অকৃতকার্য শিক্ষাব্যবস্থা : জবাবদিহি কে করবে

সম্পাদকীয়

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৭০-৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী বাংলা-ইংরেজি পড়তে পারে না-খবরটি আমাদের গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করেছে। মাতৃভাষা বাংলা হলেও প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সাড়ে ৯শতাংশ শিক্ষার্থী বাংলা পড়তে পারে না। ভাষা শিক্ষাই সকল শিক্ষার মূল। ভাষা  শেখা ও পাঠের অপারগতা শিশুদের হলেও; ব্যর্থতার ভার সম্পূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর বর্তায়।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ওয়েভ ফাউন্ডেশনের জরিপে এ চিত্র তুলে ধরে বলা হয়েছে, একই অবস্থা আফগানিস্তান, নেপাল ও মিয়ানমারেও। উল্লিখিত তিনটি দেশের সঙ্গে আমাদের তুলনা চলে না। কারণ ব্রিটিশ আমল থেকে শিক্ষা-দীক্ষায় আমরা তাদের তুলনায় অগ্রসর। কিন্তু বর্তমানে কেন পশ্চাদ্গামী? শিক্ষা পদ্ধতি এবং পাঠ্যক্রম নিয়ে গত এক যুগে হরেক রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে। কিন্তু উন্নতির বদলে কেন অবনতি হলো সেই জবাবদিহি কে করবে? রাষ্ট্রভাষা বাংলার দেশ, আধুনিক শিক্ষার পথে প্রায় সিকি শতাব্দী অতিক্রমকারী দেশে এমন চিত্র শুধু পরিহাসক নয়; মর্মান্তিকও বটে। মহামারি করোনার তা-বে টানা দুই বছর সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিলো। এ কারণে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের উপর একটি ধাক্কা পড়েছে, সত্য। কিন্তু সে ধকল কাটিয়ে উঠতে সরকারি উদ্যোগ নেয়ার আবশ্যকতা ছিলো। শিক্ষকের যোগ্যতা ও পাঠ পদ্ধতি নিয়ে নানা কথা রয়েছে। সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তুলনায় বেসরকারিতে এ অভিযোগ বিস্তর। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্যতাকে গুরুত্ব না  দেয়ার কুফল আমরা হাতেনাতে  পেয়েছি।

পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নে বাস্তববাদী না হলে শিশুদের আগ্রহী করে তোলা যাবে না। প্রথম-দ্বিতীয় শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক রচিত হতে হবে সহজ-সরল ভাষায়। এখানে পা-িত্য দেখাতে গিয়ে কঠিন শব্দ ও জটিল বাক্য ব্যবহার করলে শিশুদের মস্তিষ্কে তা প্রবেশ করবে না। পরিণামে শিশুরা পুস্তক হতে মুখ ফিরিয়ে নিতে চাইবে। তা শুধু বাংলা, ইংরাজির ক্ষেত্রে নয়; গণিতেও প্রযোজ্য। সুতরাং শিশুদের বাংলা-ইংরাজি পড়তে না পারার জন্য তাদের দোষ দিয়ে ফল নেই।  শেখা-লেখা-পাঠকে আনন্দদায়ক ও ফলপ্রসূ করতে না পারার পরিণাম আর কতো দেখতে হবে?

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More