি করা হলো। বিআরটিসির বাস পোড়ানো হলো। শত শত চালের বস্তা, সঙ্গে বিস্ফোরক পাওয়া গেল নয়াপল্টনের কার্যালয়ে। শখ জেগেছিল সবকিছু অচল করে দেয়ার, এখন তারা নিজেরাই অচল। ১০ দফা দাবিতে নতুন কিছু দেখলাম না, সব পুরোনো কথা।’ দেশ-বিদেশের চলমান সংকটের কথা স্বীকার করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মানুষ কষ্টে আছে। জ্বালানি সংকট, মূল্যস্ফীতি, যুদ্ধ সারা বিশ্বের সমস্যা। আমাদের রিজার্ভ এখন আছে পাঁচ মাসের আমদানি করার মতো, যেখানে তিন মাস থাকলেই স্বাভাবিক ধরা হয়। এ নিয়ে এত সমালোচনা, বিদ্যুৎ নিয়ে এতো কথা? সারা দেশে বিদ্যুৎ তো শেখ হাসিনা দিলেন। সেই বিদ্যুৎ নিয়ে যারা কথা বলেন, প্রতিদিন বিশ্বকাপ ফুটবলের খেলা হয়েছে, কোথাও লোডশেডিং হয়েছে? এই সংকটেও আমরা বিদ্যুৎ ঠিক রেখেছি। জ্বালানি তেল, ভোজ্য তেল, গম, চাল, ভুট্টা বেশি দামে কিনেছি। স্বল্প মূল্যে দিয়েছি।’ জাতীয় সংসদ থেকে বিএনপির সংসদ সদস্যদের পদত্যাগ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বিএনপি না থাকলে কি সংসদ নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে? কথা বলার লোক থাকবে না? কত বড় ভুল করেছে বিএনপি টের পাবে।’ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘অর্থ পাচারের দায়ে দ-িত তারেক রহমানের ১০ তারিখে আসার কথা ছিলো।

২০০৭ সালে চলে গেলেন মুচলেকা দিয়ে, আর ফিরবেন না বলে। রাজনীতি করবেন না অঙ্গীকার করে গেলেন। দেখতে দেখতে ১৫ বছর হলো। তারেক আসবে কোন বছর, মানুষের মনে এখন প্রশ্ন। আসবে কি কখনো?’

এদিকে সম্মেলন শুরুর আগে দলীয় প্রতিপক্ষের হামলায় জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতিসহ পাঁচজন আহতের প্রসঙ্গ তুলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বড় দুঃখ লাগে। গত দেড় মাসে আমি সরাসরি ১৩টি সম্মেলনে যোগ দিয়েছি। আমার দুঃখ লাগে, একটু আগে চুয়াডাঙ্গায় সম্মেলনের শুরুতেই চেয়ার ছোড়াছুড়ি হয়েছে। কী কারণে হয়েছে? আমি পরিষ্কারভাবে বলছি, এটা বের করতে হবে এরা কারা। ১৫টি জেলার সম্মেলনে কোথাও কিছু হলো না, এখানে কেন এ ধরনের গোলমাল হলো? যারা আওয়ামী লীগের শৃঙ্খলা নষ্ট করবে, তাদের আওয়ামী লীগে কোনো প্রয়োজন নেই।’ মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুল হক বিশ্বাস, নাসির উদ্দিন আহমেদ, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন, অ্যাডভোকেট শামশুজ্জোহা, সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সী আলমগীর হান্নান, দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু তালেব, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ডা. মাহাবুব হাসান মেহেদী, উপ-প্রচার সম্পাদক শওকত আলী বিশ্বাস প্রমুখ।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ২ ডিসেম্বর টাউন ফুটবল মাঠে জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন ও কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। দীর্ঘ সাত বছর পর গতকাল সোমবার চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো একই স্থানে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More