অপরাধ বিষয়ে অবহেলার পরিণতি

সম্পাদকীয়

 

অপরাধ মানুষের সহজাত প্রবণতা। প্রতিটি সমাজে একটি অংশ আছে; যারা অপকর্মে জড়িত থাকে। অপরাধ বাড়া-কমার সাথে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে একটি দেশ কেমন নীতি গ্রহণ করে তার ওপর। আমাদের দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সংখ্যা অনেক বাড়ানো হয়েছে। তবু চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই, খুনসহ নানা অপরাধ না কমে বরং বাড়ছে। অনুমান করা যায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধির লক্ষ্য অপরাধী দমন নয়। বিষয়টি শাদা চোখেও দেখা যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে ভিন্নমত দমানোর সম্পর্ক। বিগত এক যুগের বেশি সময় ধরে পুলিশ ও বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থা বিরোধীদের বাগে আনতে যে শক্তি ব্যয় করেছে; তার কিছুটা যদি অপরাধ দমনে ব্যবহৃত হতো তাহলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এত অবনতি হয়তো হতো না। এখন প্রায়ই দেখা যায়, অপরাধীরা খোদ পুলিশ সদস্যকে হত্যা করছে।

শনিবার ভোরে ছিনতাইকারীরা এক পুলিশ সদস্যকে হত্যা করেছে। ঈদের ছুটি শেষে শেরপুর থেকে ঢাকায় কর্মস্থলে ফিরছিলেন তিনি। ভোর ৪টায় তেজগাঁও রেলস্টেশনে নেমে হেঁটে ডিবি অফিসের ব্যারাকে যাচ্ছিলেন। এ সময় একদল দুর্বৃত্ত তার মোবাইল অর্থকড়ি কেড়ে নিতে চায়। তিনি বাধা দেন এবং নিজেকে পুলিশ পরিচয় দেন। তাতে সুবিধা হয়নি, উপরন্তু ছিনতাইকারীরা বুকে-পিঠে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। হাসপাতালে নেয়ার পথে ওই পুলিশ সদস্য মারা যান। এমন ছিনতাইয়ের শিকার সাধারণ মানুষ অহরহ হচ্ছেন। এ ঘটনার দু’দিন আগে রাজধানীর রামপুরায় বিটিভি ভবনের সামনে এক সংবাদকর্মীকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত করা হয়। তার মূল্যবান জিনিসপত্রসহ অন্য আরো একজনের মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। ঈদের আগের দিন এক গরু ব্যবসায়ীর ২৮ লাখ টাকা ছিনতাই হয়েছে। ঢাকার আফতাবনগর মাঠে তিনি ১৮টি গরু বিক্রি করেছিলেন। ওই অর্থ নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে ঢাকার ভেতর দুর্বৃত্তরা তার ওপর চড়াও হয়। তবে ঈদের ছুটিতে পুলিশের পক্ষ থেকে রাজধানীতে সাত-আটটি চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা রেকর্ড হওয়ার কথা বলা হচ্ছে।

বলা বাহুল্য, মানুষ অন্যায়ের শিকার হয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ নিয়ে আসেন না নতুন করে হয়রানির ভয়ে। সংবাদ মাধ্যমের খবরে জানা যায়, রাজধানীতে প্রতিনিয়ত মানুষের মোবাইল, মানিব্যাগ ছিনতাই হচ্ছে। এসবের জন্য সাধারণ ডায়েরি করতে গেলে চুরি-ছিনতাইয়ের বদলে পুলিশ ‘হারানোর জিডি’ নেয়। এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকায় আইনশৃঙ্খলা ভালো ও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে দেখাতে চায় তারা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির যে চিত্র রাজধানীতে দেখা যাচ্ছে, সারা দেশও এর ব্যতিক্রম নয়। পুলিশ সব জায়গায় প্রায় একই আচরণ করে। বেশির ভাগ নাগরিক এগুলো নিয়তি হিসেবে মেনে নিয়েছেন। প্রতিকার পাওয়ার আশা তারা করেন না। রাজধানীতে একজন পুলিশ সদস্য হত্যা ও এক সাংবাদিক আহতের পর ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশ বিশেষ অভিযানে নেমেছে। এ ব্যাপারে স্থানীয় ওসিদের কড়া নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অভিযানের প্রথম ২৪ ঘণ্টায় ৩১ জন গ্রেফতার হয়েছেন। তাদের মধ্যে পুলিশ সদস্য হত্যা মামলার আসামিও রয়েছেন। আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক ধরনের প্রতিক্রিয়াশীল আচরণ করতে দেখি। অপরাধের ব্যাপারে সবসময় কঠোর না হয়ে বিশেষ ক্ষেত্রে কঠোরতা দেখায়। যেমন এবারের বিশেষ অভিযান চালানো। অপরাধের প্রতি ক্ষেত্রভেদে ভিন্ন আচরণ দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়েছে। সাথে যুক্ত হয়েছে বিচারব্যবস্থার নির্বাচিত গতি- ‘সরকার চাইলে বিচার হবে’ এমন নীতি।

নাগরিক হিসেবে সবার নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। সরকারকে এ নীতিতে বিশ্বাসী হতে হবে। দল-মত-ধর্ম নির্বিশেষে সবাই সমান মর্যাদাবান বিবেচিত হতে হবে। তাহলে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। তখন সব ধরনের অপরাধ কমতে পারে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More